মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নয় মেগা প্রকল্পে ধীরগতি

ছয়টির নেই কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি

মানিক মুনতাসির

সরকারের অগ্রাধিকারমূলক নয়টি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে ধীরগতিতে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। গত ৩ অক্টোবর প্রকাশিত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংক বলেছে, নয়টি মেগা প্রকল্পের মধ্যে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল আর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্রের কাজে কিছুটা দৃশ্যমান অগ্রগতি থাকলেও যে গতিতে কাজ চলছে তাতে নির্দিষ্ট সময়ে এসব প্রকল্প সমাপ্ত হবে কি না তা নিয়ে সংশয় আছে।

তবে অগ্রাধিকারমূলক অন্য ছয় প্রকল্পে গত আগস্ট, ২০১৬ পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। সেই ছয় মেগা প্রকল্প হলো— রামপাল বিদ্যুেকন্দ্র, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ স্থাপন, মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র (মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার), পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ও এলএনজি গ্যাস টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প। গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর থেকে মেট্রোরেলের কাজ থমকে দাঁড়িয়েছে। ওই ঘটনায় মেট্রোরেল বাস্তবায়নকারী জাপানি সংস্থা জাইকার সাত কর্মকর্তা নিহত হওয়ায় এ প্রকল্পের কাজ প্রায় তিন মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এখনই কাজের গতি বাড়াতে না পারলে প্রকল্প বাস্তবায়ন পিছিয়ে যাবে। আর সময় বাড়লে প্রকল্পগুলোর ব্যয়ও বাড়বে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। এতে সরকারের ব্যয় বাড়বে, যার চাপ পড়বে জাতীয় বাজেটে। কারণ, এসব প্রকল্পের ব্যয়ের একটা বড় অংশ সরকার অভ্যন্তরীণভাবে জোগান দিচ্ছে। তাই উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা ধরে রাখতে প্রকল্পগুলোতে গতি আনার তাগিদ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। প্রকল্পগুলোয় সরকারের নিজস্ব অর্থায়নের পরিমাণ কমপক্ষে ১৫ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের দেশ হিসেবে দেখতে চাইলে এসব প্রকল্প সময়মতো সমাপ্ত করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক অভিমত প্রকাশ করেছে, রামপাল বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে পরিবেশবাদীসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বিরোধিতা করায় সে প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। বিভিন্ন মহল থেকে ওই প্রকল্প বাতিলের দাবি জাানানো হয়েছে। পরিবেশ অধিদফতর এখন পর্যন্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবেশ ছাড়পত্র দেয়নি বলে জানা গেছে। সেতু বিভাগ বলছে, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত পদ্মা সেতুর কাজ সমাপ্ত হয়েছে ৩৭ শতাংশ। আর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্রের প্রাথমিক কাজ হয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ, যা মোটামুটি সন্তোষজনক। মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রকল্পের কাজ আগস্ট, ২০১৬ হয়েছে ২ দশমিক ১ শতাংশ। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দরের এখন পর্যন্ত কাজ হয়েছে ২ দশমিক ১ শতাংশ। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ স্থাপন প্রকল্পের কাজের এখন পর্যন্ত তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। যদিও সরকার বলছে, পদ্মা সেতু যেদিন খুলে দেওয়া হবে, সেদিন থেকেই সেতুর রেললাইনে রেল চলবে। মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্রের কাজের অগ্রগতি মাত্র ১ দশমিক ২ শতাংশ, যা এখনো প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে ৩০ শতাংশ। যদিও এ বন্দরে পরীক্ষামূলকভাবে জাহাজ ভিড়তে শুরু করেছে। আর কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রাথমিক কাজ এখনো শুরু হয়নি। এ ছাড়া এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের কাজেও উল্লেখ করার মতো কোনো অগ্রগতি নেই। যদিও বিদ্যুিবভাগ বলছে, এলএনজি গ্যাস আমদানির জন্য এই টার্মিনালটি ২০১৭ সালের মধ্যেই উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন গত ৩ অক্টোবর ওই প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানের পর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে গতি বৃদ্ধির পাশাপাশি সরকারের তদারকি বাড়ানো জরুরি। সময়মতো প্রকল্প শেষ করতে না পারলে ব্যয় বাড়বে। যার একটা স্বয়ংক্রিয় প্রভাব পড়বে জাতীয় বাজেটের ওপর। কেননা সরকার এসব প্রকল্পের ব্যয়ের একটা বিরাট অংশ জাতীয় বাজেট থেকে সংস্থান করছে। এ জন্য প্রকল্পগুলো দ্রুত গতিতে এগিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। সম্প্রতি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যালোচনা শীর্ষক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সঙ্গে এসব প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে ঠিকাদারদের জরিমানা করারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে, গত অর্থবছরে এসব প্রকল্পে দেওয়া বরাদ্দের টাকা খরচ করতে না পারায় তা ফেরত নিয়ে আবার চলতি অর্থবছরের বাজেটের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি যেমন বাড়বে, তেমনি বদলে যাবে দেশের অর্থনীতির চেহারাও।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর