শনিবার, ২৫ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

ব্যর্থ আহ্বায়ক কমিটি নতুন ভাবনায় খালেদা

মাহমুদ আজহার

দুই বছর আগে ব্যর্থতার দায় নিয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা ঢাকা মহানগরের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের নেতৃত্বে ৫২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রায় দুই বছরেও দিতে পারেননি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। হয়নি অধিকাংশ থানা ও ওয়ার্ড কমিটিও। ব্যর্থতার তীর সমানভাবে তার ওপরও আসে। বিগত ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির ফলাফলশূন্য আন্দোলনের দায়ভারও মহানগরের ওপর। সেই অর্থে মহানগরে নেই কোনো সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড। এ নিয়ে হতাশায় ঢাকা মহানগরের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। জানা যায়, ঢাকায় মহানগরের দায়িত্ব নিতে আগ্রহী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু। এ ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসনেরও সবুজ সংকেত  আছে। তবে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ হলে এক ভাগের শীর্ষ দুই পদে মহানগর বিএনপির সাবেক নেতা আবদুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আবু সাঈদ খোকন, কাজী আবুল বাশার, সাবেক ছাত্রনেতা হাবিবুর রশীদ হাবিবের নাম শোনা যাচ্ছে। অন্যভাগে এম এ কাইয়ুম, আহসান উদ্দিন হাসান, মামুন হাসান বা তাবিথ আওয়ালকে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।  দীর্ঘদিন পলাতক থেকে জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস এখন প্রকাশ্যে। কিন্তু সদস্য সচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেলসহ আহ্বায়ক কমিটির বড় একটি অংশই এখনো আত্মগোপনে। এ অবস্থায় মহানগরকে নিয়ে নতুন চিন্তাভাবনা করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনি মহানগরের নেতৃত্বেও পরিবর্তন আনবেন। দলের পূর্ণাঙ্গ নির্বাহী কমিটি ঘোষণার পরপরই ঢাকা মহানগরে হাত দেবেন। এক ঢাকা, দুই ঢাকা না চার ঢাকা— তা এখনো স্পষ্ট নয় বলে জানা গেছে। তবে বেগম জিয়া এক ঢাকার পক্ষে বলে জানা গেছে। হাইপ্রোফাইলের কমিটিতে আ স ম হান্নান শাহ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আমানউল্লাহ আমান ও বরকতউল্লা বুলুর মতো সিনিয়র নেতারাও রয়েছেন। উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়েছে সাদেক হোসেন খোকাকেও। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া জেলে। গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে আত্মগোপনে বরকতউল্লা বুলু। যারা কারাগারের বাইরে রয়েছেন তারাও এখন নিষ্ক্রিয়। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরের নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও হাবিব উন নবী খান সোহেলকে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরের সাংগঠনিক কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ। সবাই তাকিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির দিকে। মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও চরম হতাশা বিরাজ করছে। মহানগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক নেতা বলেন, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি গঠন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়েই ছিল। কিন্তু ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে গঠিত সরকারের বছরপূর্তি উপলক্ষে তিন মাসের টানা আন্দোলনের কারণে শেষ পর্যায়ে এসে ওইসব কমিটি ঘোষণা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এরপর থেকে ঢাকা মহানগরের সাংগঠনিক সব কর্মকাণ্ড বন্ধ রয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস নিজে থেকেই মহানগরের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে আগ্রহী বলে তার ঘনিষ্ঠজনদের জানিয়েছেন। এ ছাড়া হাবিব উন নবী খান সোহেলেরও আর মহানগরের রাজনীতিতে আসার সুযোগ নেই। তাই মহানগরে নতুন নেতৃত্বের কথা ভাবছেন বিএনপি প্রধান। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে  কেন্দ্র করে সারা দেশে কম-বেশি আন্দোলন হলেও পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দেয় ঢাকা মহানগর বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পাশাপাশি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও খুশি নন ঢাকার বর্তমান নেতৃত্বের ওপর। কেন্দ্রীয় কমিটির পরপরই ঢাকা মহানগর পুনর্গঠন করা হবে বলে ঘনিষ্ঠজনদের জানিয়েছেন বিএনপি প্রধান। খালেদা জিয়া মহানগর কমিটি একভাগে চাইলেও দলের বড় একটি অংশই চাচ্ছেন  দুই ভাগে বিভক্ত কমিটি। সে ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের দিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। ৫ জানুয়ারিকে কেন্দ্র করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থতার অভিযোগে ভেঙে দেওয়া হয় ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি। সাদেক  হোসেন খোকাকে সরিয়ে মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও হাবিব উন নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই ৫২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত এক সিনিয়র নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র ঢাকার কমিটিকে ঢেলে সাজাতে হবে। ঢাকার নেতৃত্বের ওপরই নির্ভর করবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সফলতা-ব্যর্থতা। তাই বিএনপির হাইকমান্ডের উচিত, ওয়ার্ড থেকে শুরু করে মহানগরের কমিটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাই করা। ওয়ার্ড ও থানা নেতাদের নিয়ে চেয়ারপারসনের মতবিনিময় করা জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর