শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

শালিসে চেয়ারম্যানের নির্দেশে বেত্রাঘাত ২৩ শিক্ষার্থী আহত

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

মুন্সীগঞ্জে নৌ ভ্রমণে গিয়ে স্কুলছাত্র আরাফাত হোসেনের অপমৃত্যুর ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকালে গ্রাম্য শালিসে বেত্রাঘাতে ২৩ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। এ সময় শালিসপ্রধান ও পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফার নির্দেশে ২৫ শিক্ষার্থীকে সাড়ে ১২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। বেত্রাঘাতে গুরুতর আহত শিক্ষার্থীদের মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। মুন্সীগঞ্জ শহরের কাছে বাগবাড়ী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বেত্রাঘাতে আহত শিক্ষার্থীরা শালিসদের ভয়ে নাম প্রকাশ করছে না। আহত সুমনের (১৬) অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অন্য আহতদের মধ্যে রয়েছে ইয়াসিন (১৩), পায়েল আহমেদ (১৩), মো. রিয়েল (১৩), মো. নয়ন (১৬), মো. ইমন (১৭), মো. শিপর (১৪), মো. সৌরভ (১৪)। তারা সবাই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় আহত স্কুলছাত্র সুমনের বাবা তোফাজ্জল হোসেন বাদী হয়ে স্থানীয় শালিশপ্রধান ও পঞ্চসার ইউপির চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফাসহ ২৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি নৌ ভ্রমণে গিয়ে স্কুলছাত্র আরাফাত হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল বাগবাড়ী মসজিদ প্রাঙ্গণে গ্রাম্য শালিস বসে। শালিসিতে ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা নৌ ভ্রমণে যাওয়া অন্য ২৩ শিক্ষার্থীকে ২৫টি করে বেত্রাঘাত ও প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এতে আদি যুগের বর্বরতার শিকার হয় শিক্ষার্থীরা। উপস্থিত শত শত লোকের সামনে তাদের একের পর এক বেত্রাঘাত করে মারাত্মক আহত করা হয় বলে স্থানীয়রা জানায়। ১৫ সেপ্টেম্বর একই এলাকার ২৬ শিক্ষার্থী নৌ ভ্রমণে গিয়ে নিখোঁজ হয় বাগবাড়ীর নাসির উদ্দিনের ছেলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আরাফাত। তিন দিন পর জেলার সিরাজদীখান উপজেলার দোসরপাড়ার ইছামতি নদীতে আরাফাতের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ গ্রাম্য শালিস বসে। পঞ্চায়েত কমিটির সদস্য এবং চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন বলে পরিচিত টিটু ও আরিফ শিক্ষার্থীদের ২৫টি করে বেত মারেন। আহত শিক্ষার্থীদের পরে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ বিষয়ে গোলাম মোস্তফা সাংবাদিকদের বলেন, পঞ্চায়েত কমিটি শিক্ষার্থীদের বিচার করে। ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক সঞ্জয় পোদ্দার বলেন, তিনি ২১ জনকে চিকিৎসা দিয়েছেন, যাদের সবাই বাগবাড়ীর কিশোর। সবার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আহত ওই কিশোরদের লাঠি দিয়ে আঘাত করে মারাত্মক আহত করা হয়। তবে আহত কিশোরদের একজন ছাড়া অন্য কারও অবস্থাই আশঙ্কাজনক নয় বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে গতকাল সকালে মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী বলেন, বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গে এলাকায় ও হাসপাতালে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় ইউপি চেয়ারম্যানসহ ২৫ জনকে আসামি করে মামলা এবং তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে ঘটনাটি অত্যন্ত অমানবিক বলেও তিনি সাংবাদিকদের জানান এবং বলেন, এর সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

সর্বশেষ খবর