মঙ্গলবার, ১ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

সব মামলায়ই আসামি সচিব

উল্টো করে মুরগি বিক্রি

নিজামুল হক বিপুল

‘মুরগির পা বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এটা প্রাণী নির্যাতন।’— এ অভিযোগ এনে সিলেটের এক ইউপি চেয়ারম্যান উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। প্রায় তিন মাস আগে করা ওই রিটে (রিট নম্বর ১২৩৪৪) মূল বিবাদী করা হয়েছে মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ সচিবকে। বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, একই রিটে অন্য বিবাদী হচ্ছেন স্বরাষ্ট্র সচিব।

শুধু মুরগি উল্টো করে ঝুলিয়ে বিক্রি করাই নয়, এ রকম অনেক আজব আজব বিষয় নিয়ে উচ্চ আদালতে প্রায় প্রতিদিনই রিট হচ্ছে। এসব রিটে বিবাদী সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর প্রায় সব রিটে বিবাদী হচ্ছেন স্বরাষ্ট্র সচিব। দিনের পর দিন এ রকম রিট দাখিলের ফলে এবং প্রায় প্রতিটিতে স্বরাষ্ট্র  সচিবকে বিবাদী করায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এখন রিট পিটিশন ফাইলের স্তূপ। এ সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। প্রতিদিনই গড়ে পাঁচটি করে রিট জমা হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এখন আর ফাইল রাখার জায়গা নেই। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের একজন উপসচিব এ রিট পিটিশনগুলোর নিষ্পত্তির বিষয়ে দাফতরিক কাজ করেন। তার দফতর পুরোটাই এখন ফাইলে ফাইলে একাকার। যে হারে রিট জমা পড়ছে সে অনুপাতে রিটের নিষ্পত্তি হচ্ছে না বলে জানা গেছে। প্রায় ছয় মাস ধরে প্রতি মাসে গড়ে একটি বা দুটি রিটের নিষ্পত্তি হচ্ছে। ডিসচার্জ হচ্ছে। কিন্তু নিষ্পত্তির হার মাসে গড়ে ১ শতাংশ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রিট ফাইলের স্তূপ ঘেঁটে জানা গেছে, পারিবারিক বিরোধ, স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব, জমিজমা নিয়ে বিরোধ, সন্তান নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ— এ রকম বিষয়েই সবচেয়ে বেশি রিট হয় আদালতে; যাতে প্রায় প্রতিটি রিটে কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই বিবাদী করা হয় স্বরাষ্ট্র সচিবকে। এ রিটে অন্য বিবাদী হচ্ছেন ঢাকার জেলা প্রশাসক (ডিসি)। সম্প্রতি পুরান ঢাকার এক ব্যক্তির স্ত্রী সন্তান নিয়ে আমেরিকা চলে যান। এ ঘটনায় ওই ব্যক্তি তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করেন (রিট পিটিশন নম্বর ২৪৯১/১৬)। এতে মূল বিবাদী করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র সচিবকে। এই পিটিশনের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, এটা খুবই আশ্চর্যের বিষয় যে, স্ত্রী সন্তান নিয়ে আমেরিকা চলে গেল, তাকে বিবাদী না করে স্বরাষ্ট্র সচিবকে বিবাদী করা হলো। কেন বাদী এমনটা করেছেন তার কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাননি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। অন্য একটি রিট পিটিশন থেকে জানা গেছে, বার্ন ইউনিটের ভবন নির্মাণের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের আমতলাসংলগ্ন পেট্রল পাম্প উচ্ছেদ করে সরকার। এ জমিটি সরকারের হওয়ায় সরকার পেট্রল পাম্প উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু পাম্প মালিকের পক্ষ থেকে এজন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে প্রধান বিবাদী করে রিট করা হয়। একই রিটে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিবসহ আরও কয়েকজনকে বিবাদী করা হয়েছে। পরে এ ঘটনায় আদালত অবমাননার মামলাও হয়। সেখানেও বিবাদী করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র সচিবকে। এ রকম বহু ঘটনা আছে যেগুলোর বিষয়ে রিট করতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে যৌক্তিক কারণ ছাড়াই। এরই পরিণামে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এখন রিটের পাহাড়। এসব রিটের নিষ্পত্তির কাজ করছে রাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর। কিন্তু নিষ্পত্তি হচ্ছে না। কবে নিষ্পত্তি হবে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কেউই তা স্পস্ট জানেন না। বরং এখন নতুন নতুন পিটিশন জমা হচ্ছে, আর কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে এসব পিটিশনের ফাইল তৈরি করে থরে থরে সাজিয়ে রাখছেন। এতে মন্ত্রণালয়ের মূল কর্মকাণ্ডই গুরুতর ব্যাহত হচ্ছে। শুধু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই নয়, সরকারের প্রায় প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ও দফতরে এ রকম হাজার হাজার রিট আবেদন পড়ে আছে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। জানতে চাইলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রথমত রিটে স্বরাষ্ট্র সচিবকে বিবাদী করার মূল কারণ হচ্ছে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোনোরকম বিবাদ হলে তা থানা বা আদালত পর্যন্ত গড়ায়। থানায় মামলা হলে পুলিশ আসামি ধরে না বা ধরতে পারে না। আবার কোর্টে মামলা হলে তার সূত্র ধরে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তখনো পুলিশ আসামি ধরতে পারে না বা ব্যর্থ হয়। বাদী তখন রিট করে এবং রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে বিবাদী করে। তিনি বলেন, এসব রিট নিষ্পত্তি না হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় অনেক ক্ষেত্রে মামলার দফাওয়ারি জবাব পাঠায় না। এজন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের দফতর আদালতে সঠিক জবাব দিতে পারে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়গুলোর গাফিলতিও আছে। এসব কারণে মামলা নিষ্পত্তি হতে বিলম্ব হচ্ছে।

মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, এসব রিট নিষ্পত্তি করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আলাদা সেল থাকলে খুব ভালো হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর