বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

লাগামহীন খেলাপি ঋণ

বাংলাদেশ ব্যাংকের সব উদ্যোগ ব্যর্থ

আলী রিয়াজ

নানামুখী উদ্যোগ, নির্দেশনা দিয়েও খেলাপি ঋণের লাগাম টানতে পারছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ। রাষ্ট্রায়ত্ত, বেসরকারি খাতের সব ব্যাংকেই খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত নিয়মিত খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬৬ হাজার কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরের তুলনায় ১১ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধিতে ব্যাংক খাতে প্রভিশন ঘাটতিও কিছুটা বেড়েছে। ইতিমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত তিন ব্যাংকেই নতুন এমডি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও ব্যাংকের খেলাপি পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। জানা গেছে, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণ ও জালিয়াতির মাধ্যমে নেওয়া ঋণের পরিমাণ চিহ্নিত করতে সারা দেশে অভিযান শুরু করেছে। ব্যাংকগুলোর সরবরাহ করা তথ্য বিশ্লেষণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মোট খেলাপি ঋণের যে চিত্র পেয়েছে তাতে বিতরণ করা ঋণের বেশ অমিল রয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে শত শত কোটি টাকা জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করার প্রমাণও রয়েছে। এসব জালিয়াতি ঋণের পরিমাণ নির্ণয় ও মোট খেলাপি আদায় করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অভিযানে নেমেছে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, খেলাপি ঋণ বেশি হলে ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে সুদের হারও বাড়ে। বাংলাদেশে আমানতের সুদের হার কমিয়ে এসব সমন্বয় করা হচ্ছে। খেলাপিদের বিভিন্ন সুবিধা দেওয়ার ফলে ভালো গ্রাহকদের কাছে খারাপ সংকেত যাচ্ছে। এটা বন্ধ করতে হলে একটি বড় ধরনের অভিযান প্রয়োজন। রাইটঅফ করা ঋণ সম্পর্কে খোঁজ নিলেই জানা যাবে প্রকৃত পরিস্থিতি কত খারাপ। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে খেলাপি ঋণ আদায় করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, নভেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো প্রায় সাড়ে ছয় লাখ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। এ সময়ে খেলাপি হওয়া প্রায় ৬৬ হাজার কোটি টাকা মোট ঋণের ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এর মধ্যে গত তিন মাসে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়ে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। তিন মাস আগে এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ছিল ২৫ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। রাষ্ট্রীয় ছয় বাণিজ্যিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা হয়েছে। এর মধ্যে বিশেষায়িত দুই ব্যাংকেরই খেলাপি পাঁচ হাজার ৮২৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ রয়েছে। আর বিদেশি ব্যাংকগুলোতে দুই হাজার ২৭০ কোটি টাকা খেলাপি। এই সময় সোনালী ও জনতা ব্যাংকের ঋণ আদায় পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এ কারণে সরকারি ছয় ব্যাংকের খেলাপি ঋণ গত তিন মাসের তুলনায় কমেছে। তবে মোট হিসাবে (নিয়মিত খেলাপি ও রাইটঅফ) এখনো ছয় সরকারি ব্যাংকের পরিস্থিতি ভয়াবহ। সোনালী ব্যাংকে এখনো খেলাপির পরিমাণ সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার বেশি। জনতা ব্যাংকের খেলাপি প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। অগ্রণী ব্যাংকে খেলাপি আদায়ে অবনতি হয়েছে। কিছুতেই ব্যাংকটি খেলাপিদের কাছ থেকে আদায় করতে পারছে না। ফলে চলতি বছরের প্রতি মাসেই ব্যাংকটির খেলাপির পরিমাণ বেড়েছে। সর্বশেষ প্রতিষ্ঠানটির খেলাপির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। চার মাস আগেও যা পাঁচ হাজার কোটি টাকার নিচে ছিল। বেসিক ব্যাংকেও খেলাপি ঋণ বেড়েছে। রূপালী ব্যাংক তিন মাস ধরে খেলাপি ঋণ আদায় করার বিশেষ অভিযান শুরু করেছে। তবে তাদের অভিযানের পরও খেলাপি ঋণ আদায়ের পরিবর্তে বেড়েছে। ব্যাংকটিতে খেলাপির পরিমাণ তিন হাজার ৪০০ কোটি টাকার বেশি। বিডিবিএলে খেলাপির পরিমাণ প্রায় ৯০০ কোটি টাকা হয়েছে। জানতে চাইলে রূপালী ব্যাংকের এমডি আতাউর রহমান প্রধান বলেন, অনলাইন প্রযুক্তির কারণে সব শাখার ঋণ তথ্য যোগ হয়েছে। গত কয়েক মাসে দেশের সব শাখার পুরো ঋণ, আদায় তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। ফলে রিয়েল চিত্রটা উঠে এসেছে। এর ফলে মনে হয়েছে খেলাপি বাড়ছে। তবে আমরা অনেক আদায়ও করেছি। এখনো আমরা গুরুত্ব দিয়ে সব কর্মকর্তাকে মাঠে রেখেছি খেলাপি ঋণ আদায় করতে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর