শিরোনাম
রবিবার, ২৯ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্যাকেজ ভ্যাট বহালের দাবি ব্যবসায়ীদের

মানববন্ধন কাল, না মানলে আন্দোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী ১ জুলাই থেকে চালু হতে যাওয়া নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আইনে ‘বহুস্তর বা প্যাকেজ ভ্যাট’ বহাল রাখার দাবিতে আগামীকাল ৩০ মে সারা দেশে মানববন্ধন করবেন ব্যবসায়ীরা। একই সঙ্গে আইনে প্যাকেজ ভ্যাট পুনর্বহাল এবং ‘সরকার ও ব্যবসায়ীদের যৌথ সাত দফা সুপারিশ’ সরকার না মানলে নতুন আইন বাতিলে এক দফা আন্দোলনে নামার হুমকিও দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের দাবি, নতুন আইনে পণ্যমূল্য উসকে দেওয়ায় ভোক্তা অসন্তোষ বাড়বে। ফলে দেশের ১৬ কোটি মানুষই ভুক্তভোগী হবেন।

গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা  রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী মিলনায়তনে ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যে এসব কথা বলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও এফবিসিসিআই পরিচালক আবু মোতালেব। বক্তব্য দেন ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) উপদেষ্টা মনজুর আহমেদ ও ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের সভাপতি হাজি আবদুস সালাম। অন্যান্যের উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআই পরিচালক আমিন হেলালী, নিজাম উদ্দিন রাজেশ, শফিকুল ইসলাম ভরসা, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি এস এ কাদের কিরণ, ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির সভাপতি তৌফিক এহসান, পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী নেতা হাফেজ হাজি হারুন। সংবাদ সম্মেলনে এফবিসিসিআই উপদেষ্টা মনজুর আহমেদ বলেন, ‘প্যাকেজ ভ্যাট রাখতে হবে। সরকার রাজি হলে আমরা তিন ঘণ্টার মধ্যে এসআরও খসড়া তৈরি করে দেব। তবে আমরা শুনেছি— নতুন আইন বাস্তবায়নের সময় আরও এক বছর পিছিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর কাছ থেকে কোনো আশ্বাস পাচ্ছি না। যদিও শুনেছি, প্রধানমন্ত্রী অর্থমন্ত্রীকে বলেছেন, ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয় এমন কিছু বাজেটে করবেন না। প্রধানমন্ত্রীর এই আশ্বাসে আমরা আশাবাদী। ইতিমধ্যে আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়ে গোপন তথ্য প্রেরণ করেছি। এর পরও বলছি, শিক্ষা খাতে ভ্যাট আরোপের মতো এবারও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ভ্যাট নিয়ে কোনো ধরনের ছেলেখেলা চাই না।’ ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও এফবিসিসিআই পরিচালক আবু মোতালেব বলেন, ‘ভ্যাট নিয়ে এফবিসিসিআইর দাবি আমাদের দাবি। আমরা এফবিসিসিআইর বাইরে না। অর্থমন্ত্রীর নির্দেশে গঠিত এনবিআর-এফবিসিসিআই যৌথ কমিটির সাত দফা সুপারিশ বাস্তবায়ন করা হোক। নইলে আমরা নতুন ভ্যাট আইন বাতিলের এক দফা আন্দোলনে নামব। সারা দেশের ব্যবসায়ীরা এই আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত। এরই অংশ হিসেবে সোমবার বেলা ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত সারা দেশের দোকানপাট, শিল্প ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের সামনে দাঁড়িয়ে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে।’ প্রসঙ্গত, এনবিআর-এফবিসিসিআই যৌথ কমিটির সাত সুপারিশে বলা হয়েছে, সব সরবরাহের (উৎপাদন, ব্যবসা ও সেবা প্রদান) ক্ষেত্রে ৩৬ লাখ টাকা টার্নওভার পর্যন্ত অব্যাহতি প্রদান; এর ধারাবাহিকতায় বার্ষিক টার্নওভার ৩৬ লাখ থেকে দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত কেবল উৎপাদন পর্যায়ে ৩ শতাংশ পর্যন্ত টার্নওভার কর আরোপ করা হোক; টার্নওভার কর প্রদানকারী ক্রয় করা উপকরণের বিপরীতে মূসক নিবন্ধিত ব্যক্তি কর রেয়াত গ্রহণ করতে পারবেন; ব্যবসায়ী পর্যায়ে বার্ষিক ৩৬ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে টার্নওভারের পরিমাণ নির্বেশেষে ২ শতাংশ হারে মূসক আরোপ করা হোক; উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণে অসমর্থ প্রতিষ্ঠানের করযোগ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে হ্রাসকৃত হারে মূসক আরোপ করা হোক; তবে হ্রাসকৃত হারে মূসক প্রদানকারী ও টার্নওভার কর প্রদানকারী উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণ করতে পারবেন না; নতুন আইনের ধারা ২(৯৭) এর দফা (ক) সব আত্মীয়স্বজনকে করদাতার খেলাপি কর আদায়ের জন্য দায়ী করা যাবে না। এদিকে নতুন আইন নিয়ে ব্যবসায়ীরা সরকারকে সাফ জানিয়েছেন, ব্যবসায়ী পর্যায়ে যেসব প্রতিষ্ঠান বা দোকানে নির্ধারিত মূল্যের পণ্য বিক্রি হয় না, সেসব প্রতিষ্ঠানে মূল্যভিত্তিক ১৫ শতাংশ হারে মূসক আদায় করা অসম্ভব। ব্যবসায়ী পর্যায়ে যেসব প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত মূল্যে পণ্য বিক্রি করে, সেসব প্রতিষ্ঠানকে ২ শতাংশ হারে মূসক আরোপ ও ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার (ইসিআর) এবং পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) ব্যবহারে উৎসাহিত করা হোক। এর সঙ্গে ট্রেড লাইসেন্সধারী সব প্রতিষ্ঠানকে মূসক আইনে নিবন্ধিত করার জোর দাবি জানিয়েছে এফবিসিসিআই।

সর্বশেষ খবর