শিরোনাম
বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

মারাই গেল ‘বঙ্গ বাহাদুর’

শফিক জামান, জামালপুর

মারাই গেল ‘বঙ্গ বাহাদুর’

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে মৃত হাতি —বাংলাদেশ প্রতিদিন

‘তুই ক্যান বন ছাইড়া মরতে আইলি এইহানে। মানুষ তরে চিনল না’—আহাজারি করছিলেন জমিলা বেগম। আর সত্তরোর্ধ্ব দুদু মিয়ার দুই চোখ গড়িয়ে পড়ছিল অঝর কান্না। শুধু জমিলা বেগম আর দুদু মিয়া নন, সরিষাবাড়ীর কয়ড়া গ্রামের আলমগীর, আবুল কাশেম, ফরহাদ, জবান আলী, কুদ্দুস—সবার চোখ ছলছল করছিল। স্বজন হারানোর ব্যথা তাদের বুকে। কিছুতেই তারা মেনে নিতে পারছিলেন না ‘বঙ্গ বাহাদুর’-এর চলে যাওয়াকে। বঙ্গ বাহাদুরের মৃত্যুর পর সরিষাবাড়ীর   কয়ড়ার ও আশপাশের গ্রামগুলোর মানুষের মধ্যে এখন শোকের ছায়া। দলে দলে তারা আসছেন মৃত হাতিটিকে এক নজর দেখতে। ‘বন্যায় হাতিটি এ অঞ্চলে আসার পর থেকে আমরা তার পিছে আছি। আনন্দ করেছি। হাতিটি খুব নিরীহ প্রকৃতির ছিল। আমাদের বাড়ি-ঘর নষ্ট করেনি। ফসলের ক্ষতি করেনি। হাতিটির প্রতি আমাদের মায়া জন্মে গিয়েছিল।’ বলছিলেন দুদু মিয়াসহ এলাকাবাসী। গতকাল ভোর সাড়ে ৬টার দিকে জামালপুরের সরিষাবাড়ীর কয়ড়া এলাকায় মারা যায় বন্যহাতি বঙ্গ বাহাদুর। মারা যাওয়ার পর থেকেই কয়ড়া ও আশপাশের গ্রামে চলছে শোকের মাতম। উদ্ধারকারী দলের সদস্য ডা. সাঈদ হোসেন বলেন, ‘সোমবার দুপুরের দিকে হাতিটি অসুস্থ হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ে। এর পর থেকে আর দাঁড়াতে পারেনি। তার শরীরের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল। গতকাল দুপুর থেকে তার চিকিৎসা চলছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ (মঙ্গলবার) ভোর সাড়ে ৬টায় বঙ্গ বাহাদুর মারা যায়।’ এলাকাবাসীর অভিযোগ, বন বিভাগের কর্মকর্তাদের অবহেলায় হাতিটির মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকাবাসী বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে বন বিভাগের উদ্ধারকারী দলের প্রধান ড. তপন কুমার দে বলেন, ‘আমরা হাতিটিকে বাঁচাতে সব রকম চেষ্টা করেছি। উদ্ধার হওয়ার পর বিরূপ পরিবেশের কারণে আমরা হাতিটিকে নিরাপদ স্থানে সরাতে পারিনি। বঙ্গ বাহাদুরকে নিয়মিত খাবার, স্যালাইন দেওয়া হচ্ছিল। চলছিল চিকিৎসাও। এর পরও আমরা তাকে বাঁচাতে পারলাম না।’ বক্তব্য দেওয়ার সময় আবেগে চোখ ছলছল করছিল এই কর্মকর্তার। তিনি জানান, ময়নাতদন্তের পর হাতির মৃত্যুর কারণ জানা যাবে। ময়নাতদন্তের জন্য বন বিভাগের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে হাতিটিকে সরিষাবাড়ীর কয়ড়া গ্রামে পুঁতে ফেলা হবে। মেডিকেল টিমের প্রধান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন হাতিটি চরাঞ্চলে নিঃসঙ্গ ছিল। ঠিকমতো খাবার পায়নি। এ ছাড়া অপরিচিত পরিবেশে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল সে। সব মিলিয়ে শারীরিকভাবে সে অত্যন্ত দুর্বল ছিল, যে কারণে হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সর্বশেষ গতকাল বিকালে ময়নাতদন্ত চলছিল। ময়নাতদন্ত শেষে ভিসেরা রিপোর্টের জন্য ঢাকার মহাখালীতে পাঠানো হবে। ২৭ জুন প্রথম দফা বন্যার শুরুতে ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছিল বন্য হাতিটি। এরপর প্রায় দেড় মাস সে জামালপুর, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ার চরাঞ্চলে ঘুরে বেড়ায়। ১১ আগস্ট চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে হাতিটিকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পর থেকে সে অস্থির ছিল। কয়েক দফা সে দড়ি ও শেকল ছিঁড়ে ছুটে গেলে ফের তাকে চেতনানাশক দিয়ে আটক করা হয়।

সর্বশেষ খবর