রবিবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
বিশ্বসেরা শিক্ষক বগুড়ার শাহনাজ

যিনি বিনা বেতনে শিক্ষা দেন দরিদ্র শিশুদের

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

যিনি বিনা বেতনে শিক্ষা দেন দরিদ্র শিশুদের

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শিক্ষক শাহনাজ পারভীন। সদর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। অবসর সময়ে আরেকটি স্কুল করে বিনা বেতনে সুশিক্ষিত করছেন দরিদ্র শিশুদের। শিক্ষকতার পেশায় অনবদ্য ভূমিকা রাখার পাশাপাশি শিশুদের শিক্ষা অর্জনে বিশেষ অবদান রাখায় বিশ্বসেরা শিক্ষক-২০১৭ (গ্লোবাল টিচার প্রাইজ) পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন শাহনাজ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লন্ডনভিত্তিক ভারকি ফাউন্ডেশন বিশ্বের ১৭৯টি দেশ থেকে বিশ হাজার আবেদনকারীর মধ্যে থেকে ৫০ জনের তালিকা করে। তারা প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে গ্লোবাল টিচার পুরস্কারের জন্য শিক্ষক শাহনাজ পারভীনকে মনোনীত করেছে। সমাজে শিক্ষকের ভূমিকার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় স্বীকৃতি দিতেই সংস্থাটির পক্ষ থেকে তৃতীয়বারের মতো এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। আগামী বছরের ১৯ মার্চ দুবাইয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। একই সঙ্গে বিজয়ীদের দেওয়া হবে অর্থ পুরস্কার ১০ লাখ মার্কিন ডলার। শাহনাজ পারভীন ২০১৩ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে পুরস্কার পান। শিক্ষকতার পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী শিশুদের নিয়ে শেরপুর পৌর শহরের শান্তিনগরস্থ শেরপুর শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তুলেছেন শাহনাজ পারভীন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পারিবারিক ও আর্থিক সমস্যার কারণে অনেক শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ে। সেসব শিশুর মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন শাহনাজ। সমাজের পিছিয়ে পড়া শিশুদের বিনা বেতনে শিক্ষা প্রদান করেন শাহনাজ পারভীন। ২০১৩ সালে তিনি স্বল্প পরিসরে এ কাজ শুরু করেন। স্বামীর সাহায্য নিয়ে ২০১৫ সালে বাড়ির পাশে অন্য একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলেন কর্মজীবী শিশুদের জন্য শেরপুর শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রতিদিন বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে এই স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম। বর্তমানে এই স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষার্থীরা সবাই কর্মজীবী। কেউ বাসার কাজের মেয়ে, কেউ দোকানের কর্মচারী। এসব শিক্ষার্থীর পোশাক, বই, খাতা-কলম সবকিছুই কিনে দেন শাহনাজ। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থী বেশি হওয়ায় নিজ খরচে দুজন শিক্ষকও নিয়োগ দিয়ে নিয়মিত তাদের বেতন-ভাতাও দিয়ে যাচ্ছেন। গ্লোবাল টিচার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হওয়ায় খুবই খুশি ও আনন্দিত বলে মন্তব্য করে শাহনাজ পারভীন বলেন, চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে দেশ ও জাতির মুখ উজ্জ্বল করতে সবার দোয়া চাই। শাহনাজ পারভীন ১৯৭৬ সালে বগুড়া জেলার শাহজাহানপুর উপজেলার দাঁড়িগাছা গ্রামে এক শিক্ষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম মানিক উল্লাহ ও মাতা মিসেস নূরজাহান বেগম পেশায় শিক্ষক। মায়ের কর্মস্থল শেরপুর পৌরশহরের উলিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৫ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তিলাভ করেন। ১৯৯২ সালে শেরপুর শহীদিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করেন। এরপর বগুড়া সরকারি আযিযুল হক বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষকতা পেশায় যোগদানের পর তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখে চলেছেন। শাহনাজ পারভীনের সংসার জীবনে দুই মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ে মাসুমা মরিয়ম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। ছোট মেয়ে আমেনা মুমতারিন শ্রেয়া বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। স্বামী মোহাম্মাদ আলী শেরপুর শহীদিয়া আলিয়া মাদ্রাসায় আরবি প্রভাষক হিসেবে কর্মরত।

সর্বশেষ খবর