বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

জঙ্গি উৎসাহদাতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করবে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কল্যাণপুরের ঘটনায় বিএনপির বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপির শর্তে সাধারণ মানুষের কাছে মনে হবে তারাই সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের মদদদাতা। তিনি বলেন, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপির যেসব বক্তব্য আসছে, তাতে খুব স্বাভাবিকভাবেই মনে হয় তারা (বিএনপি) শর্ত দিচ্ছেন, এটা করেন, তা না হলে সন্ত্রাস বন্ধ হবে না, জঙ্গিবাদ বন্ধ হবে না। এতে সাধারণ মানুষের কাছে মনে হবে তারাই (বিএনপি) সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের মদদদাতা। তাদের কথা-বার্তায় এটাই প্রতীয়মান হয়, শুধু তাদের (বিএনপি) শর্তটা মানলেই জঙ্গিবাদ বন্ধ হয়ে যাবে।

গতকাল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য ডা. দীপু মনির এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং এটা সরকারের নীতিগত ব্যাপার। ১ জুলাই গুলশানের ঘটনা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। তবে আমাদের দেশেই নয়, বিশ্বব্যাপী এটা ঘটে যাচ্ছে। সবচেয়ে দুঃখজনক হলো ইসলামের নাম নিয়ে তারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে। শান্তির ধর্ম ইসলাম নিয়ে এ ধরনের জঘন্য হত্যাকাণ্ড চালানোর কারণে পবিত্র ইসলামকেই হেয় করা হচ্ছে। ইসলাম ধর্মকে সারা বিশ্বের কাছে একটি সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হিসেবে পরিচিত করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে এবং ইসলাম ধর্মের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিরা গুলশান ও শোলাকিয়ার মতো আরও একটি বড় ধরনের ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা করছিল। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সাহসিকতার সঙ্গে এদের সেই পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেয়। আরও একটি বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে দেশবাসী রক্ষা পেয়েছে। তিনি বলেন, এদের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপির যেসব বক্তব্য আসছে, তাদের পক্ষ থেকে শর্ত দেওয়া হচ্ছে— এটা না করলে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ বন্ধ হবে না। এতে মনে হয় এরাই যেন সন্ত্রাসের মদদদাতা, এ ব্যাপারে তাদের উৎসাহ রয়েছে, শুধু তাদের কথা মানলেই সন্ত্রাস বন্ধ হয়ে যাবে। এদের কথাবার্তা এটাই প্রতীয়মান হয়। শেখ হাসিনা বলেন, শুধু দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়েই এ অবস্থার মোকাবিলা করা সম্ভব এবং সেই ঐক্য সারা দেশে সৃষ্টি হয়েছে। দেশের প্রতিটি স্তরের মানুষ এখন সচেতন। পিতা, মাতা, অভিভাবক, শিক্ষক এরা সবাই এখন সচেতন। এদের সন্তান যাতে এভাবে বিপথে না যায়।

সমাপনী বক্তৃতা : কল্যাণপুরে জঙ্গি নিহত হওয়ার ঘটনায় বিএনপি নেতাদের দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে সমাপনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এদের (বিএনপি নেতাদের) সঙ্গে জঙ্গিদের কোনো গোপন সূত্র আছে কি না, কোনো ষড়যন্ত্রে এরা লিপ্ত কি না- সেটাই দেখতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপি নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ও ব্রি. জে. (অব.) হান্নান শাহ দুজনেরই বক্তব্য- নিহতরা জঙ্গি কি না? তারা সন্দেহ করেন। গুলশানের ঘটনার সঙ্গে তারা কল্যাণপুরের ঘটনার তুলনা করেছেন। কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ এই দুই ঘটনা তুলনা করতে পারেন না। এক জায়গায় জঙ্গি ঢুকে মানুষ হত্যা করেছে এবং ২২ জনকে হত্যা করেছে, সেখানে জঙ্গিদের হাত থেকে মানুষদের উদ্ধার করা এবং জঙ্গিদের হত্যা করার অপারেশনটা ভিন্ন ছিল। আমাদের জঙ্গি দমনে ভিন্ন পথ নিতে হয়েছে। আর এখানে (কল্যাণপুর) জঙ্গিদের একটা আস্তানা পাওয়া গেছে। তারা কিন্তু বুঝে গেছে পুলিশ ঘেরাও করে ফেলেছে এবং তারা পুলিশকে গুলিও করেছে। একজন পুলিশ আহত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমার প্রশ্ন- বিএনপি নেতাদের এই আহাজারিটা কেন? এই জঙ্গিদের জন্য এত তাদের দরদটা কিসের? তাদের মনে এই সন্দেহ কেন- এরা জঙ্গি কি না? তাদের (বিএনপি নেতাদের) কোথায় ঘা লাগল? কোথায় ব্যথা পেলেন তারা? তাদের উদ্দেশ্যটা কি? এই জঙ্গিদের সঙ্গে তাদের যোগসূত্রতা কোথায়? এই প্রশ্নটা আমি জাতির কাছে রেখে গেলাম- তারাই এটা খুঁজে দেখবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গি দমনে যখন চেষ্টা করছি সেখানে তারা (বিএনপি) যদি এই ধরনের প্রশ্ন তোলেন, পুলিশের কার্যক্রমকে যদি জনগণের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান, এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হয় না।

কর্মসংস্থান ও সমৃদ্ধি নিশ্চিতের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে সরকারের পরিকল্পিত ১০০টি অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা করে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য ‘বেজা’ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। খবর বাসস’র। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল তার তেজগাঁও কার্যালয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) গভর্নিং বডির সভায় সভাপতিত্বকালে এ আহ্বান জানান। বৈঠকে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর মধ্য দিয়ে দেশের শিল্প উন্নয়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বৈঠকে তার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে অগ্রগতির তথ্য সভায় উপস্থাপন করেন। অন্যদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির উপস্থিত ছিলেন।

সর্বশেষ খবর