দেশের মাটিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ভিয়েতনামের নারকেল চাষ। এ লক্ষ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বেশকিছু পদক্ষেপও গ্রহণ করেছে। যার আওতায় এরই মধ্যে পাহাড়ি ও উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ নারকেলের এক লাখ ৮০ হাজার চারা বিতরণ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে, নারকেল অর্থকরি ফসল হিসেবে পরিচিত। পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এ ফল এবং গাছ দুটোই নাগরিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। ফলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ভিয়েতনামি নারকেল চাষ প্রকল্প হাতে নেয়। এই প্রকল্পের আওতায় পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ দেশি ফল চাষের পাশাপাশি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে ভিয়েতনামি নারকেল চাষ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্যোগে ২০১৫ সালের জুলাই থেকে এ প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয়। পরে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের লক্ষ্যে পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। সূত্র মতে, দেশি নারকেল গাছে ফলন আসতে ৯-১০ বছর লেগে যায়। ফলনও হয় কম। আবার গাছ বেশি বড় হলে ঝড়ে ভেঙে যায়। অন্য দিকে ভিয়েতনামের নারকেল চারা রোপণের আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্যে গাছে নারকেল ধরে। একটি গাছে বছরে ১৫০টিরও বেশি নারকেল পাওয়া যায়। এ গাছ বেশি উঁচুও হয় না। তিন থেকে চার ফুটের মধ্যেই উচ্চতা সীমাবদ্ধ থাকে। সূত্র জানায়, ভিয়েনামে দুই ধরনের নারকেলের জাত রয়েছে। যেমন সিয়ামগ্রিন কোকোনাট ও সিয়াসব্লু কোকোনাট। শেষোক্ত জাতটি ২০০৫ সালে উদ্ভাবন করা হয়। এটিই বাংলাদেশি কৃষকের কাছে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ভিয়েতনামি নারকেল চাষ সম্পর্কে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান মজুমদার সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা এক-একটি উপজেলায় ৬০০ চারা বিতরণ করেছি। এর মধ্যে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী নিয়েছেন ২০০টি চারা গাছ।’ কক্সবাজার হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক শৈবাল নন্দী মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি বিতরণের জন্য আট হাজার চারা এনেছি। এর মধ্যে সাড়ে ছয় হাজার চারা বিতরণ করা হয়েছে।’ পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের ঊর্ধ্বতন উদ্যান তথ্যবিদ শহিদুল ইসলাম জানান, এ কেন্দ্র থেকে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে এরই মধ্যে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে এক লাখ ৮০ হাজার চারা বিতরণ করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক মেহেদি মাসুদ বলেন, ‘ভিয়েতনামের আবহাওয়ার সঙ্গে মিল থাকায় ভিয়েতনামের নারকেল চাষে আমাদের দেশে বিপুল সম্ভবনা রয়েছে। এ ছাড়াও এ নারকেল গাছ আকারে ছোট হওয়ায় ভেঙে পড়ার ভয় থাকে না এবং মাত্র আড়াই থেকে তিন বছরের মধ্যে অধিক ফলন দেয়। পাঁচ বছরমেয়াদি এ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের উপকূলীয় এলাকায় ৩০ কোটি নারকেল চারা রোপণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে আমরা ভিয়েতনাম থেকে মোট ১০ লাখ নারকেল চারা আনব। আর অবশিষ্ট চারা দেশেই উৎপাদন করে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।’