রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

কোথায় যায় ডাম্পিং স্টেশনের যানবাহন

মোস্তফা কাজল

কোথায় যায় ডাম্পিং স্টেশনের যানবাহন

কয়েক হাজার টাকা হাতে গুঁজে দিলেই মিলে যায় দামি দামি গাড়ির খুচরা যন্ত্রাংশ। এক থেকে দেড় হাজার টাকায় পাওয়া যায় টায়ার। ২০০ টাকায় মেলে ব্রেক শু। আড়াই হাজার টাকায় গাড়ির সাউন্ড সিস্টেম। এমন তথ্য পাওয়া গেছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ডাম্পিং স্টেশনের জব্দ করা যানবাহনের এলাকায়। মেগাসিটি ঢাকার বিভিন্ন সড়কে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের কারণে প্রতিদিন কিছু যানবাহন বাজেয়াপ্ত করা হয়। এরপর সেগুলো নিয়ে যাওয়া হয় ডাম্পিং স্টেশনে। পুলিশ বলছে, দিনে গড়ে ২০ থেকে ৩০টি গাড়ি আসে ডাম্পিং স্টেশনে। বিপুলসংখ্যক মোটরসাইকেল রয়েছে এই ডাম্পিং স্টেশনে। এসব যানবাহনের অনেকগুলোই নম্বরবিহীন।

 বিশেষ অভিযানের সময় ডাম্পিং স্টেশনে গাড়ি আসার সংখ্যাও বেড়ে যায়। আগারগাঁওয়ে অপর ডাম্পিং স্টেশনটি রাস্তার ওপরই। দুই লেনবিশিষ্ট রাস্তার একটি পাশের পুরোটা জুড়ে রয়েছে এই ডাম্পিং স্টেশন। মামলার আলামতের পাশাপাশি বেওয়ারিশ গাড়িরও জায়গা হয় এখানে। দুর্ঘটনা কবলিত বিভিন্ন গাড়ি রয়েছে এসব স্টেশনে। দীর্ঘসময় পড়ে থাকায় একদিকে যেমন গাড়ি নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে রাস্তার ওপর গাড়ি রাখায় ব্যাহত হচ্ছে যান চলাচল। গতকাল একই স্থানে গিয়ে জানা যায়, সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে ডাম্পিং স্টেশনে চুরি করা যন্ত্রাংশের হাট বসে। শরিফ, কামাল ও খোরশেদের নেতৃত্বে রয়েছে তিনটি গ্রুপ। তারা ডাম্পিং স্টেশনে আসা যানবাহনের যন্ত্রাংশ খুলে বিক্রির সঙ্গে জড়িত। সবকিছু পুলিশের নাকের ডগায় হয়। ঢাকায় মহানগর ট্রাফিক বিভাগের কোনো স্থায়ী ডাম্পিং স্টেশন নেই। তবে প্রায় সব সময়ই গড়ে প্রায় হাজারখানেক গাড়ি থাকে এই ডাম্পিং স্টেশনে। এখানে বিভিন্ন মামলার আলামতের গাড়িও পড়ে থাকে বছরের পর বছর। আগারগাঁওয়ের মূল ডাম্পিং স্টেশনটি একটি সরকারি জায়গার ওপর। এখানকার কিছু গাড়ি ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের কারণে সাময়িক সময়ের জন্য রাখা হলেও অনেক গাড়ি রয়েছে বছরের পর বছর। এভাবে বছরের পর বছর পড়ে থেকে অনেক গাড়ির গা বেয়ে উঠেছে লতাগুল্ম। ঘন লতাগুল্মের কারণে কিছুদূর যাওয়ার পর এগোনোই কঠিন। রিকশা থেকে শুরু করে বড় ট্রাক, সব ধরনের যানবাহনই রয়েছে ডাম্পিং স্টেশনে। ট্রাফিক আইনে আটক অধিকাংশ মালিক বা চালক এসে গাড়ি নিয়ে গেলেও থেকে যায় বিভিন্ন থানা থেকে আসা বিভিন্ন মামলার আলামত। কোনো কোনো গাড়ি এক দশকেরও বেশি সময় ধরে পড়ে আছে ডাম্পিং স্টেশনে। ঢাকা পড়েছে পাতার নিচে। দুই দিন ধরে সরজমিন ঘুরে পাওয়া গেছে এমন চিত্র। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ডাম্পিং স্টেশনের পাশে কথা হয় আমিনুল ইসলাম নামের এক গাড়ির মালিকের সঙ্গে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ব্যবসায়িক কারণে কুমিল্লায় ছিলেন। টেলিফোনে জানতে পারেন ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের কারণে তার গাড়ি পুলিশ নিয়ে ডাম্পিং স্টেশনে রেখেছে। পরদিন ফিরেই গাড়ির কাছে গিয়ে দেখতে পান তার গাড়ির দুই চাকা নেই। কিছুক্ষণ পর অপর এক গাড়ির মালিক এনামুল হক বলেন, সকাল ১০টায় তার গাড়িটি নিউমার্কেট এলাকা থেকে পুলিশ রেকার লাগিয়ে নিয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তিনি জানতে পারেন গাড়িটি ডাম্পিং স্টেশনে। প্রয়োজনীয় জরিমানা দিয়ে গাড়ির কাছে গিয়ে তিনি দেখতে পান, দুই পাশের লুকিং গ্লাস ও ভিতরে থাকা সাউন্ড সিস্টেম চুরি হয়ে গেছে। ট্রাফিক বিভাগ বলছে, স্থায়ী কোনো ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় তারা নিরুপায় হয়েই এসব স্থানে গাড়ি রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেরেবাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে ডাম্পিং স্টেশনের দায়িত্বে থাকা উপ-পরিদর্শক মোজ্জামেল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডাম্পিং স্টেশনে চুরির সঙ্গে পুলিশের সংশ্লিষ্টতা নেই। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর