শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

নারায়ণগঞ্জের শিল্প-প্রতিষ্ঠানে আইন লঙ্ঘনের প্রতিযোগিতা

তোয়াক্কা নেই মামলার পর মামলা

রোমান চৌধুরী সুমন, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠান মামলাকে তোয়াক্কা না করে আইন লঙ্ঘনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলার পর মামলা ঝুলছে। তারপরও এগুলো বহাল তবিয়তে শুধু চলছেই না, নতুন করে আইন ভেঙে চলেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইন লঙ্ঘনের দায়ে গত এক বছরে গার্মেন্ট, স্পিনিং, হোসিয়ারি, নীট, রি-রোলিংসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৩০৬টি মামলা দায়ের করেছে জেলা কল ও কারখানা পরিদর্শন পরিদফতর। অভিযোগে জানা গেছে, বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের নেই কল-কারখানা অধিদফতরের লাইসেন্স। নারী কর্মচারীদের দেওয়া হয় না  মাতৃত্বকালীন ছুটি ও প্রসূতি ভাতা। এমনকি কল ও কারখানা অধিদফতরের পরিদর্শকদের পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করতে বাধা দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা কল ও কারখানা অধিদফতরের পর্যবেক্ষণে রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার শিল্প-প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে স্পিনিং, গার্মেন্ট, হোসিয়ারি, নীট কারখানা থেকে শুরু করে ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সূত্র জানায়, জেলার আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ ও ফতুল্লায় থাকা ১২টি স্পিনিং মিলের বিরুদ্ধে রয়েছে ১২টি মামলা। এর মধ্যে সিনহা স্পিনিং মিলের কর্মচারী হোসনে আরা হাসু তার মাতৃত্বকালীন ছুটি ও প্রসূতি ভাতা দাবি করে না পেয়ে ওই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলা করেন। আড়াইহাজারে নওয়াব আলী টেক্সটাইল স্পিনিং মিলে কল ও কারখানা অধিদফতরের লোকজন পরিদর্শনে গেলে কর্তৃপক্ষ তাদের ভেতরেই প্রবেশ করতে দেয়নি। এতে অধিদফতর শ্রম আদালতে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ এনে মামলা করে। রূপগঞ্জের জোবেদা টেক্সটাইল ও এখলাছ স্পিনিংয়ের বিরুদ্ধে চলতি বছর শিশুশ্রমের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ ছাড়া বাকি আটটি স্পিনিংয়ের বিরুদ্ধে রয়েছে শিশুশ্রমসহ উৎপাদন লাইসেন্স না নেওয়ার অভিযোগ।

সূত্র আরও জানায়, হোসিয়ারি শিল্পগুলো শ্রম আইনকে তোয়াক্কাই করছে না। শহরের নয়ামাটি এলাকায় গড়ে ওঠা চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার হোসিয়ারি কারখানায় কাজ করানো হচ্ছে শিশু শ্রমিকদের। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্রটি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। এ ধরনের নানা অনিয়মের অভিযোগে চলতি বছর শ্রম আদালতে কারখানা অধিদফতর ১০টি হোসিয়ারির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে। এ ছাড়া জেলার গার্মেন্ট, নীট, রি-রোলিং ও টেক্সাটাইল মিলের বিরুদ্ধে রয়েছে ২৮২টি মামলা। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শিশু শ্রমিক নিয়োগ, সার্ভিস বুক না রাখা, শ্রম আইন পরিপন্থী ওভারটাইম করানো, রেজিস্টার না রাখা, শ্রমিকদের পরিচয়পত্র না দেওয়ার মতো অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ অনুযায়ী এতসব মামলা থাকা সত্ত্বেও মামলাভুক্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো একই অপরাধ করেই যাচ্ছে। তারা কোনোভাবেই সংশোধন হচ্ছে না। এসব বিষয়ে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠানসমূহের নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ের উপ-মহাপরিদর্শক শেখ আসাদুজ্জামান বলেন, এক বছরে জেলার শিল্প কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে ৩০৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। নিষ্পত্তি হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে আদালত ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। বাকি মামলাগুলো চলমান রয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, শ্রম আইনের ৩২৫ ধারা অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠানের পাঁচজন শ্রমিকের শ্রমে কোনো কিছু উৎপাদনে গেলে ১৫ দিন আগে কল-কারখানা অধিদফতরে লাইসেন্স নিতে হবে। কিন্তু অনেকেই তা করছেন না। তিনি নিজেদের সমস্যা সম্পর্কে বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের লোকবলের অভাব রয়েছে। ৬৯ জন থাকার কথা থাকলেও কাজ করছে মাঠপর্যায়ে ২০ জন। অথচ শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জে হাজার হাজার শিল্প-প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তাই বিধি মোতাবেক লোকবল দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে আবেদন করতে বাধ্য হয়েছি।’

সর্বশেষ খবর