সোমবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বদলে গেল সেই ভ্যান চালকের ভাগ্য

মিলল চাকরি, ভ্যান যাচ্ছে জাদুঘরে

আমিনুল হাসান শাহীন, গোপালগঞ্জ

বদলে গেল সেই ভ্যান চালকের ভাগ্য

মায়ের সঙ্গে সেই ভ্যানচালক ইমাম শেখ

জীবনের চাকা যার ঘুরপাক খাচ্ছিল ভ্যানের চাকায়, সেই কিশোর ভ্যানচালকের ভাগ্যের চাকা যে এভাবে ঘুরে যাবে কেউ কল্পনা করেনি। ভ্যানচালক ইমাম শেখ নিজেও নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে টুঙ্গিপাড়ার গ্রামীণ সড়কে ভ্যান চালিয়ে আজ খুলে গেছে ইমাম শেখের কপাল। প্রধানমন্ত্রীর বদান্যতায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে চাকরি হচ্ছে এই কিশোরের। গত শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় ফেরার আগে বেলা ১১টা থেকে ইমাম শেখের ভ্যানে চড়ে প্রায় ১৫ মিনিট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় নিজ এলাকা ঘুরে দেখেন। তিনি বঙ্গবন্ধু স্মৃতিসৌধ থেকে ভ্যানে চড়ে প্রায় এক কিলোমিটার পর্যন্ত যান। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ওই ভ্যানে ছিলেন ভাগ্নে (ছোট বোন শেখ রেহানার ছেলে) রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, তার স্ত্রী পেপি সিদ্দিক, মেয়ে লিলা তুলি সিদ্দিক ও ছেলে কাইয়ুস মুজিব সিদ্দিক। কাইয়ুস মুজিবকে কোলে নিয়ে শেখ হাসিনা গ্রামের বিভিন্ন স্থানে ভ্যান থামিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেন ও তাদের খোঁজখবর নেন। প্রধানমন্ত্রীর সাইকেল ভ্যানে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচার পায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ভাইরাল হয়। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী ঢাকা ফিরে যান। পরের দিন শনিবার ‘প্রধানমন্ত্রীকে মনের কথা বলতে না পারায় এখনো আফসোস ভ্যানচালক ইমামের। বারবার একটি চাকরি দেওয়ার কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু আনন্দে আত্মহারা হয়ে তা বলতে পারিনি’, ইমামের এই বক্তব্য সংবলিত সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। জানা গেছে, এই সংবাদ প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি গোচরে আসে। তিনি ভ্যানচালক ইমামের জন্য একটি চাকরির ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সকালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর যশোর বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান ঘাঁটি থেকে স্কোয়াড্রন লিডার হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি বিমান সেনাদল টুঙ্গিপাড়ায় আসেন। সরাসরি যান ইমাম শেখের বাড়ি। সেখান থেকে তাকে নিয়ে আসা হয় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার প্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহের বাসভবনে। সেখান থেকে ইমাম শেখকে যশোর নিয়ে যান বিমান বাহিনীর প্রতিনিধিরা। সেই সঙ্গে তার ভ্যান গাড়িটিও নিয়ে যাওয়া হয়। জানা গেছে, ভ্যানটি জাদুঘরে রাখা হবে। প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণে না চাইতে সবকিছু পেয়ে যাওয়ার আনন্দে আত্মহারা ইমাম শেখের সব স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। চাকরি পাওয়ার অনুভূতির কথা বলতে গিয়ে আপ্লুত ইমাম শেখ বলেন, স্বপ্নেও ভাবিনি এভাবে আমার একটি চাকরি হবে। প্রধানমন্ত্রী ওইদিন আমার ভ্যানে না উঠলে হয়তো চাকরির স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যেত। তিনি বলেন, আমি এলাকার মুরব্বিদের কাছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর কথা শুনেছি। তিনি খুবই দয়ালু ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যে তার পিতার মতো দয়ালু তার প্রমাণ পেলাম। আমি এবং আমার পরিবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। দোয়া করি আল্লাহ প্রধানমন্ত্রীকে দীর্ঘায়ু দান করুন। ইমাম শেখকে নিতে আসা বিমান বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, যোগ্যতা অনুসারে তাকে একটি চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। এ বিষয়ে শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইমাম শেখের কথা-বার্তা ও আচরণে খুশি হয়ে একটি চাকরি ব্যবস্থা করছেন। আশা করছি, এ চাকরির মাধ্যমে তার পরিবারের দুর্দশা লাঘব হবে।

সর্বশেষ খবর