রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

ঐতিহ্যের লাঠি খেলা

নওগাঁ প্রতিনিধি

ঐতিহ্যের লাঠি খেলা

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা এখনো বেশ জনপ্রিয়। আবহমানকাল ধরে নওগাঁর সব উপজেলায় বিনোদনের খোরাক জুগিয়ে আসছে এই লাঠিখেলা। লাঠি খেলার সঙ্গে অনেকগুলো বিষয় যুক্ত। যেমন ঢোল, লাঠি, উত্তেজনা, তালে তালে নাচানাচি ইত্যাদি ছাড়াও থাকে প্রতিপক্ষের হাত থেকে আত্মরক্ষার সুনিপুণ কৌশল অবলম্বনের বিষয়। এ খেলার জন্য প্রয়োজন হয় সাড়ে চার থেকে পাঁচ ফুট লম্বা লাঠি, যা থাকে প্রায় তৈলাক্ত। প্রত্যেক খেলোয়ার তাদের নিজ নিজ লাঠি দিয়ে রণকৌশল প্রদর্শন করেন। শুধু বলিষ্ঠরাই এ খেলায় অংশ নিতে পারেন। অবশ্য এখন শিশু থেকে শুরু করে যুবক, বৃদ্ধ সব বয়সের পুরুষরাই লাঠি খেলায় অংশ নিয়ে থাকেন। এই খেলার আসরে লাঠির পাশাপাশি যন্ত্র হিসেবে ঢোলক, কনের্ট, ঝুমঝুমি ইত্যাদি ব্যবহূত হয় এবং সংগীতের পাশাপাশি চুড়ি নৃত্য দেখানো হয়। আত্রাই উপজেলার হাতিয়াপাড়া গ্রামের হাসিবুল হাসান শান্ত বলেন, আমাদের অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের লাঠি খেলা রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম সড়কি খেলা, ফড়ে খেলা, ডাকাত খেলা, বানুটি খেলা, গ্রুপ যুদ্ধ, নরি বারী খেলা এবং দা খেলা (ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপহাস যুদ্ধ) ইত্যাদি। গ্রামের সাধারণ মানুষ তাদের উৎসব, বাংলা বর্ষবরণ, বিবাহ, অণ্নপ্রাশন ইত্যাদি উপলক্ষে লাঠি খেলার আয়োজন করে থাকেন। এক্ষেত্রে সাধারণত লাঠিয়াল দলকে ভাড়া করে আনা হয়। গত দশকেও গ্রামাঞ্চলের লাঠি খেলা বেশ আনন্দের খোরাক জুগিয়েছে। সাধারণ মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই করে নিয়েছিল এ খেলা। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসত এ খেলা দেখার জন্য। তিনি এ খেলার দুঃসময় সম্পর্কে বলেন, এ খেলাটি দিন দিন বিলুপ্ত হওয়ার কারণে তৈরি হচ্ছে না কোনো নতুন খেলোয়াড়। আর পুরনো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রা অর্থাভাবে এ খেলার প্রসার ঘটাতে পারছেন না। আত্রাই মোল্লা আজাদ মেমোরিয়াল কলেজের সমাজ কর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক লোকমান হোসেন বলেন, মানুষ যখন সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে হারিয়ে ফেলে, তখন সমাজে অপসংস্কৃতি ঢুকে পড়ে। এটা আমাদের দেশেও ঘটছে। আমাদের ছেলে-মেয়েরা দেশি খেলাধুলা ভুলতে বসেছে। আমরা দিন দিন অপসংস্কৃতির প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছি। লাঠিখেলা আমাদের দেশি ঐতিহ্যপূর্ণ একটি খেলা যা আজ বিলুপ্ত প্রায়। এ ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর