মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগ বনাম বিদ্রোহীরা

জেলা পরিষদের প্রতীক বরাদ্দ, আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু, মন্ত্রী-এমপিদের বড় অংশই মনোনয়নবঞ্চিতদের পক্ষে

গোলাম রাব্বানী

আওয়ামী লীগ বনাম বিদ্রোহীরা

জেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের মধ্যে গতকাল প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার। আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় অংশ নেবেন প্রার্থীরা। ইতিমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ২২ জন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বাকি ৩৯ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন ১২৪ জন। এরমধ্যে ৩০ জেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর বাইরেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। নেতারা মনে করছেন—যারা দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন মূলত তারাই বিদ্রোহী হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন। আর মন্ত্রী-এমপিদের বড় অংশ জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। অনেক জেলায় এসব বঞ্চিত নেতাদের বেশি জনপ্রিয়তা রয়েছে বলে জানা গেছে। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন— জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চূড়ান্ত লড়াই হবে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী বনাম দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে। এ ছাড়া কিছু জেলায় অন্য দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীও মাঠে রয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, নির্দলীয় এ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণায় ঘরোয়া সভা ছাড়া, পথসভা, জনসভা ও শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গতকাল প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান পদে ইসির সংরক্ষিত যে ১২টি প্রতীক রয়েছে তা হলো—আনারস, কাপ-পিরিচ, ঘোড়া, চশমা, চিংড়ি মাছ, জিপ গাড়ি, টেবিল ফ্যান, তালগাছ, প্রজাপতি, মোটরসাইকেল, মোবাইল ফোন ও হেলিকপ্টার। সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য পদে ১০ প্রতীক হলো—কম্পিউটার, টেবিল ঘড়ি, টেলিফোন, ডিস অ্যান্টেনা, দোয়াত কলম, ফুটবল, বই, মাইক, লাটিম ও হরিণ। সাধারণ সদস্য পদে ১২ প্রতীক হলো—অটোরিকশা, উটপাখি, ক্রিকেট ব্যাট, ঘুড়ি, টিউবওয়েল, টিফিন ক্যারিয়ার, ঢোল, তালা, বক, বেহালা, বৈদ্যুতিক পাখা ও হাতি। রবিবার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের নাম ঘোষণা করেছেন বলে জানান নির্বাচন কমিশনের উপসচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান। তিনি জানান, তিন পার্বত্য জেলা বাদে বাকি ৬১ জেলায় প্রার্থী রয়েছেন ১৪৬ জন। এরমধ্যে ২২ জেলায় চেয়ারম্যান বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। আদালতের কোনো নির্দেশনা থাকলে সে বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। বাকি ৩৯ জেলায় চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন ১২৪ জন। নির্দলীয় এ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীরা ২২ জেলায় বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হয়েছেন। আরও কয়েকটি জেলায় আদালতের আদেশে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় একাধিক প্রার্থী যোগ হয়েছে। এদিকে সাধারণ সদস্য পদে ২৯৮৫ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৮০৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে। সাধারণ সদস্য ১৩৯ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৫৩ জন বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এই নির্বাচনে সরাসরি ভোট হবে না। জেলাগুলোতে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ভোট দিয়ে নিজ নিজ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য (সাধারণ ও সংরক্ষিত) নির্বাচন করবেন। প্রতিটি জেলায় ১৫ জন সাধারণ ও পাঁচজন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য থাকবেন। জেলা ও উপজেলায় স্থাপিত ভোটকেন্দ্রে ভোট চলবে ২৮ ডিসেম্বর সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত। প্রত্যেক জেলার অন্তর্ভুক্ত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র ও কাউন্সিলর, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর এবং ইউপির চেয়ারম্যান ও সদস্য জেলার পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার হবেন। জেলা পরিষদে মোট ভোটার রয়েছেন ৬৩ হাজার ১৪৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৪৮ হাজার ৩৪৩ ও নারী ১৪ হাজার ৮০০ জন।

লড়াই হবে আওয়ামী লীগ বনাম বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ : গাইবান্ধায় লড়াই হবে দলীয় সমর্থন পাওয়া জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ শামস উল আলম হিরুর সঙ্গে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মোজাম্মেল হক মণ্ডল, জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা খাদেমুল ইসলাম খুদি, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আমিনুল ইসলাম দুদু ও আতাউর রহমানের সঙ্গে। জামালপুরে ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে দল সমর্থিত প্রার্থী এইচ আর জাহিদ আনোয়ার, বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ চৌধুরী, সহসভাপতি সোহরাব হোসেন বাবুল, যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট সরওয়ার জাহান, ফারুক আহমেদ চৌধুরীর সহধর্মিণী আঞ্জুমান আরা বেগম ও জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) প্রার্থী অ্যাডভোকেট বাবর আলী। শেরপুর জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক মেয়র হুমায়ুন কবির রুমানের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। লালমনিরহাটে জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমানের সঙ্গে দলের বিদ্রোহীরা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম পাটোয়ারী ভোলা ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থ বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব।

জামালপুর : জেলা পরিষদ নির্বাচনে গতকাল জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ছয়জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করে জেলা রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক মো. শাহাবুদ্দিন খান। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট এইচ আর জাহিদ আনোয়ার পেয়েছেন ঘোড়া, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদ চৌধুরী পেয়েছেন আনারস, সহসভাপতি সোহরাব হোসেন বাবুল পেয়েছেন জিপগাড়ি, যুগ্ম সম্পাদক সরওয়ার জাহান পেয়েছেন চশমা, আনজুমান আরা পেয়েছেন কাপ-পিরিচ ও জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) প্রার্থী অ্যাডভোকেট বাবর আলী পেয়েছেন মোটরসাইকেল।

খুলনা : জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতীক বরাদ্দের পরই প্রার্থীরা নেমেছেন প্রচারণায়। পাশাপাশি সামাজিক গণমাধ্যমে চলছে প্রার্থীর পক্ষে জনমত তৈরির কাজ। জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, দলের মনোনীত প্রার্থীর বাইরে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী ও মনোনায়নপত্র প্রত্যাহার নিয়ে হামলা-মামলার কারণে শুরু থেকেই এই নির্বাচন ছিল আলোচনায়। এ ছাড়া মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপি এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার ছেলে প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনে পেয়েছে বাড়তি আমেজ। এ ছাড়া চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ আনারস প্রতীক, অজয় সরকার চিংড়ি মাছ ও শেখ আকবর আলী কাপ-পিরিচ প্রতীক পেয়েছেন।

প্রতীক বরাদ্দের পরপরই তারা নিজ এলাকায় প্রচারণায় নেমেছেন বলে জানা গেছে।

সিলেট : জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেন। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী অ্যাডভোকেট লুত্ফুর রহমান আনারস, স্বতন্ত্র প্রার্থী অধ্যক্ষ ড. এনামুল হক সরদার কাপ-পিরিচ, জিয়া উদ্দিন লালা ঘোড়া ও ফখরুল ইসলাম মোটরসাইকেল প্রতীক পেয়েছেন।

এ ছাড়া ১৫টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১১০ জন পুরুষ ও ৫টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ২৮ জন নারী সদস্য প্রার্থীর মধ্যেও প্রতীক বরাদ্দ দেন নির্বাচন কর্মকর্তা।

বরিশাল : জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. মইদুল ইসলাম পেয়েছেন আনারস প্রতীক। অপরদিকে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী সদ্য সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক কৃষক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি খান আলতাফ হোসেন ভুলু পেয়েছেন ঘোড়া প্রতীক।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর