জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের স্কুল কমিটির সাধারণ সম্পাদক থেকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হয়েছি। রাজনীতিতে কোনো বিরতি নেই। টানা ৩৪ বছর বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত। দুই দফা আন্দোলন সংগ্রামে ১৫টি মামলার আসামি হয়েছি। কিন্তু তার যথার্থ মূল্যায়ন হয়নি। অথচ ১৫ বছরে বিএনপির কোনো মিটিং-মিছিল, কিংবা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ না করেও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হয়েছেন বরিশাল কোতোয়ালি থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আজিজুল হক আক্কাস। মাত্র ৭ বছর আগে বিএনপির রাজনীতিতে এসেছেন সান্টু (এস সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু)। আন্দোলন-সংগ্রামে কোথাও ছিলেন না তিনি। তারপরও তাকে নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়েছে। দলের প্রতি ত্যাগ-আনুগত্য এসব কিছুরই মূল্যায়ন হয়নি সদ্য ঘোষিত বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে। এভাবেই ক্ষোভ ও আক্ষেপ প্রকাশ করেন বরিশাল জেলা (দক্ষিণ) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবুল কালাম শাহীন। শনিবার ঘোষিত বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির কোথাও স্থান হয়নি তার। কমিটি পুনর্মূল্যায়নের কোনো আবেদন করবেন কিনা জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট শাহীন বলেন, ‘দলের প্রতি ত্যাগ-ই আমার আবেদন।’ গৌরনদী বিএনপির একাধিক নেতা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, বিগত আন্দোলনের সময় একদিনের জন্যও মাঠে নামেননি ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহান। ওই সময় মুঠোফোন পর্যন্ত বন্ধ রেখেছিলেন তিনি। এমনকি বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ার সোবহানের বাসায় এবং তার ব্যবসায়িক কার্যালয়ে লোক পাঠানো হলেও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পুরো আন্দোলনের সময় মালয়েশিয়ায় নির্বিঘ্নে জীবন-যাপন করেছেন। তারপরও তাকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়েছে। অথচ যারা দুই দফা আন্দোলন-সংগ্রামে মামলা-হামলায় জর্জরিত হয়েছেন, কারাভোগ করেছেন, সেসব নেতাকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে মূল্যায়ন না করায় ক্ষোভ লুকিয়ে রাখতে পারেননি তা জানালেন আরেক ত্যাগী তৃণমূল নেতা। কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে নিজে পদ-পদবি না পাওয়ার আক্ষেপ লুকিয়ে বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়েদুল হক চাঁন বলেন, জিয়াউর রহমানের সময় বরিশালের আবদুল বাসেত বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে ছিলেন। এরপর আজ পর্যন্ত দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে বৃহত্তর বরিশালের কাউকে স্থান দেওয়া হয়নি— এটাই আক্ষেপের। বাংলাদেশ প্রতিদিনের মাধ্যমে তিনি দলের চেয়ারপারসনের কাছে এ বিষয়টি পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করেন। বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে স্থান পাওয়ার মতো বরিশাল বিভাগে অনেক যোগ্য নেতা রয়েছেন। তারা নতুন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ পাওয়ার জোর দাবিদার। আশা করি দলের চেয়ারপারসন বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবেন। নতুন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহসভাপতি মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রম বলেন, প্রত্যাশিত পদ-পদবি না পেয়ে অনেকে পদত্যাগ করবেন বলে লোকমুখে শোনা যায়। কিন্তু তিনি নিজে কখনো এসব করবেন না। তিনি বলেন, ‘গত ১৮ বছর ধরে বিএনপির সহসভাপতি পদে আছি। রাজনীতি করলে বিএনপিই করব। বাদবাকি ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) ইচ্ছা।’ বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখা নেতাদের মূল্যায়নের কথা থাকলেও ওই সময়ে গা বাঁচিয়ে চলা অনেক নেতাও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। আবার ত্যাগী অনেক নেতাকে নতুন কমিটিতে মূল্যায়ন না করার বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, রাজনীতি শুধু আন্দোলনের জন্য নয়। একটি দলকে রাজনীতি, আন্দোলন, নির্বাচন এবং সরকার গঠনসহ বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে কমিটি করতে হয়। এখানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। কেউ আন্দোলনের মাঠে না থাকলে তাকে দলে রাখা যাবে না বিষয়টি ঠিক নয়। দলীয় হাই কমান্ড হয়তো তাদের নিয়ে অন্যভাবে চিন্তাভাবনা করছে।