মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

এবার বনানীর বহুতল ভবনে আগুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

এবার বনানীর বহুতল ভবনে আগুন

রাজধানীর বনানীতে বসতি হরাইজন টাওয়ার নামের একটি ভবনে গতকাল দুপুরে আগুন লাগে —বাংলাদেশ প্রতিদিন

গুলশান মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পর এবার রাজধানীর বনানীর বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল দুপুরে ‘বসতি হরাইজন টাওয়ার’-এর ১৮ তলা ভবনের দোতলায় আগুন ধরে। এতে গোটা ভবন এবং আশপাশে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

ঘটনার সময় ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে আটকা পড়েন অসংখ্য মানুষ। তারা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি ও হুড়াহুড়ি করে নামতে গিয়ে আহত হন। আবার ধোঁয়ার কারণে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। জ্ঞান হারান বেশ কয়েকজন। পরে ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভবনের ভিতরে আটকেপড়া মানুষদের স্কাই লিফট দিয়ে অক্ষত অবস্থায় নামিয়ে নিয়ে আসেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। এ সময় হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় অবস্থান করেন। সড়কগুলোতে যানচলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন) মেজর শাকিল নেওয়াজ জানান, বনানীর কামাল আতার্তুক এভিনিউয়ের বসতি হরাইজন টাওয়ারের দ্বিতীয়তলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। বেলা ২টা ৪৫ মিনিটে আগুন লাগার পরপরই ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা চেষ্টা চালিয়ে দ্রুততার সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। সেখানকার একটি বৈদ্যুতিক বোর্ড থেকে আগুন ধরে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। দোতলার ওই স্থানে মোটরসাইকেল থাকায় পেট্রোলের কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুন নিয়ন্ত্রণের পর শাকিল নেওয়াজ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ফায়ার সার্ভিসের ১৭টি ইউনিট দক্ষতার সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় ভবনের ভিতরে আটকে পড়া ৫০ জনকেও উদ্ধার করা হয়। আগুন ভবনের দ্বিতীয় তলায় লাগে, তবে তা ওপরের দিকে ছড়ায়নি। অবশ্য ধোঁয়ার কুণ্ডলী ওপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ভবনে ভেন্টিলেশন না থাকায় এ অবস্থা হয়। তিনি বলেন, ‘ধোঁয়া সিঁড়ির ফাঁকা দিয়ে ওপরে চলে যায়। তখন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা উপস্থিত হয়ে ভবনের ভিতরে থাকা লোকদের ওপরে চলে যেতে বলেন। পরবর্তীতে স্কাই লিফট দিয়ে তাদের নিচে নামানো হয়। ৫০ জনেরও বেশি লোককে এভাবে উদ্ধার করা হয়। এরমধ্যে একজন শ্বাসকষ্টের রোগী ছিলেন। তাকে ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্সে দ্রুত হাসপাতালে পাঠানো হয়।’ বনানী ১৭ নম্বর রোডে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (এআইইউবি) ও হোটেল সারিনার কাছে বসতি হরাইজন টাওয়ার। ১৮ তলা ওই ভবনের সবগুলো ফ্লোরেই বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। ওই ভবনের একটি ট্র্যাভেল এজেন্সির এক কর্মী কিরন জানান, তিনি ঘটনার সময় আতঙ্কে ছাদে চলে যান। পরে ফায়ার কর্মীরা তাকে নামিয়ে নিয়ে আসেন। তিনি বলেন, ভবনের ওপরের ফ্লোরগুলো থেকে অনেকে আতঙ্কিত হয়ে ছাদে উঠে যান। অনেকে রেলিং টপকে পাশের ভবনেও চলে যান। এ সময় একজন গর্ভবতী মহিলাকে দেখা যায় রেলিং টপকাতে। পরে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ওই ভবনের একটি ফ্লোরের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন স্বপন সালাউদ্দিন। তিনি জানান, আগুনের সময় লাঞ্চ করতে বাইরে ছিলেন। আগুনের সংবাদ শুনে তিনি ছুটে আসেন। তিনি বলেন, আগুন ছোট হলেও প্রচুর ধোঁয়া হয়েছে। এ কারণে আতঙ্ক ছিল বেশি। লোকজন মরিয়া হয়ে বেরিয়ে আসতে থাকেন। অল্প কিছু সময়ের মধ্যে ফায়ার ট্রাক চলে আসে। তারা আগুন নেভাতে শুরু করে। কিন্তু ভিতরে ধোঁয়া বাড়তে শুরু করার পর ১৩ ও ১৪তম তলায় কিছু লোক আটকা পড়েন। পরে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা তাদের ছাদে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তারা ছাদে উঠে গেলে ফায়ার সার্ভিস স্কাই লিফট দিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়। এ সময় আশপাশের ভবন থেকে মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। রীতিমতো ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় গোটা এলাকায়।

সর্বশেষ খবর