শিরোনাম
বুধবার, ৪ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
রিজার্ভ চুরি

বাংলাদেশের কোনো অভিযোগই আমলে নিচ্ছে না ফিলিপাইন

মানিক মুনতাসির

বাংলাদেশের কোনো অভিযোগই আমলে নিচ্ছে না ফিলিপাইন

বাংলাদেশ ব্যাংকের কনফারমেশন ছাড়াই রিজাল ব্যাংকিং করপোরেশনকে (আরসিবিসি) পেমেন্ট দিয়েছে ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম (ফেড)। সেই অর্থ জুয়ার আসরে খরচ করিয়েছে আরসিবিসি। এতে মানি লন্ডারিং অপরাধ করেছে ফিলিপাইনের এ ব্যাংকটি। ফলে আরসিবিসিকে জরিমানা করে হলেও বাংলাদেশকে অর্থ ফেরত দিতে হবে। ফেড থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশের করা এ ধরনের কোনো যুক্তিকেই পাত্তা দিচ্ছে না ফিলিপাইন। বরং ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করলেও হেরে যাবে। তাই তারা টাকা ফেরত দেবে না। এ ঘটনার দায়ও নেবে না। গত মাসে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল ফিলিপাইন সফর করার সময় এসব অভিযোগ তুলে ধরা হয় ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। বাংলাদেশ ব্যাংক অবশ্য বলছে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। কিন্তু আদৌ মামলা হবে কিনা- সে নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। কেননা সমঝোতার মাধ্যমে টাকা ফেরত পাওয়া যতটা সহজ মামলায় গেলে বিষয়টা ততটাই কঠিন হয়ে পড়বে। এই মামলা নিষ্পত্তি হতে ২০, ৩০ এমন কি ৫০ বছরও লাগতে পারে। ফলে দীর্ঘসূত্রতা এড়াতে মামলার বিকল্পকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে মানি লন্ডারিং আইনের আওতাতেই বাংলাদেশ চুরি হওয়া রিজার্ভের অর্থ ফেরত চায়। অন্যদিকে অর্থ ফেরত না দিয়ে হ্যাকার এবং জড়িত ব্যাংক কর্মকর্তাদের তথ্য জানতে চেয়েছে ফিলিপাইন ও ফেড কর্তৃপক্ষ। যে কোনো মূল্যে তারা হ্যাকারদের তথ্য জানতে চায়। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনের কপি কোনোমতেই ফিলিপাইনকে দেবে না সরকার। এ ছাড়া হ্যাকার-সংক্রান্ত কোনো তথ্য বাংলাদেশের কাছে নেই, যা ফিলিপাইনকে দেওয়া যেতে পারে। তবে তদন্ত প্রতিবেদনের সুনির্দিষ্টভাবে কোনো তথ্য ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইলে বাংলাদেশ তা বিবেচনা করতে পারে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ফিলিপাইন সরকার ও তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেটিভের (এফবিআই) কাছেও এ-সংক্রান্ত যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রয়েছে, যা দিয়ে তারা ঘটনার সুরাহা করতে পারে। কাজেই এ ধরনের তথ্য ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বাংলাদেশ কেন দেবে? এমন প্রশ্ন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর এখন পর্যন্ত মাত্র দেড় কোটি ডলার ফেরত দিয়েছে ফিলিপাইন। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে  বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের বাকি অর্থ কোথায় গেছে তা খুঁজে বের করার জন্য ফিলিপাইনের পাশাপাশি ফেডকেও অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জুয়ার আসরে এ অর্থ যারা খরচ করেছেন ইতিমধ্যে এমন যাদের ধরা হয়েছে তাদের মাধ্যমেই অবশিষ্ট অর্থের খোঁজ পাওয়া সম্ভব বলে মনে করে বাংলাদেশ। 

এদিকে ঘটনার পর ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও তদন্ত কার্যক্রম থেমে রয়েছে। বাংলাদেশ, ম্যানিলা, ফেডারেল রিজার্ভ কর্তৃপক্ষের তদন্ত কাজেও গতি নেই। এদিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সিআইডি, পুলিশ, এফবিআইয়ের তদন্তও চলছে ঢিমেতালে। বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), এ্যান্টি মানি লন্ডারিং সংস্থা  এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ (এপিজি) কোনো সংস্থাই জোরালো কার্যক্রম পরিচালনা করছে না দোষীদের চিহ্নিত করতে বা অর্থ উদ্ধারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার (৮০০ কোটি টাকা) চুরির প্রথম দিকে ফিলিপাইনের আদালত, সংসদ বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করলেও এখন আর এ ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না দেশটি। ফিলিপাইনের রিজাল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) কয়েকজন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হলেও এর মূল হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। বিশেষ করে সুইফট কর্তৃপক্ষ ও ফেডারেল রিজার্ভ কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত দায় নিতেও রাজি হয়নি। তারা বলছে, এ ধরনের ঘটনার দায় সম্পূর্ণ বাংলাদেশ ব্যাংকের। অথচ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এ দায় তাদেরই বলে মনে করে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সর্বশেষ খবর