সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

বড় ধাক্কা খেল বিএনপি

মাহমুদ আজহার

বড় ধাক্কা খেল বিএনপি

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের ফলাফলে বড় ‘ধাক্কা’ খেয়েছে বিএনপি। নিজেদের আত্মবিশ্বাসে চির ধরেছে। নাসিকের সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশে চরম আশাবাদী হয়ে উঠেছিল দলটি। কিন্তু বিশাল ব্যবধানে পরাজয়ে হতাশায় আচ্ছন্ন নেতা-কর্মীরা। দীর্ঘ ৯ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি ভেবেছিল, জনসমর্থন আগের মতোই আছে। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তের এ ফলাফলে হোঁচট খেয়েছে। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এখন নতুন ভাবনায় দলটির নীতি-নির্ধারকরা। দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়াও আশাহত হয়েছেন। তবে নাসিক নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে দলীয়ভাবে তদন্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে দলের কেউ কোনো ‘আঁতাতে’ জড়িত কি না—তাও তদন্ত করতে বলা হয়েছে। দলীয় সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানায়।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে সুষ্ঠু পরিবেশ ছিল। এ নিয়ে আমাদের তেমন কোনো প্রশ্ন নেই। তবে ফলাফলটাকে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। কারণ, আমি নিজেও দলীয় প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ করেছি। সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। মানুষের মধ্যে সরকারবিরোধী মনোভাব ছিল তীব্র। কিন্তু যে ফলাফল হয়েছে, তা অপ্রত্যাশিত ও অকল্পনীয়। তারপরও আমরা গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।’ বিএনপির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানান, নাসিক নির্বাচন যাই হোক, এটা দলের জন্য বড় একটি শিক্ষা। এত প্রচারণা ও শান্তিপূর্ণ ভোটের পর বড় ব্যবধানে পরাজয়—সবকিছু থেকেই আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। বিগত কয়েক বছরে আমরা সহিংসতার নির্বাচনও দেখেছি। এখন আমরা শান্তিপূর্ণ ভোটও দেখলাম। প্রতিটি নির্বাচনই বিশ্লেষণের সুযোগ এসেছে। সরকার যদি কোনো কৌশলে ফলাফল পাল্টেও থাকে, তার প্রতিরোধে আমরা সামনের নির্বাচনে কি করতে পারি, তাও আমরা ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে পারি। আমরা সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করতে পারলে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হবে। এতে দলেরই ভালো হবে। সূত্রমতে, নাসিক নির্বাচনের এমন ফলাফলে প্রস্তুত ছিলেন না খোদ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও। তবে তিনি যতটা না ফলাফলে অখুশি হয়েছেন, তার চেয়ে ওই এলাকার বিএনপি নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাদের ভূমিকা কী ছিল, তা নিয়ে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করারও নির্দেশ দিয়েছেন। কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলেছেন। একই সঙ্গে নির্বাচনের ফলাফলে সরকার কোনো অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল কি না, সে ব্যাপারে দলীয়ভাবে তদন্ত করার কথাও সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছেন। দু-একদিনের মধ্যেই তদন্তের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হবে। তবে কারচুপির বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ সংগ্রহ কঠিন হবে বলেও সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান। জানা যায়, নাসিক নির্বাচনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রাথমিকভাবে নাসিকের তিন থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন। এরপর ওয়ার্ডভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গেও কথা বলবেন। প্রয়োজনবোধে ১৭৪টি ভোটকেন্দ্রে দলীয় প্রায় ১৩শ’ এজেন্টের মতামতও নিতে পারেন। তাদের সবার মতামতের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন তৈরি করবেন। এরপর জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে কথা বলবেন। চূড়ান্তভাবে কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেও বৈঠক করবেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এরই আলোকে নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ প্রসঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আমি যেহেতু সমন্বয়কের দায়িত্বে ছিলাম, তাই দায়-দায়িত্ব আমারও কিছু আছে। আমি নির্বাচনে দলের মাঠপর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সবার সঙ্গেই কথা বলার চেষ্টা করছি। এসব মতামত ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) কাছে তুলে ধরব। নির্বাচনের ফলাফলে কোনো ত্রুটি আছে কি না, তার সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ তো এখন আমাদের হাতে নেই। যাই হোক, পরবর্তী নির্বাচনগুলোর স্বার্থেই সঠিক অবস্থাটা আমাদের জানা উচিত।’ নারায়ণগঞ্জ বিএনপির প্রভাবশালী নেতা অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, ‘নির্বাচনী প্রার্থী বাছাই থেকে শুরু করে ভোটের ফলাফল পর্যন্ত আমাদের সব কিছুরই তদন্ত হওয়া উচিত। আমাদের কারও কোনো ভূমিকাও যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকে, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সঙ্গে আমারও কথা হয়েছে। তদন্তে সব ধরনের সহায়তা করতে আমি প্রস্তুত আছি।’ গত শনিবার রাতে বিএনপির কয়েকজন সিনিয়র নেতা বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় বেগম জিয়া নেতাদের বলেন, জেলাগুলোর আগে মহানগরের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। বিশেষ করে যেসব সিটিতে সামনে নির্বাচন রয়েছে, সেসব মহানগরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে হবে। ওয়ার্ড, থানা ও মহানগরের কমিটি থাকতে হবে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, দেশ-বিদেশের চোখ ছিল নাসিক নির্বাচনে। দৃশ্যমান ‘নজিরবিহীন শান্তিপূর্ণ’ ভোটও সবাই দেখেছে। এর একটা প্রভাব পড়বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও। বিশেষ করে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে যে পক্ষপাতমূলকের ‘তকমা’ ছিল, তা নিয়ে বিএনপির কথা বলার সুযোগ কমে গেছে। তাই এ নির্বাচনের ভুলত্রুটি থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথাও ভাবছেন তারা। জাতীয় নির্বাচনেও সরকার কোনো ধরনের অপকৌশলের আশ্রয় নেয় কি না—সে ব্যাপারে এখন থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যদি সরকারকে জনগণ ভোট দিয়েই থাকে, তাহলে ভয়ের কী? প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরপেক্ষ করে দিয়ে একটি তত্ত্বাবধায়ক বা নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার গঠন করুন। এখনই নির্বাচন দিন। যারা জিতবে, তারা দেশ পরিচালনা করবে। এটা তো সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় সুযোগ।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর