শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

গাজীপুরে হত্যা মামলায় স্বামী, স্ত্রী ও ছেলের ফাঁসি

গাজীপুর প্রতিনিধি

গাজীপুরে এক গৃহবধূকে হত্যা করে স্বর্ণালঙ্কার চুরির দায়ে স্বামী-স্ত্রী ও ছেলেসহ একই পরিবারের তিনজনকে গতকাল মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া একই দিন অন্য দুটি আদালত পৃথক দুই হত্যার ঘটনায় এক নারীসহ চারজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছে। গাজীপুর আদালতের অতিরিক্ত পিপি মো. আতাউর রহমান খান জানান, ২০০৮ সালের ১৪ মে বিকালে বাড়ির পাশে হাঁটাহাঁটি করছিলেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের দক্ষিণ খাইলকৈর এলাকার মো. জমির হোসেন পাইকের স্ত্রী মোসাম্মৎ সাফিয়া বেগম (৬৫)। এ সময় পার্শ্ববর্তী বাড়ির ভাড়াটিয়া সিদ্দিক ভান্ডারী তাকে ডেকে বাড়িতে নিয়ে যান। পরে সিদ্দিক তার স্ত্রী ও ছেলের সহযোগিতায় সাফিয়া বেগমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন এবং গলা, কান ও নাক থেকে স্বর্ণালঙ্কার খুলে নেন। নিহতের লাশ গভীর রাতে বাড়ির পাশে ফেলে রাখেন হত্যাকারীরা। পরদিন ভোরে স্থানীয়রা লাশ দেখে পুলিশকে খবর দেন। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী মো. জমির হোসেন পাইক বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্ত শেষে হত্যায় জড়িত থাকায় নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ থানার ভবনাথপুর গ্রামের মৃত মুনসুর আলীর ছেলে সিদ্দিক ভান্ডারী, তার স্ত্রী আয়েশা খাতুন ও ছেলে তারেক ওরফে মুরাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জয়দেবপুর থানার এসআই সুজায়েত হোসেন আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। শুনানি শেষে গতকাল গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মো. ফজলে এলাহী ভূঁইয়া এ মামলার রায় দেন। রায়ে ওই তিনজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয় আদালত। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং চুরির ধারায় তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা পলাতক ছিলেন। এদিকে গাজীপুর আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মো. হারিছউদ্দিন আহম্মদ জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের তেলীপাড়া এলাকার মনির হোসেনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন সোহরাব-রিপা দম্পতি। গত বছর ৪ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৯টার দিকে রিপা স্টার জলসা চ্যানেল দেখছিলেন। রাতে বাসায় ফিরে স্বামী সোহরাব তার স্ত্রী রিপাকে স্টার জলসা দেখতে বারণ করেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। একপর্যায়ে রিপা তার স্বামী সোহরাবকে ছুরিকাঘাত করেন। পরে স্বজনরা সোহরাবকে উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহতের বাবা শাহজাহান বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় মামলা করেন। এসআই আল মামুন তদন্ত শেষে নিহত সোহরাব হোসেন স্ত্রী নাহিদা আকন্দ ওরফে রিপার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। রিপা নরসিংদীর মনোহরদী থানার পশ্চিম চালাকচর গ্রামের মতিউল ইসলাম ওরফে বাবু মেম্বারের মেয়ে। শুনানি শেষে গতকাল গাজীপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক এ কে এম এনামুল হক আসামির উপস্থিতিতে মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে রিপাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অন্যদিকে গাজীপুর আদালতের অতিরিক্ত পিপি শরীফ মো. ফজলে রাব্বি জানান, ২০০৮ সালের ১৪ জুন কাপাসিয়া থানার জালিশা গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী রিয়াজ উদ্দিন পলানকে (৩০) আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ বাড়ির পাশে পুকুরে ফেলে রাখেন। পরদিন সকালে স্থানীয়রা নিহতের লাশ পুকুরের পানিতে ভাসতে দেখতে পান। খবর পেয়ে কাপাসিয়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতের লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী হেলেনা বেগম বাদী হয়ে লোকমানসহ অজ্ঞাত ছয়-সাতজনকে আসামি করে কাপাসিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এসআই মো. আবুল কাশেম তদন্ত শেষে কাপাসিয়া থানার জালিশা গ্রামের মৃত আলমাছ আলী মোড়লের ছেলে লোকমান হোসেন শাহীন ওরফে বাঘা লোকমান (৩৮), একই গ্রামের ফজলুল হক পলানের ছেলে মোস্তফা (৩২) ও কালীগঞ্জ থানার চর শৈলাদী গ্রামের মৃত তফিজ উদ্দিন ওরফে অফিজ উদ্দিন আকন্দের ছেলে মো. মুনসুরের (২৮) বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৪ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। শুনানি শেষে গতকাল গাজীপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মো. ইকবাল হোসেন মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ওই তিনজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেক আসামিকে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে প্রত্যেককে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায় ঘোষণাকালে লোকমান হোসেন শাহীন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তবে অন্য আসামিরা ছিলেন পলাতক।

সর্বশেষ খবর