জঙ্গি দমনে কোস্টগার্ডকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকেও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, জঙ্গিবাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদদাতাদের সরকার কোনো ছাড় দেবে না। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের নতুন জাহাজ সিজিএস সৈয়দ নজরুল ও সিজিএস তাজউদ্দীনের কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন তিনি। অফশোর পেট্রল ভেসেল দুটি ইতালি থেকে আনা হয়েছে। এ সময় কোস্টগার্ডের সদস্যদের দেশ ও জাতির সেবায় আত্মনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে এই বাহিনীর আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণে তার সরকারের সার্বিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী। বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ জলসীমায় বাংলাদেশের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর (সমুদ্রজয়ের পর) সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা দিতে কোস্টগার্ডকে সমৃদ্ধ করা হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে সমুদ্রসম্পদ আহরণ ও নিরাপত্তাবিধানের মাধ্যমে দেশ আজ জাতির পিতার স্বপ্ন ‘অর্থনৈতিক মুক্তি’ অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্থলভাগে সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে আমাদের দৃষ্টি এখন সমুদ্রের দিকে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে সমুদ্রসীমা যথাযথভাবে নির্ধারিত হওয়ায় নিজ জলসীমায় আমাদের অধিকার আরও সুদৃঢ় হয়েছে।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের নদী, সাগর, উপকূল এবং গভীর সমুদ্রে অর্থনৈতিক কার্যক্রম অর্থাৎ ব্লু ইকোনমি কার্যক্রমকে গতিশীল ও নিরাপদ রাখা, এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে জড়িতদের জানমালের নিরাপত্তাবিধান, মাদকদ্রব্যসহ চোরাচালান প্রতিরোধ এবং সমুদ্র দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণসহ কোস্টগার্ড বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করছে। গ্রিন ইকোনমির দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে অঢেল সম্পদের ভাণ্ডার লুকিয়ে আছে। এ সম্পদের অন্বেষণ, আহরণ এবং সংরক্ষণ আমাদেরই করতে হবে।’ জনবলের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কোস্টগার্ড স্বল্পতম সময়ের মধ্যে দেশের সুবিশাল সমুদ্র এবং উপকূলীয় এলাকায় জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তাবিধানে বিশেষ অবদান রাখছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই বাহিনীর সদস্যদের সততা, দায়িত্ববোধ, ঐকান্তিক প্রচেষ্টা, দূূরদৃষ্টি এবং কর্মদক্ষতায় উপকূলীয় অঞ্চলে কোস্টগার্ড এখন আস্থা ও নিরাপত্তার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। কোস্টগার্ডের সৃষ্টি এবং বিকাশে আওয়ামী লীগ সব সময় সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৪ সালে বিরোধী দলে থাকলেও জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের আনা বিলের কারণেই বাংলাদেশ কোস্টগার্ড গঠন করা হয়। তিনি বলেন, দেশের সমুদ্রবন্দর ও বহির্নোঙর এলাকায় বাণিজ্যিক জাহাজসমূহের নিরাপত্তায় কোস্টগার্ডের তৎপরতা আজ বহির্বিশ্বেও সমাদৃত। আন্তর্জাতিক মেরিটাইম ব্যুরোর বিবেচনায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর এখন নিরাপদ বন্দর হিসেবে স্বীকৃত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্রবন্দর ও বহির্নোঙরের নিরাপত্তাবিধান, সুন্দরবন এলাকায় জলদস্যু দমন, নদী ও সাগরে চোরাচালানবিরোধী অভিযান, মানবসম্পদ পাচার রোধ, জাটকা নিধন প্রতিরোধ এবং মা ইলিশ রক্ষায় কোস্টগার্ডের টহল জাতীয় ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।