সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

মুক্ত বাণিজ্যে ‘ধীরে’ এগোতে চায় বাংলাদেশ

তাগিদ চীন ও মালয়েশিয়ার

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

সাম্প্রতিককালে বিশ্ব অর্থনীতির জায়ান্ট হিসেবে আভির্ভূত চীন ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশ মালয়েশিয়া ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) বা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির জন্য টার্গেট করেছে বাংলাদেশকে। দুটি দেশই সরকারকে বারবার তাগাদা দিচ্ছে তাদের সঙ্গে এফটিএ করতে। তবে বাংলাদেশ এ ব্যাপারে ধীরে চলো নীতি অনুসরণ করতে চায়। এ দুটি দেশের সঙ্গে এফটিএ করার বিষয়ে গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, যে কোনো দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ার আগে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থ সবার আগে বিবেচনা করা হয়। চীন ও মালয়েশিয়া এ দুটি দেশের সঙ্গে এ মুহৃর্তে  এফটিএ করা হলে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনায় উঠে এসেছে। মালয়েশিয়া ও চীন দুটি দেশের সঙ্গে এফটিএ করা কতটা যৌক্তিক হবে সে বিষয়ে ট্যারিফ কমিশন থেকে মতামত নেওয়া হয়েছে। ট্যারিফ কমিশন জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট দুটি দেশ থেকেই যেহেতু রপ্তানির তুলনায় বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ অনেক বেশি, তাই এফটিএ করা হলে বাংলাদেশের তুলনায় সংশ্লিষ্ট দেশ দুটিরই লাভ বেশি হবে। জানা গেছে, বর্তমানে চীন থেকে যে আমদানি হয় তার বিপরীতে প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার আমদানি শুল্ক পায় বাংলাদেশ। মালয়েশিয়া থেকে আরও প্রায় ৩৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমাণ আমদানি শুল্ক আসে। এফটিএ হলে বিপুল পরিমাণ এই রাজস্ব হারাবে সরকার। উপরন্তু মুক্ত বাণিজ্যের কারণে বাংলাদেশের বাজারে অবাধে ঢুকবে চীন ও মালয়েশিয়ার পণ্য। ফলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে দেশীয় শিল্প। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চীন থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য এবং রপ্তানি করেছে প্রায় সাতশ’ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। অর্থাৎ চীনে রপ্তানি সে দেশ থেকে আমদানির এক-দশমাংশেরও কম। অপরদিকে একই সময়ে বাংলাদেশ মালয়েশিয়া থেকে আমদানি করেছে ১২৮ কোটি ৭৫ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের পণ্য, রপ্তানি করেছে মাত্র ১৪ কোটি ৯ লাখ ডলার মূল্যের পণ্য। ফলে সে দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। চীন ও মালয়েশিয়া দুটি দেশেরই যুক্তি হচ্ছে বিপুল পরিমাণ এই বাণিজ্য বৈষম্য কমাতে বাংলাদেশের উচিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে আসা। তবে বাংলাদেশ হিসাব করছে অন্যভাবে। গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এফটিএ সংক্রান্ত যে বৈঠকটি হয়েছে তাতে সভাপতিত্ব করেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে এর আগে কোনো দেশের এফটিএ হয়নি।

 এ ছাড়া এ ধরনের চুক্তি স্বাক্ষর করা একটু সময় সাপেক্ষ বিষয়। আমরা সংশ্লিষ্ট দুটি দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এ বিষয়গুলো আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখতে চাই। কর্মকর্তারা জানান, এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ এফটিএ ছাড়াই বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার জিরো ট্যারিফের আওতায় বর্তমানে চীনে প্রায় ৪ হাজার পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাচ্ছে। এ ছাড়া মালয়েশিয়ার প্রস্তাবে দুই দেশের পণ্যের অবাধ রপ্তানি সুযোগের কথা বলা হলেও বাংলাদেশি পণ্যের জন্য বাড়তি কোনো সুখবর মিলবে না। বাংলাদেশ চায় এ চুক্তির আওতায় অবাধে দেশটিতে জনশক্তি রপ্তানি ও সেবা খাতের জন্য বাজার উন্মুক্ত হোক, তাতে সায় মিলছে না মালয়েশিয়ার। তাই মালয়েশিয়ার সঙ্গে এফটিএ করাটাও এখন লাভজনক হবে না বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সর্বশেষ খবর