শনিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাণিজ্য মেলায় ঠাঁই নেই তিল ধারণের

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাণিজ্য মেলায় ঠাঁই নেই তিল ধারণের

বাণিজ্য মেলার সময় শেষ হয়ে এসেছে। হাতে আর মাত্র চারদিন। ৩১ জানুয়ারি শেষ হবে মাসব্যাপী আয়োজিত এ মেলা। এ বাস্তবতায় কর্মব্যস্ত মানুষের জন্য গতকাল ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং মেলার জন্য শেষ শুক্রবার। ফলে এদিন মেলাকে কেন্দ্র করে মানুষের ঢল নেমেছিল। তিল ধারণের জায়গা ছিল না মেলা প্রাঙ্গণে। এমনকি মেলার বাইরেও মানুষ এবং যানবাহনে বেসামাল অবস্থা দেখা গেছে। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ছিল ভয়াবহ যানজট।  আগারগাঁওয়ের এ মেলায় গিয়ে গতকাল দেখা গেছে, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে বাম দিকের রাস্তায় শত শত গাড়ি। গাড়ির চাপে মূল রাস্তা থেকে মেলা চত্বরের গেট পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লাগছিল আধা ঘণ্টারও বেশি। এ অবস্থায় সিএনজি থেকে নেমে হাঁটতে থাকা উত্তরার হামিদ নামে মধ্যবয়সী এক দম্পতি বললেন, ‘সারা রাস্তায় জ্যাম নেই, এখানে ভয়াবহ অবস্থা। বাধ্য হয়ে হাঁটতে হচ্ছে।’  তারপরও তিনি বলেন, ‘এত চাপের মধ্যে কারও কিছু করার নেই। বিরক্ত হয়ে লাভ কী?’ মেলায় গিয়ে কিছু কিনতে চাচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, ‘দেখি পছন্দ হলে কিনব। গৃহস্থালি কিছু জিনিসপত্র কেনার ইচ্ছা আছে।’ গাড়ির দীর্ঘ লাইন পেরিয়ে সড়কের দুই পাশ থেকেই হাজার হাজার মানুষের স্রোত। নিজের পরিবার, দম্পতি, প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধুরা মিলে এসেছেন মেলায়। মেলার গেটে দাঁড়ানো ডিউটি পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সকাল দশটায় মেলা শুরুর পরেই প্রচুর দর্শনার্থী আসা শুরু করেছেন। দুপুর ২টার পর মানুষের ভিড় প্রচণ্ড রকম বেড়েছে। বিকালে মানুষের ভিড় সামাল দেওয়াই কঠিন।

মেলার মূল গেটের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, হাজার হাজার মানুষ বের হচ্ছেন। যারাই রাস্তা ধরে বের হচ্ছেন তাদের প্রায় সবার হাতেই পণ্যের ব্যাগ। হাবিবা খাতুন নামের পঞ্চাশোর্ধ এক দর্শনার্থীর হাতে ৫/৬টি পণ্যে ভর্তি শপিং ব্যাগ সম্পর্কে প্রশ্ন করতেই তিনি বললেন, ‘অনেক কিছু কিনেছি। জানালার পর্দা কিনেছি, প্লাস্টিকের কিছু জিনিসপত্র, গ্লাস, একটি ওভেন কিনেছি।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘দাম তো একই রকম। বিশেষ কোনো কম রাখেনি।’ পাশে দাঁড়ানো আরেক দর্শনার্থী মোবাইল কিনছিলেন, তিনি বললেন, ‘মেলা উপলক্ষে কিছু ছাড় পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি মোবাইলে প্রায় এক হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যাচ্ছে। গিফটও দিচ্ছে।’ খোঁজ নিয়ে ধারণা পাওয়া গেছে, মেলার শেষ দিকের এই রমরমা অবস্থায় খুশি বিক্রেতারা। আর ভিড়ের মাঝেও নিজেদের পছন্দের পণ্য খুঁজতে পেরে ক্লান্তি নেই। মেলার ভিতরে জমজমাট জনসমুদ্র। বিভিন্ন বয়স আর শ্রেণি পেশার অগণিত মানুষ ভিড় করেছেন মেলায়। মেলায় মোটরসাইকেল কোম্পানির একটি স্টলে কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের মেলায় ভালো বিক্রি হচ্ছে। তবে গাড়ির দাম সব শ্রেণির লোকদের ক্রয়ের সীমানার মধ্যে থাকায় বিক্রি অনেক বেশি। অন্য কোম্পানির গাড়ি যেখানে লাখ টাকার ওপরে ঠিক সেই মানের গাড়ি এই কোম্পানিতে বিক্রি হচ্ছে ৯৫ হাজার ৫০০ টাকায়। এবারের মেলায় বিভিন্ন মডেলের মোটরসাইকেলে তিন থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে। মেলার সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ লক্ষ্য করা গেছে শিশুদের খেলনায়। বেশ কয়েকটি স্টলে গিয়ে দেখা গেছে, ভিড়ে স্টলের মধ্যে ঢোকাই যায় না। একটি স্টল কর্মীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি বলেন, ‘ভাই যেটা পছন্দ হয় নিয়ে দাম দিয়ে যান। কথা বলার সময় নেই।’ সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পর নাসিম নামের ওই স্টলকর্মী বলেন, ‘হ্যাঁ প্রচুর বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা ভালো। যারা ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে মেলায় ঘুরতে আসেন, আর কিছু না কিনলেও বাচ্চাদের জন্য কিছু না কিছু কেনেন। এবারের মেলায় আমাদের ভালো বিক্রি হচ্ছে।’ স্টলের বাইরে এসে টেক্সটাইল পণ্যের স্টলেও দেখা গেছে একই রকম ভিড়। বিশেষ করে বেডশিট, পর্দা, প্লাস্টিক পণ্যের চাহিদা ছিল তুঙ্গে। এসব কারণে এ বছর আয়োজকরা দারুণ খুশি বলে ধারণা পাওয়া গেছে।

সর্বশেষ খবর