শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

দৃশ্যমান হচ্ছে স্বপ্নের সেতু.

লাবলু মোল্লা, মুন্সীগঞ্জ

দৃশ্যমান হচ্ছে স্বপ্নের সেতু.

অবশেষে দৃশ্যমান হতে চলেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। সেতুর অবকাঠামো-বোঝাই আরও একটি চীনা জাহাজ মাওয়া ঘাটে এসে পৌঁছেছে। গতকাল সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এটি এসে পৌঁছায়। দেশবাসীর বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা বহুমুখী সেতুর জন্য চীনে তৈরি হওয়া অবকাঠামো-বোঝাই দ্বিতীয় জাহাজটি মুন্সীগঞ্জের মাওয়ার সেতু প্রকল্পের কুমারভোগ কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের বিশাল ওয়ার্কশপে ড্রাস্ট হাউসে রাখা হচ্ছে। ড্রাস্ট হাউসেই মোট ৪১টি অবকাঠামো

(স্প্যান) ফিটিং করা হবে। প্রস্তুতি শেষে একে একে ৪১টি স্প্যান জাহাজযোগে ক্রেনের সাহায্যে বসানো হবে পদ্মা সেতুর ৪২টি মূল পিলারের ওপর। সুপার স্ট্রাকচারের মধ্যে রয়েছে জয়েন্ট, মেম্বার, গার্ডার ও টপকর্ড। পদ্মা সেতুতে মোট ৪১টি স্প্যান (অংশ) থাকছে, যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। শিগগিরই পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো বাস্তব রূপ নিতে যাচ্ছে। দেশের সর্ববৃহৎ এ সেতুর মূল অবকাঠামোগত নির্মাণ-প্রস্তুতি এখন চলছে আরও জোরেশোরে। এরই মধ্যে সেতুর মূল অবকাঠামো (সুপার স্ট্রাকচার) নির্মাণের দ্বিতীয় স্প্যান মাওয়া এলাকায় এসে পৌঁছানোর এক ঘণ্টা পরই জাহাজ থেকে খালাসের প্রক্রিয়া শুরু হয়। অন্যদিকে সেতুর এসব স্প্যান চীনের কারখানায় তৈরি হয়ে পর্যায়ক্রমে আসবে। স্প্যানগুলো পিলারের ওপর স্থাপন শুরুর মধ্য দিয়েই দৃশ্যমান হতে শুরু করবে পদ্মা সেতু। এদিকে ২৯ জুলাই মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে পদ্মা সেতুর সুপার স্ট্রাকচারের দ্বিতীয় স্প্যান বার্জে করে মাওয়ার উদ্দেশে নদীপথে পাঠানো হয়। গতকাল এ মালবাহী জাহাজটি মাওয়া এলাকায় পৌঁছায়। সকাল সাড়ে ৮টার পর জাহাজটি খালাসের প্রক্রিয়া শুরু হয়। স্টিলের তৈরি এই স্প্যানের ল্যাবসহ অন্যান্য টেস্ট এখানে সম্পন্ন করার পর আগামী ডিসেম্বরে প্রথম ধাপে পিলারের ওপর স্প্যান স্থাপনের কাজ শুরু হবে। তবে এখন চলমান রয়েছে সুপার স্ট্রাকচার স্থাপনের আগের কাজগুলো। মূল সেতুর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সুপার স্ট্রাকচারে মোট ৪১টি স্প্যান থাকবে। প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য হবে ১৫০ মিটার এবং ওজন আনুমানিক ২ হাজার ৯০০ টন। এ দুই পিলারের মাঝেই বসিয়ে দেওয়া হবে সুপার স্ট্রাকচার। ওয়ার্কশপ থেকে ক্রেনে করে সরাসরি নেওয়া হবে পিলারের ওপর। পদ্মাবক্ষে মোট ৪২টি পিলার থাকবে এবং নদীর দুই পারে আরও ১২টি করে ২৪টি, সর্বমোট ৬৬টি পিলার থাকবে এ সেতুতে। এসব পিলারের মধ্যে নদীতে থাকা ৪২টি মূল পিলারের ওপর থাকবে স্টিলের তৈরি স্ট্রাকচার বা স্প্যান। আর ২৪টির ওপর থাকবে ভায়াডাক্ট। ভায়াডাক্টের মাধ্যমে মূল সেতুকে সংযুক্ত করা হবে। এদিকে জাজিরা প্রান্তে ভায়াডাক্টের (ভূমিতে সংযোগ সেতু) পাইলের কাজও শুরু হয়েছে। এটির কাজও এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে। এ ছাড়া সেতুর পাইলিং কাজের জন্য উচ্চ ক্ষমতার আরেকটি হ্যামারও এখন সমুদ্রপথে রওনা হয়েছে। নেদারল্যান্ডস থেকে বাংলাদেশের কুতুবদিয়া চ্যানেল হয়ে জাহাজে করে মাওয়ায় নিয়ে আসা হবে এটি। নতুন হ্যামারটি আসার পর পাইল স্থাপন কাজের গতি বেড়ে যাবে। সব মিলিয়ে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক বাস্তবায়ন কাজ শেষ হয়েছে ৩৮ শতাংশ। এ পর্যন্ত ২৭টি পাইলের কাজ শেষ হয়েছে। আর নদীশাসন, অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও সব প্যাকেজ মিলিয়ে সার্বিক অগ্রগতি এখন ৩৮ শতাংশের মতো বলে নিশ্চিত করেছে সেতু কর্তৃপক্ষ। পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, মাওয়ার কুমারভোগে নির্মিত বিশাল ওয়ার্কশপেই দ্বিতীয় জাহাজটির স্প্যান রাখা হচ্ছে। আসার অপেক্ষায় রয়েছে আরও তিনটি জাহাজ। এসব স্প্যান যথাযথভাবে প্রস্তুত করে আগামী ডিসেম্বরে স্থাপনের কাজ শুরু হবে। পদ্মা সেতুর সুপার স্ট্রাকচার ফিটিংয়ের জন্য মাওয়া প্রস্তুত রয়েছে। আর সেতুর পিলারের ওপর ১৫০ মিটার দীর্ঘ এই সুপার স্ট্রাকচারে থাকছে গার্ডারসহ দ্বিতল স্টিলের সেতু। এর নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন আর ওপর দিয়ে অন্য যানবাহন। এক পিলার থেকে অন্য পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার। রবিবার জাজিরা প্রান্তে ভায়াডাক্টের (ভূমিতে সংযোগ সেতু) পাইলের কাজ শুরু হয়েছে। এর কাজও এগিয়ে চলেছে। উল্লেখ্য, পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। চার লেনবিশিষ্ট এই সেতু ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২২ মিটার চওড়া। এটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সর্বশেষ খবর