শিরোনাম
সোমবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, কমছে রাজস্ব

রুহুল আমিন রাসেল

প্রবৃদ্ধি বাড়ছে, কমছে রাজস্ব

দেশের রাজনীতিতে অনুকূল পরিবেশ থাকায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থনীতির আকার বেড়েছে। তারই ধারাবাহিক প্রতিফলন মিলছে মোট দেশজ উৎপাদন-জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে। ফলে গত তিন অর্থবছরেই প্রবৃদ্ধি বেড়ে এখন ৭ দশমিক ১১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। তবে এই প্রবৃদ্ধির সুফল রাজস্ব আয়ে নেই। যেখানে প্রবৃদ্ধির সঙ্গে রাজস্ব আয় বাড়ার কথা, সেখানে উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে সরকারি পরিসংখ্যানে। গত তিন অর্থবছরেই রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত ৯ দশমিক ৭৪ থেকে কমে ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশে নেমেছে। দেশের রাজস্ব আয়ের একটা বড় অংশ আসে বেসরকারি খাত বা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। তাদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, দেশের জনগণ বেড়েছে, কিন্তু যারা রাজস্ব দেয়, তাদের সংখ্যা বাড়েনি।         একই  সঙ্গে দেশে বড় বিনিয়োগ না হলে রাজস্ব     জিডিপি অনুপাতও বাড়বে না। তাই প্রবৃদ্ধির প্রত্যাশিত প্রতিফলন রাজস্ব আয়ে নেই। এজন্য রাজস্ব প্রশাসনের সজাগ হওয়া জরুরি।

যদিও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বাজেট ঘোষণা অনুযায়ী, রাজস্ব জিডিপি অনুপাত ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১৫ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত করতে চায় সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয় প্রকাশিত অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০১৬’-এর প্রতিবেদনের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১২-১৩ অর্থবছরে রাজস্ব জিডিপি ছিল ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে তা কমে ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশে নেমেছে। একইভাবে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রাজস্ব জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ ও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৯ দশমিক ২৮ শতাংশে নেমেছে। অন্যদিকে সন্ত্রাসকবলিত পাকিস্তান, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার রাজস্ব আয়ও বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। দক্ষিণ এশিয়ার ৮ দেশের মধ্যে রাজস্ব আয়ে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। আর সবার নিচে অষ্টমে আফগানিস্তান। তবে এই দেশগুলোর মধ্যে রাজস্ব আয়ে শীর্ষ স্থানে রয়েছে নেপাল। পর্যটননির্ভর নেপালের জিডিপি প্রবৃদ্ধি যেখানে ৫ দশমিক ১ শতাংশ, সেখানে তাদের রাজস্ব জিডিপি অনুপাত ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ। আর বাংলাদেশের ৭ দশমিক ১১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি থাকা সত্ত্বেও যেখানে রাজস্ব জিডিপি মাত্র ৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ। তবে এক দশমিক ২৭ শতাংশ কর-বহির্ভূত রাজস্বসহ দেশের মোট রাজস্ব জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি যে হারে প্রতিবছর বাড়ছে, সে হারে রাজস্ব আয় বাড়ছে না। আমরা দেখছি, কয়েক বছর যাবৎ ধারাবাহিকভাবে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। কিন্তু কমছে কর-জিডিপি অনুপাত। অথচ জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর-জিডিপি অনুপাতও বাড়বে, এটাই প্রত্যাশিত। তার মতে, প্রবৃদ্ধির প্রকৃত সুফল রাজস্ব আয়ে নেই। তাই রাজস্ব প্রশাসনের দক্ষতা বাড়িয়ে কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। প্রসঙ্গত, আয়কর, মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট এবং আমদানি শুল্কের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড রাজস্ব আদায় করে। এর বাইরে কর-বহির্ভূত রাজস্ব আদায় করে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এনবিআরের কাঁধে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা আছে। আর বাকি রাজস্ব আসবে এনবিআর বহির্ভূত খাত থেকে। এনবিআর বা কর-বহির্ভূত রাজস্ব আয় মিলিয়ে নতুন অর্থবছরে মোট ২ লাখ ৪২ হাজার ৭৫২ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। যা মোট দেশজ উৎপাদন প্রবৃদ্ধি-জিডিপির ১২ দশমিক ৪ শতাংশ। এনবিআরের সর্বশেষ তথ্যনুযায়ী, গত ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের মোট ইলেক্টনিক করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর বা ই-টিআইএনধারী হলেন, প্রায় ২৩ লাখ ১৫ হাজার করদাতা। এনবিআরের টার্গেট, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নতুন তিন লাখ করদাতা তৈরির।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর