শিরোনাম
বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা

আফ্রিকান বাঘিনীর প্রেমে মাতোয়ারা বাঘ

মোস্তফা কাজল, চট্টগ্রাম থেকে ফিরে

আফ্রিকান বাঘিনীর প্রেমে মাতোয়ারা বাঘ

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় নতুন অতিথি আফ্রিকান বাঘিনীর প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে বাঘ। এ দুই আফ্রিকান বাঘ-বাঘিনী আমদানি করে আনা হয়েছে। নতুন অতিথি দেখতে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতো। ফলে বাঘ-বাঘিনী দেখতে কৌতূহলী মানুষের ভিড় দিন দিন বাড়ছে ফয়’স লেকের চিড়িয়াখানায়। ১৫ দিন আগে নতুন বাঘ দুটিকে আফ্রিকা থেকে আনা হয়। চিড়িয়াখানায় বাক্সবন্দী বাঘ দুটিকে প্রথমে ছোট্ট একটি লোহার খাঁচায় একসঙ্গে রাখা হয়। প্রথম দেখাতে দুই প্রাণীর মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে। ধীরে ধীরে খাঁচার মধ্যে একে অপরের কাছে ঘেঁষতে শুরু করে। খাওয়া দিলে দু’জনে একসঙ্গে খায়। গতকাল অতিথি দুই বাঘের কোয়ারাইনটাইন সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় বাঘ-বাঘিনী জুটিদের দর্শকদের প্রদর্শনের জন্য বড় খাঁচায় আবারও একসঙ্গে উন্মুক্ত করা হয়। গত বৃহস্পতিবার সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাঘের খাঁচায় দুটি ছোট আকারের দেশি মুরগি ছেমড় দেওয়া হয়েছে। মুরগি দেখে শুরু হয় বাঘ-বাঘিনী ছোটাছুটি। একপর্যায়ে একটি মুরগি শিকার করে বাঘ। পরে দুজনে ভাগাভাগি করে খেয়ে নেয়। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এবং চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নতুন দুই বাঘ ভালোই আছে। তারা একে অপরের সঙ্গে ভাব জমিয়ে ফেলেছে। এ ছাড়া শিগগিরই মৌলভীবাজার জেলা থেকে হনুমানসহ বেশকিছু পশু-পাখি আনা হবে চিড়িয়াখানায়। ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন করে পাখিদের অভয়ারণ্য করার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। আগামীতে চিতাবাঘ আনার চেষ্টা করা হবে। বাণিজ্যিকভাবে বাঘ প্রতিপালন ও প্রজননের অনুমতি আছে দক্ষিণ আফ্রিকার। সারা বিশ্বে বাঘ রপ্তানি করার জন্য আফ্রিকা সক্ষমতা অর্জন করেছে। আমাদের  দেশে বাঘের কৃত্রিম প্রজনন বা বাণিজ্যিকভাবে লালন-পালনের অনুমোদন বা দক্ষতা কোনোটাই নেই। চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর ডা. মঞ্জুর  মোর্শেদ  চৌধুরী বলেন, আমরা ১১ মাস বয়সী রয়েল বেঙ্গল টাইগার এনেছি। আর বাঘিনীর বয়স ৯ মাস। বাঘ দুটির ওজন ৩৮০ কেজি। দুটি বাঘের শারীরিক অবস্থা বেশ ভালো। এগুলোর গড় আয়ু ১৪-১৫ বছর। তবে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ভীম নামের একটি বাঘ ২৩ বছর বেঁচে ছিল। আমাদের সুন্দরবনে বাঘ আছে। কিন্তু সুন্দরবন থেকে বাঘ ধরা অসম্ভব। অন্য কোনো চিড়িয়াখানা থেকেও সংগ্রহ করা যায়নি। তাই দরপত্রের মাধ্যমে চার বছর বাঘশূন্য থাকা চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার জন্য বাঘ আমদানি করতে হয়েছে। বাঘগুলো চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া বাবদ ৩৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ১৫ দিন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে থাকবে বাঘগুলো। যদি টিকে যায় তবে তাদের টাকা পরিশোধ করা হবে। গতকাল সেই সময় অতিক্রম করেছে। বাঘ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ফ্যালকন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. সোহেল আহমেদ বলেন, গতকাল দুপুরে ২টি মুরগি ও ৪ কেজি গরুর মাংস  দেওয়া হয়েছে। তবে চাহিদা বেড়ে গেলে খাবারের পরিমাণও বাড়ানো হবে। মূলত শিশুদের চাহিদা পূরণ করতেই বাঘ আমদানি করা হয়েছে। চিড়িয়াখানা সূত্র জানায়, ১৯৮৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় ২০০৩ সালে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে দুটি বাঘ আনা হয়েছিল। ২০০৬ সালেও চন্দ্র নামে একটি বাঘ মারা যায়। ২০০৯ সালে তার সঙ্গী পূর্ণিমার ক্যান্সার ধরা পড়ে। ২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর পূর্ণিমাও মারা যায়। এরপর  থেকে গত চার বছর বাঘশূন্য অবস্থায় আছে চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা। পূর্ণিমার ক্যান্সার ধরা পড়ার পর বাঘ ও বাঘিনী চেয়ে ঢাকা চিড়িয়াখানা ও ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাড়া মেলেনি। এরপর মন্ত্রণালয়েও বেশ কয়েকবার চিঠি দেওয়া হয়েছিল। বারবার চিঠি লিখে সাড়া না মেলায় চলতি বছরের ২৫ জুন চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানার নির্বাহী কমিটির সভায় প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে নিজেরাই বাঘ কেনার সিদ্ধান্ত  নেওয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাবার পর দক্ষিণ আফ্রিকা  থেকে দুটি বাঘ কেনার জন্য চলতি বছরের ১৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। চারটি প্রতিষ্ঠান বাঘ আমদানির আগ্রহ প্রকাশ করে দরপত্রে অংশ নেয়। সর্বনিম্ন ৩৩ লাখ টাকায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর বন্যপ্রাণী আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ফেলকন ট্রেডার্সকে কার্যাদেশ দেয় চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় বর্তমানে ৬৭ প্রজাতির ৩০৭টি প্রাণী ও পাখি আছে। প্রাণীর মধ্যে দুটি সিংহ, দুটি পুরুষ ভাল্লুক, ১৯টি কুমির ছানা, তিনটি কুমির, নয়টি চিত্রা হরিণ, পাঁচটি মায়া হরিণ, ৪টি উল্টোলেজি বানর, উল্লুক একটি, হনুমান একটি এবং চিতা বিড়াল ৪টি রয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর