চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার ২৯০ দশমিক ৮৭৫ একর ভূমি। এখানে গড়ে উঠবে ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’। বিনিয়োগ হবে বৈদেশিক অর্থ। কর্মসংস্থান হবে দেশের প্রায় ২ লাখ মানুষের। প্রতিষ্ঠা হবে শিল্প-কারখানা। পৃথক স্থান বরাদ্দ থাকবে জাহাজশিল্পের জন্য। বিশেষ এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেখা দিয়েছে অফুরান সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত। হাতছানি দিচ্ছে সমৃদ্ধ অর্থনীতির। এমনটা হলে বদলে যাবে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক দৃশ্যপট। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) অনুকূলে এসব ভূমি নিবন্ধন দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। অনুমোদিত মূল্যে বেজাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে ৩৮২ কোটি ৬৮ লাখ ১২ হাজার ২৭৭ টাকার প্রস্তাবিত সালামি মূল্যের অধিভুক্ত সব জায়গা। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আনোয়ারা উপজেলার মোট চার মৌজায় গড়ে উঠবে এ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এর মধ্যে আছে বেলচূড়া মৌজায় ৩ কোটি ৯৭ লাখ ৫৩ হাজার ৮৫৫ টাকার ৫ দশমিক ৯১ একর ভূমি, হাজীগাঁও মৌজায় ২৩ কোটি ৬৬ লাখ ৪৪ হাজার ৮৬২ টাকার ৩৮ দশমিক ১৬ একর ভূমি, বটতলী মৌজায় ৪৬ কোটি ৬০ লাখ ৪০ হাজার ৯৬৬ টাকার ১০০ দশমিক ৮০৫০ একর ভূমি এবং বৈরাগ মৌজায় ৩০৮ কোটি ৪৩ লাখ ৭২ হাজার ৫৯৪ টাকা মূল্যের ১৪৬ একর ভূমি। তবে প্রতিটি মৌজার জায়গা দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ১ টাকা করে।
বেজার চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী বলেন, ‘আনোয়ারায় অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভূমিসংক্রান্ত সব কাজ শেষ। ইতিমধ্যে চীনের উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি দল প্রকল্প স্থান পরিদর্শন করেছে। শিগগিরই অবকাঠামো তৈরির কাজ শুরু হবে। এ প্রকল্পে ৩০ শতাংশ বেজার ও ৭০ শতাংশ চীনা প্রতিষ্ঠানের থাকবে। দুই বছরের মধ্যে নির্মাণ শেষ হওয়ার আশা আমাদের। কাজ শেষ হলে এখানে অন্তত ২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে।’ বেজা সূত্রে জানা যায়, আনোয়ারা অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশের বিকাশমান ও রপ্তানিমুখী সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান থাকবে। এর মধ্যে জাহাজ নির্মাণ শিল্প, ইলেকট্রনিক পণ্যসামগ্রী, ফার্নেস ও সিমেন্ট শিল্পকে সর্বাধিক প্রাধান্য দেওয়া হবে। এ অর্থনৈতিক জোনে স্থাপন করা হবে ৩৭১টি শিল্প-কারখানা। এর মধ্যে ২৫০টিই জাহাজ নির্মাণ শিল্পের জন্য বরাদ্দ থাকবে। জানা যায়, ইতিমধ্যে চীনসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি দল চট্টগ্রামের এই অর্থনৈতিক জোন পরিদর্শন করে গেছে। গত তিন মাসে চট্টগ্রাম ঘুরে গেছেন ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, জাপান, তাইওয়ানসহ কয়েকটি দেশের বিনিয়োগকারীরা। সমুদ্র ও বন্দরের কারণে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চট্টগ্রামই তাদের প্রথম পছন্দ। বিনিয়োগের সম্ভাবনা খুঁজতে ২৭ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম ঘুরে যায় বার্মিজ প্রতিনিধি দল। ২৫ আগস্ট চট্টগ্রাম চেম্বারের সঙ্গে এক চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠিত হয় ভারতের গুজরাট চেম্বার সভাপতি বি এস আগারওয়ালের। একই দিন গুজরাট প্রতিনিধি দল চট্টগ্রাম ইপিজেডসহ কয়েকটি গার্মেন্টস কারখানা পরিদর্শন করে। ৭ সেপ্টেম্বর থাই বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মিংপ্যান্ট ছায়ার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল চট্টগ্রাম পরিদর্শন করে। অর্থনৈতিক জোন গড়ে ওঠার কারণে কার্যত বিদেশি বিনিয়োগকারীরা চট্টগ্রামের এসব সম্ভাব্য ব্যবসায়িক স্থান পরিদর্শন করছেন বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা। চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর হলো যোগাযোগের হাব। ফলে বিদেশিদের আগ্রহ এই চট্টগ্রামেই। যে কোনো রপ্তানিমুখী শিল্পের জন্য চট্টগ্রামের চেয়ে উত্কৃষ্ট কোনো স্থান হতে পারে না। কারণ বিনিয়োগ একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করেই ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, জাপান, তাইওয়ানের প্রতিনিধিরা চট্টগ্রামে নিয়মিত আসছেন। এ ছাড়া বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের স্থান নানাভাবে সমীক্ষাও করছেন। এর পরই তারা বিনিয়োগে যাচ্ছেন।