শনিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

বরেন্দ্র অঞ্চলে ড্রাগন ফল

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

বরেন্দ্র অঞ্চলে ড্রাগন ফল

ড্রাগন ফলটি এখনো সব মহলে তেমন পরিচিত হয়ে ওঠেনি। তবে বাণিজ্যিক দিক বিবেচনায় এর গুরুত্ব অনেক। বলা যায়, এককালীন বিনিয়োগ করে দুই যুগ ধরে আয়ের উৎস গড়া যায় এই ড্রাগনের বাগান থেকে। মাত্র এক বিঘা জমি থেকেই প্রতি বছর কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। বরেন্দ্র অঞ্চলে এর উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে।

যে দু-একটি জায়গায় এর চাষ হয়, সেখানকার বেশির ভাগ মানুষও জানেন না এর গুরুত্ব। তারা ড্রাগনের গাছকে ‘ওষুধের’ গাছ হিসেবেই চেনেন। অথচ বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে ড্রাগন চাষ ছড়িয়ে দিতে পারলে তারা ব্যাপকভাবে লাভবান হবেন। আর এ লক্ষ্যে কাজ করছেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (উদ্যান) মঞ্জুরুল হক। ২১ কাঠা জমিতে মেক্সিকান ফল ‘ড্রাগন’ চাষ করে চমকে দিয়েছেন সবাইকে। তিনি নিজে চারা লাগিয়েছেন, পরিচর্যা করেছেন। এখন তার বাগান থেকে নিয়মিত ড্রাগন উঠছে। আর চোখ কপালে উঠছে শৌখিন চাষিদের। অনেকেই এখন তার কাছ থেকে ড্রাগনের চারা সংগ্রহ করছেন। ফলে ড্রাগন ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। এভাবে মঞ্জুরুল হকের সে স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে, যে স্বপ্ন তিনি দেখেছিলেন ২০১২ সালে। তার বাগানটিও ওই বছর গড়ে তোলা হয়। মঞ্জুরুল হক জানান, ২০১২ সালে তিনি নাটোরের সিংড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেখানে এক কৃষক প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ শুরু করেন। তার বাগান পরিদর্শন করতে গিয়ে তিনি দেখেন, ক্যাকটাস প্রজাতির গাছ হওয়ায় এর জন্য বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটি খুবই উপযোগী। তখন তিনি রাজশাহীর কৃষি কর্মকর্তাদের অনুরোধ করেন, এ অঞ্চলে ড্রাগন চাষের জন্য। কিন্তু তাতে খুব বেশি সাড়া না পাওয়ায় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে তিনি নিজেই একটি বাগান করার পরিকল্পনা করেন। ওই বছরের জুনে নাটোর থেকে ৬০০ চারাগাছ সংগ্রহ করে পবার মতিয়াবিলে তিনি বাগান তৈরির কাজ শুরু করেন। তিনি জানান, প্রথম বছর ২১ কাঠা জমিতে বাগান গড়ে তুলতে তার প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়। এর পরের বছরের জুলাইয়ে বাগান থেকে ফল উঠতে শুরু করে। ওই বছর তার বাগান থেকে ৬০ কেজি ফল পাওয়া যায়। কিন্তু ওই সময় রাজশাহী অঞ্চলে ড্রাগনের কোনো পরিচিতিই ছিল না। বাজারে বিক্রির জন্য তিনি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ওই বছর কোনো ব্যবসায়ীই এই ফল কিনতে রাজি হননি। তাই প্রথম বছরের ৬০ কেজি ফল সবাইকে বিনামূল্যে দিয়েই পরিচিত করে তুলতে হয়। এর পরের বছর অবশ্য তাকে আর ফল বিক্রি নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়নি। ২০১৪ সালের মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তার জমি থেকে আট মণ ফল ওঠে। এসব ফল তিনি প্রতি কেজি ২৫০ টাকা দরে বিক্রি করেন। এর পরের বছর ৭০ মণ ফল বিক্রির আশা করেছিলেন তিনি। তবে ওই বছর জলাবদ্ধতার কারণে তার বাগানের ফল কমে গিয়ে ২৫ মণে দাঁড়ায়। এবারও এসব ফল তিনি প্রতি কেজি ২৫০ টাকা দরে আড়াই লাখ টাকা বিক্রি করেন। চলতি মৌসুমে সব মিলিয়ে চার লাখ টাকার ফল বিক্রির আশা করছেন তিনি। আগামী বছর টার্গেট আট লাখ টাকার ফল বিক্রির। তিনি আরও জানান, ড্রাগনে তার এই সাফল্য দেখে অনেকেই এখন এটি চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এরই মধ্যে রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, ঢাকা, নওগাঁ ও নাটোরসহ বিভিন্ন এলাকার শৌখিন চাষিরা তার কাছ থেকে ড্রাগনের চারা নিয়ে যাচ্ছেন। বাগান করার পর এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০ জন চাষির কাছে তিনি দুই লাখ টাকার চারা বিক্রি করেছেন। এভাবে ড্রাগনের সম্প্রসারণ শুরু হওয়ায় তার স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী বলেন, ড্রাগন খুবই লাভজনক একটি ফল। বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটি এর জন্য খুবই উপযোগী। এ অঞ্চলে ড্রাগন চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এর সম্প্রসারণে কৃষি কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হক যা করছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। নিজে চাষাবাদে নেমে তিনি কৃষকদের বুঝিয়ে দিয়েছেন, এর গুরুত্ব কত।

সর্বশেষ খবর