বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
কূটনীতিকদের জানাল বিএনপি

জঙ্গিবিরোধী ঐক্যে সাড়া দিচ্ছে না সরকার

মাহমুদ আজহার

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে কয়েক দফা জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে কূটনীতিকদের কাছে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করল বিএনপি। গতকাল বিকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক বৈঠকে দলটির অবস্থান তুলে ধরা হয়। ঢাকায় কর্মরত ১৮টি দেশের প্রতিনিধিরা বৈঠকে অংশ নেন।

বিএনপির পক্ষ থেকে কূটনীতিকদের কাছে অভিযোগ করা হয়, জঙ্গিবাদবিরোধী ঐক্য করতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু সরকার সাড়া না দিয়ে পাল্টা ব্লেমগেম করছে। বিএনপি জোটের শরিক জামায়াতকে দোষারোপ করছে সরকার। কিন্তু তারা এর কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দাঁড় করাতে পারেনি। বরং সরকারি দলের কোনো কোনো নেতার ছেলের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বৈঠকে কূটনীতিকরাও চলমান পরিস্থিতিতে গণতন্ত্রকে আরও সুসংহত করতে দেশের সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অনুরোধ জানান। একই সঙ্গে বাংলাদেশে সব নাগরিকের নিরাপত্তা জোরদারের কথাও জানান তারা।

বৈঠকে সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কূটনীতিকদের কাছে ব্রিফিং করেন। বিকাল ৪টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলা, শোলাকিয়ার কাছে জঙ্গি হামলার ঘটনার পাশাপাশি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মুদ্রা পাচার মামলায় নিম্ন আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে সাজা প্রদানের বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, চলমান জঙ্গি ইস্যুতে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে ব্লেমগেম করছে সরকার। এ বিষয়টি কূটনীতিকদের কাছে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের কাছে শুধু এটুকুই বলেন, ‘এটা নিয়মিত মিটিং।’ একই কথা জানিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘বিএনপি দেশের বড় রাজনৈতিক দল। বিপুলসংখ্যক মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে। বিএনপি কূটনীতিকদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কথা বলে। এটিও তেমনই একটি নিয়মিত বৈঠক। নাথিং স্পেশাল।’ বৈঠকে স্পেন, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, নরওয়ে, নেপাল ও জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশের ১৮ জন কূটনীতিক ও প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির পক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, গিয়াস কাদের চৌধুরী, ড. আসাদুজ্জামান রিপন ও ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা উপস্থিত ছিলেন। পৌর নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অনিয়মের বিষয়াবলি জানাতে ২০ জানুয়ারি সর্বশেষ কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়েছিল বিএনপি। বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির মধ্যম সারির এক নেতা জানান, কূটনীতিকদের কাছে মুদ্রা পাচার মামলায় হাইকোর্টের রায়ে তারেক রহমানকে ‘সাজা’ দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। তাদের ‘ইনডেক্স অব ডকুমেন্টস’ শিরোনামে (হাইকোর্টের রায় ও নিম্ন আদালতের রায়ের কপি) বই সরবরাহ করা হয়। স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘তারেক রহমান সরকারের প্রতিহিংসার শিকার। তাকে অন্যায়ভাবে উচ্চ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়েছে। আমরা আইনগত দিকটি ব্যাখ্যা করেছি কূটনীতিকদের কাছে। তারাও বিষয়টি বুঝতে পারছেন বলে মনে হয়েছে।’ আরেক নেতা বলেন, ‘জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিএনপির অবস্থান বৈঠকে তুলে ধরা হয়েছে। কূটনীতিকদের কাছে জঙ্গিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যের বিষয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা ব্যাখ্যা করা হয়। জাতীয় ঐক্য কেন প্রয়োজন এবং জঙ্গি যে কেবল প্রশাসন দিয়ে সমাধান সম্ভব নয়, তা আমরা তুলে ধরেছি। কূটনীতিকরা কেউ কেউ জাতীয় ঐক্যের ধারণাটি বিস্তারিতভাবে জানতে প্রশ্ন করেছেন। আমরা জবাব দিয়েছি। তবে কূটনীতিকরা সব দলকেই এ ইস্যুতে ঐক্যের পক্ষে মত দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা কূটনীতিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছি, সরকার জঙ্গি ইস্যু নিয়ে ব্লেমগেম করছে। সরকার এখন পর্যন্ত তদন্ত করে বিশ্বাসযোগ্য কোনো তথ্য প্রকাশ করতে পারেনি। তারা শুধু জামায়াতসহ বিরোধী দলকে এ জন্য দায়ী করছে। কিন্তু তারা (সরকার) তাদের বক্তব্যের সপক্ষে কোনো প্রমাণই এখন পর্যন্ত উপস্থাপন করতে পারেনি। গুলশানের ঘটনার পর দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতার এক সন্তান এর সঙ্গে জড়িত। জঙ্গি দমনে সরকারের কর্মকাণ্ডে দেশের মানুষের মনে নানা প্রশ্ন ও সন্দেহ রয়েছে।’ বিএনপি চেয়ারপারসনের এক উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা কূটনীতিকদের বলেছি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে হলে দেশে ঐক্য ও গণতন্ত্র থাকতে হবে। শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়ে এসব দমন করা সম্ভব নয়। এসব বিষয় অনুধাবন করেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। কিন্তু সরকার তাতে কোনো সাড়া দেয়নি।’ ১ জুলাই গুলশান ক্যাফেতে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যার পর জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় জাতীয় ঐকমত্য গড়ার উদ্যোগ নিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছিল বিএনপি। তবে বিএনপির জামায়াত-সংশ্লিষ্টতার দিকটি তুলে ধরে তাদের নিয়ে ঐক্য গড়ার প্রস্তাব নাকচ করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। এরপর বিএনপি জোটসঙ্গী জামায়াতকে বাদ রেখে জঙ্গিবাদবিরোধী ‘বৃহত্তর প্লাটফর্ম’ গড়ার উদ্যোগ নিয়ে এগোচ্ছে বলে দলটির নেতাদের কাছ থেকে জানা গেছে। ওই প্রক্রিয়া শুরুর আগেই কূটনীতিকদের সঙ্গে বসল তারা।

সর্বশেষ খবর