সোমবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

মংলা বন্দরে আসতে চায় ভারত

ভিড় বাড়ছে শিল্প কোম্পানির বিনিয়োগের জন্য চায় জমি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

মংলা বন্দরের উন্নয়নে সম্পৃক্ত হতে চায় ভারত। এ ধরনের একটি প্রস্তাব এখন পর্যালোচনা করে দেখছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। আর মংলা ঘিরে পার্শ্ববর্তী দেশটির এ আগ্রহ ইতিবাচকভাবে দেখছে দেশের শিল্পোদ্যোক্তারা।

সূত্র জানায়, দক্ষিণাঞ্চলের মংলা সমুদ্রবন্দর ঘিরে আগ্রহ বাড়ছে দেশের সরকারি-বেসরকারি শিল্প ও সেবা খাতের বেশ কয়েকটি কোম্পানির। বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে তারা সেখানে বিনিয়োগ করতে চাইছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, সামিট করপোরেশন লি., ব্লু গ্যাজ লি., বি এম এনার্জি (বিডি) লি., তিতাস রিফাইনারি কোম্পানি লি. এবং প্রমিতা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস লি. নামে ছয়টি কোম্পানি বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে জমি লিজ চেয়ে আবেদন করেছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানায়, বিনিয়োগের জন্য যে প্রতিষ্ঠানগুলো বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছে তাদের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের মতামত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বন্দর কর্তৃপক্ষের হাতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জমি থাকলে আইন ও বিধি অনুসারে আবেদনকৃত কোম্পানিগুলোকে বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে। আবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা জানান, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে আবেদনগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ২০১৮ সালেই পদ্মা সেতু চালু হবে এই বিষয়টি এখন শিল্পোদ্যোক্তারা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। আর স্বপ্নের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মংলা বন্দরের সঙ্গে রাজধানীর ঢাকার সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগ নিশ্চিত হবে। ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের দূরত্ব সড়কপথে প্রায় ২৬৫ কিলোমিটার। পদ্মা সেতু চালু হলে ঢাকার সঙ্গে মংলা বন্দরের দূরত্ব হবে সড়কপথে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার। এক্ষেত্রে মংলা বন্দরের যাতায়াতপথ চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ে প্রায় ৯৫ কিলোমিটার কমে যাবে। এতে পরিবহন খরচ ও সময় দুটিরই সাশ্রয় হবে। এ ছাড়া খুলনায় খানজাহান আলী বিমানবন্দর স্থাপনে একনেকে প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। বন্দরের অদূরে ঘষিয়াখালী চ্যানেল ব্যবহার করে ভারতের সঙ্গে নৌ ট্রানজিট কার্যকর হয়েছে। রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র চালু হলে ওই অঞ্চলে বিদ্যুত্ সরবরাহ বাড়বে। ভারতের সঙ্গে নৌপথে ট্রানজিট সুবিধা কার্যকর হওয়া, মংলা বন্দর ব্যবহারে পার্শ্ববর্তী দেশটির আগ্রহ এবং খুলনার সঙ্গে সরাসরি কলকাতার সড়কপথে যোগাযোগ সুবিধার বিষয়গুলোও মংলা বন্দরে বিনিয়োগের জন্য শিল্পোদ্যোক্তাদের আগ্রহী করে তুলছে বলে জানা গেছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মংলা বন্দরের উন্নয়নে সহায়তা করতে চায় ভারত সরকার। এ বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি গভীর ও অত্যাধুনিক করে তুলতে বিনিয়োগ করবে তারা। গত ডিসেম্বরে দুই দেশের নৌপরিবহন সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠকে চট্টগ্রামের পাশাপাশি মংলা বন্দর ব্যবহারে ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিষয়েও আলোচনা হয়। বৈঠকে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, মংলায় গভীর সমুদ্রবন্দর হলে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, হলদিয়া ও সাগর বন্দর থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি বাণিজ্যের সুযোগ বাড়বে। মংলা বন্দরের উন্নয়নে সরকারের শীর্ষপর্যায় থেকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান মংলা বন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে আধা সরকারি চিঠি লিখেছেন। এ ছাড়া গত সপ্তাহে অর্থমন্ত্রী দক্ষিণাঞ্চল সফরের সময় মংলা বন্দর পরিদর্শন করেন। ওই সময় মন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে মংলা সমুদ্রবন্দরের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই এ বন্দরের উন্নয়নের দিকে সরকারের নজর রয়েছে।

সর্বশেষ খবর