শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভারতে বসে কুষ্টিয়ায় চাঁদাবাজি করছেন চরমপন্থি নেতা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

ক্রসফায়ারের ভয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেও চরমপন্থিদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না কুষ্টিয়ার ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। ভারতে বসেই তারা দেশে চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধমূলক ঘটনা ঘটাচ্ছেন। চাঁদা দিতে অপারগতা জানালে আসছে প্রাণনাশের হুমকি। তাই প্রাণভয়ে অনেকে এসব ঘটনা প্রকাশ্যে আনছেন না। ভারতে পালিয়ে  থাকা কুষ্টিয়ার শীর্ষ চরমপন্থি জাহাঙ্গীর কবির লিপটন পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানা গেছে। লিপটন নিষিদ্ধঘোষিত চরমপন্থি সংগঠন গণমুক্তি ফৌজের থার্ড ইন কমান্ড হিসেবে পরিচিত। সে কুষ্টিয়া শহরের থানাপাড়ার জাসদ নেতা বাবু, পিটিআই রোডের ঠিকাদার নাসিরউদ্দিন, কালীশঙ্করপুরের ফয়েজ, হাউজিংয়ে যুবলীগ নেতা জামু ও কোর্ট স্টেশন এলাকায় ঠিকাদার হাবিব হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। বিভিন্ন সূত্র জানায়, ওয়ান-ইলেভেনের পর ভারতে পালিয়ে যায় লিপটন। সেখান থেকেই কুষ্টিয়ার কয়েকটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও একাধিক ঠিকাদারের কাছ থেকে মোবাইল ফোনে চাঁদা আদায় করত। পরে দেশে ফিরে নানা অপকর্মের পাশাপাশি পুলিশের সোর্স হিসেবেও কাজ শুরু করে। শুরুতে কয়েকজন চরমপন্থি ক্যাডারকে ধরিয়ে দিয়ে লিপটন প্রশাসনের আস্থা অর্জন করে। পরে লিপটন আবারও ভারতে পালিয়ে যায়। বর্তমানে সেখান থেকেই কুষ্টিয়া শহরের একাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ঠিকাদার, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। লিপটনের সহযোগী লিটন ওরফে ফিঙে লিটনসহ কয়েকজন লিপটনের হয়ে চাঁদা আদায় করছে। চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ কয়েকজন পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন। জেলার মিরপুর উপজেলা শহরের আদর্শপাড়ার বাসিন্দা ঠিকাদার সরোয়ার হোসেন পুলিশ সুপারের কাছে করা অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, লিপটন দীর্ঘদিন ভারতীয় ফোন (নম্বর +৯১৮৪২০৬৯৫১১৪) থেকে তার কাছে চাঁদা দাবি করে আসছে। চাঁদার টাকা না দিলে ওই চরমপন্থি নেতা তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে বলে ১২ নভেম্বর করা অভিযোগে উল্লেখ করেছেন ঠিকাদার সরোয়ার। এ ছাড়া কুষ্টিয়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র মতিয়ার রহমান মজনু, শহরের পেয়ারাতলা এলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী জামিনুর রহমান কালু, নবাব সিরাজউদ্দৌলা সড়কের বাসিন্দা সৈয়দ নূর আলম, সদর উপজেলার আলামপুর এলাকার জাকির হোসেন, কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার রিসানুজ্জামান স্বপনসহ বেশ কয়েকজন লিপটনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন পুলিশ ও র‌্যাবের কাছে। লিপটনের সহযোগী লিটন ওরফে ফিঙে লিটনও চাঁদা চেয়ে ফোন করে বলে কয়েকজন তাদের অভিযোগে উল্লেখ করেছেন। এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার প্রলয় চিসিম বলেন, ‘একসময় কুষ্টিয়ায় চরমপন্থি সন্ত্রাসীদের তৎপরতা থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপের ফলে তারা নির্মূল হয়েছে। শুনেছি কিছু চরমপন্থি ভারতে পালিয়ে আছে। লিপটনের ব্যাপারে বেশ কয়েকজন লিখিত অভিযোগ করেছে। সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

 

সর্বশেষ খবর