শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

স্কুল নয়, যেন কোনো বেনিয়া প্রতিষ্ঠান

নিয়মনীতি অমান্য করে যেমন খুশি ফি আদায়

আকতারুজ্জামান

রাজধানীর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলগুলোয় নতুন শিক্ষার্থী ভর্তিতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভর্তি নীতিমালা অমান্য করে নেওয়া হচ্ছে গলা কাটা ফি। তবে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান বলছেন, অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের প্রমাণসহ শিক্ষা বোর্ডে অভিযোগ করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের সেই স্কুলগুলোর স্বীকৃতি বাতিল করা হবে। এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কত টাকা নেওয়া যাবে, এ-সংক্রান্ত নীতিমালা না থাকায় এই ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকেও বাড়তি অর্থ আদায় করা হচ্ছে, এমনটিও বলছেন অভিভাবকরা। এ ছাড়া ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন স্কুলে নির্ধারিত অর্থের চেয়ে বেশি আদায় করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। বাড়তি অর্থ আদায় রোধে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি কমিটি করলেও কমিটি যথাযথভাবে কাজ করছে না বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ। মিরপুর ১৪ নম্বরে শহীদ পুলিশ স্মৃতি স্কুল অ্যান্ড কলেজে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে দুই রসিদের মাধ্যমে নেওয়া হচ্ছে সাড়ে ১৪ হাজার টাকা। রাজধানীর সাউথ পয়েন্ট স্কুলে বাড়তি অর্থ নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। মালিবাগ চৌধুরীপাড়ায় অবস্থিত এ স্কুলটিতে ষষ্ঠ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে আদায় করা হচ্ছে ২৮ হাজার টাকা। পুরনো শিক্ষার্থী এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে উত্তীর্ণের ক্ষেত্রেও গলা কাটা ফি আদায় করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভর্তি নীতিমালায় বলা হয়েছে : মাসিক বেতন, উন্নয়ন ফি, সেশন চার্জসহ সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা আদায় করা যাবে। রাজধানীর উত্তরার বিভিন্ন স্কুলেও আদায় করা হচ্ছে বাড়তি টাকা। মগবাজারের শহীদ লেফটেন্যান্ট সেলিম শিক্ষালয়ে পড়ুয়া এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, তৃতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণিতে উত্তীর্ণের পর তাকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে। এর মধ্যে সেশন ফি দিতে হয়েছে ৫ হাজার টাকা। সামছুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজে চালু রয়েছে কোচিং। প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য কোচিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আর এর জন্য পরিশোধ করতে হয় বাড়তি অর্থ। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিভিন্ন শ্রেণিতে পুরনো শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে বাড়তি টাকা নেওয়া হচ্ছে বলে অভিভাবকরা জানিয়েছেন।

মগবাজার মধুবাগের শের-ই-বাংলা উচ্চবিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে ৫ হাজার ৯০০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে সেশন চার্জই নেওয়া হচ্ছে ৫ হাজার টাকা। অভিভাবকদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত মাসে ৬টি মনিটরিং টিম গঠন করেছে। প্রতি টিমে সদস্য তিনজন। এতে মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের কর্মকর্তারা রয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. অরুণা বিশ্বাসের নেতৃত্বে গঠিত টিমকে মতিঝিল, সবুজবাগ, পল্টন ও শাহবাগ থানা; অতিরিক্ত সচিব চৌধুরী মুফাদ আহমেদের নেতৃত্বের টিমকে সূত্রাপুর, কোতোয়ালি, লালবাগ, কামরাঙ্গীর চর, নিউমার্কেট ও রমনা থানা; অতিরিক্ত সচিব মো. আবদুল্লাহ আল হাসান চৌধুরীর নেতৃত্বের টিমকে উত্তরখান, দক্ষিণখান, উত্তরা, বিমানবন্দর, তুরাগ, থানা; অতিরিক্ত সচিব বেগম রুহী রহমানের নেতৃত্বের টিমকে মিরপুর, পল্লবী, শাহ আলী, দারুস সালাম থানা; যুগ্ম-সচিব সালমা জাহানের নেতৃত্বের টিমকে ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, আদাবর, তেজগাঁও, ক্যান্টনমেন্ট ও গুলশান থানা; যুগ্ম-সচিব মো. আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বের টিমকে যাত্রবাড়ী, ডেমরা, কদমতলী, বাড্ডা ও খিলগাঁও থানার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

তবে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু গতকাল এই প্রতিবেদককে বলেন, সরকারের গঠিত মনিটরিং কমিটি মাঠে নয়, রুমে বসেই তদারকি করছে। সঠিক পদ্ধতিতে মনিটরিং হচ্ছে না বলেও বক্তব্য তার। এদিকে চলতি মাসে রাজধানীর ১৫ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের কাছে পৃথক চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। চিঠিতে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন শ্রেণিতে শূন্য আসনে শিক্ষার্থীদের ভর্তির নীতিমালা/ভর্তি পদ্ধতি এবং প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২০১৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তির আসন সংখ্যাসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মৌখিক অনেক অভিযোগ পেলেও ভর্তিতে বাড়তি অর্থ আদায়ের কেউ লিখিত অভিযোগ করছেন না। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্দেশে বলতে চাই, বাড়তি অর্থ আদায় করা হচ্ছে এমন প্রমাণ দিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে লিখিত আবেদন করুন। অভিযোগ পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি বাতিল করে দেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর