শিরোনাম
সোমবার, ২ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বই উৎসবে মাতোয়ারা

আকতারুজ্জামান

বই উৎসবে মাতোয়ারা

বছরের প্রথম দিনেই বিনামূল্যে নতুন বই পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে সারা দেশের স্কুলগুলোতে তারা উল্লাসে মাতোয়ারা ছিল। উৎসবমুখর ছিল গোটা পরিবেশ। সারা দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গতকাল আয়োজন করা হয় এই বই উৎসবের। রাজধানীতে আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে পাঠ্যপুস্তক উৎসবের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। একইসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রাথমিক শ্রেণিতে বই বিতরণ উৎসবের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। প্রসঙ্গত, এর আগে গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। বই উৎসবকে ঘিরে গতকাল নতুনভাবে সাজানো হয়েছিল সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। শীতের সকালের ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরাও বই উৎসবে যোগ দেয় গভীর আগ্রহে। সকাল ৯টায় বই উৎসব হওয়ার কথা থাকলেও এর আগেই দলে দলে জড়ো হয় ছাত্রছাত্রীরা। আজিমপুর গভর্নমেন্ট   গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে দেখা গেছে, লাল-সবুজ কাপড়ে তৈরি মঞ্চ। চারদিকে উড়ছিল শত শত রঙিন বেলুন। বাজছিল ভেঁপু, ঢাকঢোল। এমনই এক আনন্দময় পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় বই উৎসব। এখানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ কয়েক ছাত্রছাত্রীর হাতে বই তুলে দিয়ে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী মঞ্চ থেকে বই তুলে ধরলে উৎসবে আগত সব শিক্ষার্থী নতুন বই উঁচিয়ে ধরে। বইয়ের সুন্দর মলাটে পুরো স্কুল মাঠ এক অন্যরকম দৃশ্যের অবতারণা করে। পরে শিক্ষামন্ত্রী মঞ্চ থেকে নেমে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন। শিক্ষার্থীরা মন্ত্রীকে কাছে পেয়ে একসঙ্গে ছবি তোলে।

এ সময় বক্তব্যে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, এক সময় ৩৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণির আগে এবং ৪২ শতাংশ নবম শ্রেণি পার না হয়েই ঝরে পড়ত। বছরের অর্ধেক সময় পর্যন্তও ছাত্রছাত্রীরা টাকা দিয়েও সব বই পেত না। আর এখন বিনামূল্যেই বই দিচ্ছি আমরা। আমাদের এই পাঠ্যপুস্তক উৎসব শুধু দেশে নয়, বিশ্বব্যাপীও বৃহৎ কর্মসূচি। ভারতের রাষ্ট্রপতি একথা বলেছেন। এই বই উৎসবে আরও বক্তব্য দেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আলমগীর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান, এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সরকার, ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান এবং আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আসিনুর রহমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে বই উৎসবের আয়োজন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। উৎসবে ঢাকার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা অংশ নেয়। উদ্বোধনী বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের সময় আমরা সবসময় নতুন বই পেতাম না। অনেক সময় পুরনো বই দিয়ে ক্লাস করতে হতো। ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমরা অনেক ভাগ্যবান। এখন পড়ালেখা করার সুযোগ বেড়েছে অনেক। বই তুলে দেওয়ার উদ্দেশ্যটা হচ্ছে, তোমাদের জ্ঞান আহরণ করতে হবে। শিক্ষা-দীক্ষায় বড় হয়ে মানুষের মতো মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে হবে। তাহলে এদেশের উন্নয়নে তোমরা অবদান রাখতে পারবে। মুহিত বলেন, নতুন বই নিয়ে তোমাদের দায়িত্ব বেড়ে গেল। মানুষ হওয়ার যে উদ্দেশ্য নিয়ে তোমরা এখানে এসেছ তা যদি সাফল্য লাভ করে, তাহলে তা আজকের দিনে আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। উৎসবে আসা কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়, হৈ-হুল্লোড়ে আর পতাকা উড়িয়ে তারা মাতিয়ে রাখে মাঠ। বই উৎসবে আয়োজন ছিল শিশুদের নাচ-গান আর সিসিমপুরের পরিবেশনার। অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বিনামূল্যে শিক্ষার্থীরা বই পাচ্ছে। এতে স্বাক্ষরতার হার বাড়ছে। অভিভাবকদেরও বোঝা কমছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৭ শিক্ষাবর্ষে এবার ৪ কোটি ২৬ লাখ ৩৫ হাজার ৯২৯ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫টি বই বিতরণ করা হচ্ছে। প্রথমবারের মতো ৫টি ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর ভাষায় ৭৭ হাজার ২৮২টি বই ছাপানো হয়েছে। পাঁচটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুদের তাদের নিজেদের ভাষায় লেখা প্রাক-প্রাথমিকের বই ও শিক্ষা উপকরণ এবং শিক্ষকদের শিক্ষক নির্দেশিকা দেওয়া হচ্ছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য এবার ব্রেইল পদ্ধতিতেও বই ছাপা হয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর