শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৬ ০০:০০ টা

এবার বিমানের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস

নিজস্ব প্রতিবেদক

এবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে ফল প্রকাশের ক্ষেত্রেও এতটা তড়িঘড়ি করা হয়েছে যে, মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষার সব খাতা দেখে পরদিন সকালে ফলাফল প্রকাশ   করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার বিকালে বিমান ট্রেনিং সেন্টারে (বিএটিসি) অনুষ্ঠিত গ্রাউন্ড সার্ভিস এসিস্ট্যান্ট পদের পরীক্ষা নিয়ে এসব প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, প্রশ্নপত্র ফাঁসে প্রতিটি প্রশ্ন বাবদ ৫০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় পরীক্ষার্থীদের কেউ কেউ কেন্দ্রের বাইরে এসেও উত্তরপত্র নিয়ে গেছেন। জানা গেছে, বিমান অভিজ্ঞতাসম্পন্ন গ্রাউন্ড সার্ভিস এসিস্ট্যান্টের ২৫ পদের জন্য ১০০ নম্বরের এমসিকিউ পদ্ধতিতে এদিন এক ঘণ্টার পরীক্ষার আয়োজন করে। এতে কয়েকশ আবেদন জমা পড়লেও বিমান মাত্র ৪৫ জনকে পরীক্ষায় অংশ নিতে বাছাই করে। এ অবস্থায় সোমবার রাতেই গুঞ্জন ওঠে প্রশ্নপত্র ফাঁসের। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কজন পরীক্ষার্থী উত্তর তৈরি করছেন। এ সময় একজনকে দ্রুত বিএটিসির অধ্যক্ষ পার্থ কুমার পাণ্ডের রুমে গিয়ে যোগাযোগ করে প্রশ্ন সম্পর্কে নিশ্চিত হতে দেখা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘নিয়োগ নয়, ঘুষ বাণিজ্যই মুখ্য ছিল।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ ঘটনা নিয়ে বিমানে তোলপাড় অবস্থা চলছে। উল্লেখ্য, আজ (বৃহস্পতিবার) এ পদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে ওই প্রশ্নে ব্যাপক ভুলত্রুটি ছিল বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিমানের একজন পরিচালক। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ‘একটি প্রশ্ন ছিল— একটি উড়োজাহাজে কতগুলো আসন থাকে? পেলেটের ওজন কত? এ প্রশ্নটি সম্পূর্ণ ভুল। কারণ এতে উল্লেখ করা হয়নি কী ধরনের উড়োজাহাজ— ছোট না বড়, বোয়িং না এয়ারবাস? একই পেলেটেরও উড়োজাহাজ ভেদে তারতম্য রয়েছে। সেটা সুনির্দিষ্ট না করলে কোনো সদুত্তর দেওয়া কোনো পণ্ডিতের পক্ষেও সম্ভব নয়। এ ধরনের ৭টি ভুল প্রশ্ন ছিল।’

বিমান সূত্র জানায়, গ্রাউন্ড সার্ভিস এসিস্ট্যান্ট পদটি কাস্টমার সার্ভিসের হওয়ায় প্রশ্নপত্র তৈরির দায়িত্ব ছিল এই বিভাগের পরিচালকেরই। কিন্তু বিমানের কেন্দ্রীয় প্রশাসনের পরিচালক বেলায়েত হোসেন তাতে বাধা দিয়ে নিজেই তার অধীনস্থ হিউম্যান রিসোর্সের দোহাই দিয়ে বিএটিসির অধ্যক্ষ পার্থ কুমার পাণ্ডের কাছে পাঠিয়ে দেন। ওই অধ্যক্ষের নিজেরই কাস্টমার সার্ভিসের চাকরির অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও অপ্রাসঙ্গিক ও ভুল প্রশ্নপত্র তৈরি করেন। আবার তার অফিস থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে। মূলত ২৫টি পদের চাকরি নিয়ে হরিলুট করার জন্যই পরিচালক বেলায়েত, ম্যানেজার সুদীপ ও বারী সিন্ডিকেট মিলে কাস্টমার সার্ভিসকে বাদ দিয়ে এ পরীক্ষার দায়ভার নিজেরাই করায়ত্ত করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিচালক বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের কথা আপনাদের মিডিয়ার কাছ থেকেই  শুনেছি। তবে তা কতটা সত্য-মিথ্যা সেটা খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’ এদিকে বিভিন্ন সূত্র জানায়, বিতর্কিত ওই পরীক্ষায় প্রথমে ৩০ জন পাস করলেও পরে পরিচালক প্রশাসনের অফিসে বসে আরও কজনকে পাস করানোর জন্য ১০ নম্বর গ্রেস দেওয়া হয়। মূলত একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তার প্রার্থীকে পাস করানোর জন্য ১০ নম্বর স্পেশাল গ্রেস দিয়ে পাস করানো হয়। প্রথমে সিদ্বান্ত ছিল পাঁচ নম্বর গ্রেস দেওয়া। কিন্তু তাতে ওই পরীক্ষার্থী পাস করেনি। পরে দশ নম্বর দেওয়ার পর ওই প্রার্থী উত্তীর্ণ দেখিয়ে আজকের মৌখিক পরীক্ষায় হাজির হতে বলা হয়। এ ধরনের জালিয়াতিতে বিমানে তোলপাড় চলছে।

সর্বশেষ খবর