শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

নভেম্বরেই তিস্তা পানিশূন্য

লালমনিরহাট প্রতিনিধি

নভেম্বরেই তিস্তা পানিশূন্য

তিস্তার বিস্তীর্ণ এলাকা পানিশূন্য —বাংলাদেশ প্রতিদিন

তিস্তা যেন এখন আর কোনো নদী নয়, মরা খাল। ভারতের গজলডোবায় প্রবেশমুখে ও লালমনিরহাটের দোয়ানিতে ব্যারাজ নির্মাণ করে এ নদীর উচ্ছল দুর্বার গতি রোধ করে দেওয়া হয়েছে। বছরের পর বছর বিভিন্ন ক্যানেলের মাধ্যমে তিস্তার স্রোত ঘুরিয়ে দিয়ে তার বুক থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে পানি নামের জীবন। মরে গেছে তিস্তা। তিস্তার বুকজুড়ে শুধুই ধু-ধু বালুচর। খরস্রোতা তিস্তার নাব্য এতটাই হ্রাস পেয়েছে যে, আসন্ন রবি মৌসুমে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের সেচ কার্যক্রম চালানোই কঠিন হয়ে পড়বে। প্রতিদিনই পানি কমছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রমতে, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তিস্তার পানিপ্রবাহ এযাবৎকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ধরে রাখতে যেখানে প্রয়োজন ৪ হাজার কিউসেক পানি, সেখানে এখন ব্যারাজ এলাকায় পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩ হাজার কিউসেক। গতকাল ব্যারাজ পয়েন্টে পানির প্রবাহ ছিল ২ হাজার ৮০০ কিউসেক। পাউবো কর্তারা বলছেন, পর্যাপ্ত পানির অভাবে তিস্তা ব্যারাজের সেচ কার্যক্রম ভেঙে পড়বে। তাই আসন্ন সেচ মৌসুমে তিস্তার পানির হিস্যা জরুরি হয়ে পড়েছে। আর এক মাস পরই সেচনির্ভর ইরি-বোরো ও রবি আবাদের কার্যক্রম শুরু হবে। কৃষকের মতে, বোরো রোপণ থেকে গাছের শীষ হেলে না পড়া পর্যন্ত সেচ প্রদানের মুখ্য সময়। সে পর্যন্ত বোরো আবাদের জন্য সেচ অত্যন্ত জরুরি। বিশেষ করে তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের সেচের আওতাভুক্ত এলাকার কৃষক তিস্তার সেচকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অর্থবহ বলে মনে করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ব্যারাজে প্রকৃতপক্ষে পানির প্রয়োজন প্রায় ২০ হাজার কিউসেক। তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পে কর্তব্যরত ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তিস্তা ব্যারাজের সেচের পানি দিয়ে আসন্ন সেচনির্ভর বোরো আবাদে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরের প্রায় ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে লালমনিরহাটে ২ হাজার ৩০০, নীলফামারীতে ২৫ হাজার ৫০০, দিনাজপুরে ২ হাজার ও রংপুরে ২৪ হাজার ৫০০ হেক্টর। সূত্রমতে, সেচ প্রকল্পের পানিসহ তিস্তাকে বাঁচিয়ে রাখতে ন্যূনতম পানির প্রয়োজন প্রায় ২০ হাজার কিউসেক। অভিন্ন তিস্তার উজানে বিজনবিভূই এলাকায় ভারত গজলডোবায় ব্যারাজ নির্মাণ করে ১৯৮৭ সাল থেকে তিস্তার পানি একতরফা প্রত্যাহার করে আসছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, তিস্তা সেচ প্রকল্পের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের সেচ কার্যক্রম চালাতে তিস্তায় পানির প্রয়োজন হবে শুষ্ক মৌমুমে প্রায় ২০ হাজার কিউসেক। কারণ, দ্বিতীয় পর্যায়ের সেচ ক্যানেল বগুড়া পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। কৃষি বিভাগের সূত্রমতে, আসন্ন মৌসুমে রংপুর বিভাগের আট জেলায় ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নেওয়া হয়েছে। এই পরিমাণ জমিতে বোরো আবাদে বিদ্যুৎ, ডিজেল ও পা-চালিত সেচযন্ত্র ব্যবহার করা হবে মোট ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৭৬১টি। এর মধ্যে ডিজেলচালিত গভীর নলকূপ রয়েছে ১৪৯টি, অগভীর নলকূপ ২ লাখ ৮৫ হাজার ৭০৪টি, পাওয়ার পাম্প ৮৪৩টি ও বিদ্যুত্চালিত ৫৬ হাজার ৩৮২টি সেচযন্ত্র এবং ২৭ হাজার ৬৮৩টি পা-চালিত সেচযন্ত্র।

সর্বশেষ খবর