শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন

প্যারিস চুক্তি ও তহবিল গঠন নিয়ে গতিহীন আলোচনা

নিজামুল হক বিপুল, মারাকাস, মরক্কো থেকে

সাহারা মরুভূমির দেশ মরক্কোর মারাকাসে আয়োজিত এবারের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২২) বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা চলছে ধীরগতিতে। বিশেষ করে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে রূপরেখা তৈরি এবং সবুজ জলবায়ু তহবিলকে সক্রিয় করা সংক্রান্ত আলোচনা গতি পাচ্ছে না।

গত ৭ নভেম্বর সম্মেলন শুরুর পর থেকে গতকাল পর্যন্ত বিভিন্ন সেমিনার ও সাইট ইভেন্টে যেসব বিষয় আলোচনায় উঠে এসেছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে গত বছর প্যারিস সম্মেলনে করা প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে রূপরেখা তৈরির বিষয় এবং সবুজ জলবায়ু তহবিলকে সক্রিয় করার বিষয়টি। তবে এ আলোচনা গতি পাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শুরুর পর এ দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনায় গতি তৈরি হবে। এদিকে গত চারদিন ধরে বাংলাদেশসহ এলডিসিভুক্ত দেশগুলো লস অ্যান্ড ড্যামেজ, বাস্তুচ্যুতি, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে নানা ধরনের যে ক্ষতি হচ্ছে সেগুলো মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতার দাবি জানিয়ে আসছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশসহ এলডিসিভুক্ত দেশগুলো তিন ধরনের সহযোগিতার দাবি জানিয়েছে। যেমন এক, শিল্পোন্নত দেশগুলো কার্ব নিঃসরণ কমানোর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তার বাস্তবায়ন; দুই, সবুজ জলবায়ু তহবিল থেকে সরাসরি ও সহজে অর্থপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা এবং তিন, প্রযুক্তি সহায়তা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা। সম্মেলনের তৃতীয় দিনে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকেলে ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বাস্তুচ্যুত মানুষের অধিকার’ বিষয়ক এক সেমিনারে বাংলাদেশের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদসহ বিদেশি বক্তারা মানুষের নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন। আলোচনায় অংশ নিয়ে সচিব বলেন, বাংলাদেশের ৩ দশমিক ৯ মিলিয়ন অর্থাৎ প্রায় চার কোটি মানুষ উপকূলে বসবাস করে, যা বিশ্বের ৮০টি দেশের জনসংখ্যার চেয়েও বেশি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে লবণ পানি উঠছে। উর্বর ও কৃষি জমিতে বালুর স্তর পড়ছে। ফলে কৃষি কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জীবন-জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে বিশ্ব ম্যানগ্রোব ফরেস্ট সুন্দরবন। এই ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ শুধুমাত্র বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল নয়। নিজস্ব তহবিল থেকেও বাংলাদেশ এই ক্ষতি মোকাবিলায় কাজ করছে এবং জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা ক্ষতিগ্রস্ত বিপন্ন মানুষকে সহায়তা দিতে কাজ করছে। আলোচনায় অংশ নিয়ে সাউথ এশিয়ার প্রধান কমলা ভাসিস্তা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার মানুষ একই নদীর তীরে বসবাস করে। একই নদীর পানি খায়। তাই এখানে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়লে এখানকার মানুষ আরেকখানে চলে যায়। তখন পুরো অঞ্চল এক ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়। ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাস্তুচ্যুতির চার ধরনের ঘটনা দক্ষিণ এশিয়ায় ঘটে’— উল্লেখ করে ভাসিস্তা বলেন, প্রথমত, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ নিজ এলাকায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যায়। দ্বিতীয়, গ্রাম থেকে শহরে যায়। তৃতীয়ত, সীমান্ত পেরিয়ে চলে যায় এবং চতুর্থত, দূর দেশে চলে যায়। এই চার ধরনের সমস্যা দিনে দিনে বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে এসব সমস্যা প্রতিনিয়ত মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর