হনুমান, কিন্তু চোখের চারপাশ গোলাকার চশমার মতো। অন্য প্রজাতি থেকে খুব সহজেই আলাদা করা যায়। চোখের এমন গড়নের কারণেই এ হনুমানের নাম হয়েছে চশমা পরা হনুমান।
বন্যপ্রাণী বিভাগ জানিয়েছে, বাংলাদেশে মোট তিন প্রজাতির হনুমানের মধ্যে চশমা পরা হনুমান আকারে সবচেয়ে ছোট। এশিয়া মহাদেশের গুটিকয়েক দেশে এ প্রাণীর বিচরণ রয়েছে। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে এদের বাস। সাধারণত ঘন বনভূমিতে এরা বিচরণ করে। সূত্র জানায়, চশমা পরা হনুমান দেখতে গাঢ় বাদামি কিংবা কালচে রঙের হয়। পেটের দিক সাদাটে। এদের মাথা থেকে দেহের দৈর্ঘ্য প্রায় ৫৫ থেকে ৬৫ সেন্টিমিটার এবং ওজন প্রায় ৬ থেকে ৯ কেজি। দেহের তুলনায় লেজ বড়। লেজের দৈর্ঘ্য ৬৫ থেকে ৮০ সেন্টিমিটার হয়। এ হনুমান দিবাচর প্রাণী। খাদ্য গ্রহণ, বিশ্রাম, আনন্দ-উল্লাস এবং নিজের অধিকৃত জায়গা রক্ষার কাজে দিনের বেশির ভাগ সময় ব্যয় করে। সামাজিক প্রাণী হওয়ায় সব কার্যাবলি দলবদ্ধভাবেই সম্পন্ন করে। এদের এক এক দলে প্রায় ৩ থেকে ১৯ জন করে সদস্য থাকে। প্রতি দলে সন্তান-সন্তুতিসহ বিভিন্ন বয়সের হনুমান দেখা যায়। এরা বেশির ভাগ সময় মাঝারি উচ্চতার গাছে বিচরণ করে। তবে উঁচু গাছেও দেখা যায়। মাটিতে নামে না বললেই চলে। চশমা পরা হনুমান তৃণভোজী প্রাণী। ভোরে এবং পড়ন্ত বিকালে খাবারের সন্ধান করে। গাছের কচি পাতা এদের প্রিয় খাবার। ফল, ফুল, নরম কাণ্ডও খেয়ে থাকে। কখনো কখনো কীটপতঙ্গ খায়। এ জন্য প্রায়ই বাঁশবাগানে বিচরণ করে। খাদ্য গ্রহণের ফাঁকে গাছে গাছে ডালে ডালে লাফিয়ে বেড়ায়। একে অপরের সঙ্গে আনন্দ-উল্লাস করে। বাচ্চাকে আদর করে। মাঝে মাঝে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে মেতে ওঠে। ক্লান্ত হলে গাছের ওপর বসে বিশ্রাম নেয়। এ হনুমান বেশ লাজুক স্বভাবের প্রাণী। এ জন্য গাছের ডালে কিংবা পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত নামলে এরা মন্থর হয়ে পড়ে। রাতে দল বেঁধে বনের উঁচু গাছে আশ্রয় নেয় এবং সারা রাত গাছেই পার করে দেয়। সাধারণত জানুয়ারি থেকে এপ্রিলে চশমা পরা হনুমান প্রজনন সম্পন্ন করে। স্ত্রী হনুমান প্রজননক্ষম হয় ৩ থেকে ৪ বছর বয়সে এবং পুরুষ হনুমান প্রজননক্ষম হয় ৫ থেকে ৬ বছর বয়সে। এদের গর্ভধারণকাল ১৫০ থেকে ২০০ দিন। একটি স্ত্রী হনুমান দুই বছর পরপর একটি করে বাচ্চার জন্ম দেয়। সদ্য প্রসূত বাচ্চার রং স্বর্ণাভ বাদামি। জন্মের পর বাচ্চা হনুমান পুরোপুরি মায়ের ওপর নির্ভরশীল থাকে। পরাগায়ণ ও বীজের বিস্তারে এদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সূত্রমতে, খাদ্য, আবাসস্থলের অভাব এবং অবৈধ শিকারের কারণে চশমা পরা হনুমান বর্তমানে মহাবিপন্ন। গত ২০ বছরে আমাদের দেশে চশমা পরা হনুমানের সংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে। শুধু আমাদের দেশেই নয়, সমগ্র পৃথিবীতেই আজ এরা বিপন্ন। আমাদের বিরূপ কর্মকাণ্ড চলতে থাকলে হয় তো অল্প কিছুদিনের মধ্যেই প্রকৃতির বন্ধু চশমা পরা হনুমান বিলুপ্ত হয়ে যাবে। চশমা পরা হনুমান সংরক্ষণে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। আর সংরক্ষণের মাধ্যমে রক্ষা করতে হবে বনের প্রতিবেশ ব্যবস্থা।
আজ বৈঠক : প্রকৃতির বন্ধু চশমা পরা হনুমান রক্ষায় কাজ শুরু করেছে বন অধিদফতর। বন অধিদফতরের বন্যপ্রাণী বিভাগ এ হনুমান রক্ষায় প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এ নিয়ে আজ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী বিভাগে বৈঠক ডাকা হয়েছে।