শিরোনাম
রবিবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জট খুলছে না হত্যা রহস্যের

থানায় জিডি-মামলা হলেও কোনো কাজ হয় না

মাহবুব মমতাজী

রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায়ই লাশ উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে দায়ের হচ্ছে অপমৃত্যু মামলা। তারপর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আটকে থাকছে তদন্তের  প্রক্রিয়া। পরবর্তীতে আর জানা যাচ্ছে না মৃত্যুর কারণ। এভাবেই ঘটনাগুলো চাপা পড়ে যাচ্ছে। জট খুলছে না মৃত্যু রহস্যের।

কিছু ঘটনার ব্যাপারে দেখা যায়, মৃত্যুর আগে নিখোঁজ হয়ে যান কোনো কোনো ব্যক্তি। এ নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন স্বজনরা। পুলিশের তদন্ত শুরুর কিছু পরে অন্য স্থানে লাশ পাওয়া যায়। এসব লাশ মেলে রাজধানী ও তার আশপাশের এলাকা, রেললাইন কিংবা নদীতে। এ ক্ষেত্রেও দায়ের হয় অপমৃত্যু মামলা। তারপর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আটকে থাকে তদন্তের প্রক্রিয়া। পরবর্তীতে আর জানা যায় না মৃত্যুর কারণ। জানা গেছে, এরকম বেশ কিছু ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মূল রহস্য ও মৃত্যুর কারণ উদঘাটন করতে পারেনি। আবার কিছু কিছু ঘটনার ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না পাওয়ায় তদন্তে অগ্রগতিও হয়নি।

অনুসন্ধানে     জানা গেছে, দুই মাসের বেশি সময়েও ডাচ-বাংলা চেম্বারের সভাপতি হাসান খালেদ এবং দৃক গ্যালারির হিসাবরক্ষক মো. ইরফানুল ইসলামের মৃত্যু রহস্যের জট খোলেনি। একইভাবে গত বছরের ২৯ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থেকে সুশান্ত রায় নামে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের এক কর্মকর্তার লাশ পাওয়া যায়, যা এক বছরের বেশি সময় ধরে রহস্যের জটে আটকে আছে। গত ২৩ জুলাই ডাচ-বাংলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি হাসান খালেদ নিখোঁজ হয়েছিলেন। আর দৃক গ্যালারির হিসাবরক্ষক মো. ইরফানুল ইসলাম নিখোঁজ হন ২ এপ্রিল। নিখোঁজের দিন সকালে হাসান খালেদ ওষুধ কিনতে ধানমন্ডির ৪/এ নম্বর সড়কের বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। এ ঘটনায় ওই দিন রাতে হাসান খালেদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না— জানিয়ে ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তার শ্যালক শরীফুল আলম। ইরফানুলের নিখোঁজের ঘটনায় দৃকের মহাব্যবস্থাপক এস এম রেজাউর রহমান কলাবাগান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডির কয়েকদিন পর গত ২৬ জুলাই কামরাঙ্গীরচর ও কেরানীগঞ্জ থানার মাঝামাঝি খোলামোড়া ঘাট এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীতে হাসান খালেদের লাশ পাওয়া যায়। আর নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় ইরফানুল ইসলামের লাশ পাওয়া যায় ৩ এপ্রিল দুপুরে। এরপরই পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় মামলা করা হয়। মামলার তদন্তের পরবর্তী কার্যক্রম জানতে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোর ওসিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, মামলাগুলোর তদন্ত ডিবি করছে। ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল লতিফ বলেন, ‘বিষয়টি (মামলা) আমাদের কাছে নেই। এ নিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তদন্ত করছে।’ গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক বাহাউদ্দিন ফারুকীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘মামলাগুলো আমাদের কাছে ১০-১৫ দিন ছিল। পরবর্তীতে সিআইডি সেগুলো নিয়ে যায়। তদন্তের ভার আমাদের কাছে আর নেই।’ বিষয়টি সম্পর্কে জানতে গত শুক্র ও শনিবার সিআইডি পুলিশের বিশেষ সুপার আবদুল্লাহ আল বাকীর সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি তা ধরেননি। পুলিশ জানায়, গত বছরের ২৯ আগস্ট রাজধানীর গুলশান থেকে সুশান্ত রায় নামে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের এক কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ব্র্যাকের পটুয়াখালী জেলা সদরের এরিয়া ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি খুলনা জেলার ডুমুরিয়ার আমরউড়িয়ায়। গুলশানের-১ এর নিকেতন আবাসিক এলাকার ৪ নম্বর সড়কের বি-ব্লকের ছয়তলা ভবনের ৫১৪ নম্বর কক্ষ থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। এ সময় তার মাথার পেছনে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। সেখান থেকে রক্ত ঝরছিল। সুশান্তকে কক্ষের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে রশি পেঁচানো অবস্থায় পাওয়া যায়। লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্র্যাকের সেন্ট্রাল মিডিয়া ইউনিটের কর্মকর্তা ফজলুল ইসলাম বলেন, ‘আমি সে ঘটনার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে কিছু জানতে পারিনি।’ ঘটনার তদন্ত অগ্রগতি সম্পর্কে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যতদূর জানি উনি গলায় ফাঁস নিয়ে মারা গিয়েছিলেন। কিন্তু তার ময়নাতদন্ত রিপোর্ট গত মাস পর্যন্ত আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি।’ ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘ওই লাশের ময়নাতদন্ত করেছেন ডা. প্রদীপ বিশ্বাস। আর তার রিপোর্ট চলতি বছরের ১৯ জুনে নিয়ে গেছেন গুলশান থানার এসআই আলী হাসান।’

সর্বশেষ খবর