বৃহস্পতিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে সড়ক দখল করে বাণিজ্য

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে সড়ক দখল করে বাণিজ্য

রাস্তার ওপর সবজির পসরা সাজিয়ে বসেছে ব্যবসায়ীরা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের কামাল বাজার এলাকা। নগরীর অন্যতম ব্যস্ত সড়কের এ এলাকায় যানজট যেন নিত্যসঙ্গী। দুই মিনিটের রাস্তা যেতে লাগে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট। কারণ দুই লেনের এ সড়কের একটি বন্ধ করে দিনের বেশির ভাগ সময় বসে ভাসমান দোকান এবং সিএনজি অটোরিকশার স্ট্যান্ড। সড়ক দখল করে অস্থায়ী দোকান বসায় এক লেন দিয়ে গাড়ি চলাচলের ফলে ওই এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। শুধু কামাল বাজার নয়, নগরীর কমপক্ষে দুই শতাধিক স্পটে সড়ক দখল করে চলছে ফুটপাথ বাণিজ্য। আর এসব স্পট ঘিরে চলে পুলিশ ও রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি। এসব ফুটপাথের অবৈধ বাণিজ্য এবং দখল-বেদখকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে গত কয়েক মাসে কয়েকবার সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সর্বশেষ গত ১ নভেম্বর আগ্রাবাদে ফুটপাথের চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ। এতে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মাসুদ উল হাসান বলেন, ‘সড়কে অবৈধভাবে বসা ভাসমান দোকানগুলো উচ্ছেদে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে নিয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ অবৈধ এসব দোকান থেকে চাঁদা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘পুলিশের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ পাওয়া গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চট্টগ্রাম নগরীর কেবল ফুটপাথ নয়, অনেক জায়গায় মূল সড়কের অর্ধেকের বেশি হকার ও ভাসমান দোকানদারের দখলে। এসব দোকানে মিলছে চা থেকে শুরু করে বিরানি। পুরনো মালামাল থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা ধরনের পণ্য মিলছে এখানে। সড়ক দখল করে চলেছে ফার্নিচার, ইট, বালু, রডের ব্যবসা। নগরীর নিউমার্কেট এলাকা, স্টেশন রোড, ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, চকবাজার, কাজীর দেউরি, দেওয়ানহাট মোড়, আগ্রাবাদ, আন্দরকিল্লা, নাসিরাবাদ, চকবাজার, শাহ আমানত সেতু, লালদীঘির দুই পাড়, জুবিলি রোড, বহদ্দারহাট মোড়, বন্দর ফকিরহাট, পতেঙ্গা, অক্সিজেন মোড়, কদমতলী, কোতোয়ালির মোড়, এ কে খান গেটসহ নগরীর কমপক্ষে দুই শতাধিক স্পটে সড়কের ওপর বসে অস্থায়ী কিংবা ভাসমান দোকান।

 সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, চট্টগ্রাম মহানগরীর ৫৫৫ কিলোমিটার পাকা সড়কের মধ্যে প্রায় ৪০০ কিলোমিটারের পাশে গড়ে উঠেছে অবৈধ ভ্রাম্যমাণ দোকান।

চট্টগ্রামের হকার্স সমিতিগুলোর দেওয়া তথ্যমতে-নগরীতে হকার্স রয়েছে কমপক্ষে ১৮ হাজার। যাদের বেশির ভাগই চট্টগ্রাম ফুটপাথ হকার্স সমিতি, চট্টগ্রাম নগর হকার্স সমিতিসহ আরও দুটি সংগঠনের আওতাভুক্ত। কিন্তু বাস্তবে চট্টগ্রাম নগরীতে হকার্স রয়েছে এর চেয়েও বেশি। মহসিন চৌধুরী নামে এক পথচারী বলেন, রাস্তা দখল করে দোকান বসার কারণে পথচারীদের চলাচলে খুবই কষ্ট হয়। এতে জনদুর্ভোগ বাড়ার পাশাপাশি প্রতিনিয়ত ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। জনদুর্ভোগ কমাতে অবৈধ এসব দোকান উচ্ছেদ জরুরি হয়ে পড়েছে। আন্দরকিল্লা এলাকার ফুটপাথের এক দোকানি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ফুটপাথে বসার জন্য প্রতিদিন পুলিশকে ১০০ এবং স্থানীয় বড় ভাইকে ৫০ টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে ব্যবসা করতে দেয় না। তাই বাধ্য হয়ে প্রতিদিন তাদের চাঁদা দিতে হয়।’ একইভাবে প্রতিদিন পুলিশ, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং সমিতিকে চাঁদা দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন নিউমার্কেট, ষোলশহর ২ নম্বর গেট এবং আগ্রাবাদ এলাকার একাধিক ভ্রাম্যমাণ দোকানদার।

সর্বশেষ খবর