মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

টেংরা পুঁটি কৈ শিং মাছে ভর্তুকির সুপারিশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

নিজস্ব প্রতিবেদক

টেংরা পুঁটি কৈ শিং মাছে ভর্তুকির সুপারিশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

দেশি কৈ, শিং, মাগুর, পাবদা, গুলশা, টেংরা ও পুঁটি মাছ চাষে সরকারের কাছে ভর্তুকি চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সংস্থাটি বলেছে, সরকার যদি ব্যাংক ঋণে ৬ শতাংশ সুদ ভর্তুকি দেয় তবে তারা ৪ শতাংশ রেয়াতি সুদে দেশি মাছ চাষে মৎস্য চাষিদের ঋণ দেওয়ার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সম্মত করার পদক্ষেপ নিতে পারে। গত ৬ মার্চ এ ধরনের ভর্তুকির সুপারিশ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছরের সেপ্টেম্বর, অক্টোবর এবং চলতি বছরের জানুয়ারিতে বিষয়টি নিয়ে তিন দফা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বৈঠকের কথা উল্লেখ করা হয় চিঠিতে। বলা হয়, মৎস্য চাষে ঋণ নিয়ে ব্যাংকগুলো যে জটিলতার কথা বলছে এতে ভর্তুকির মাধ্যমে মৎস্য চাষিদের উৎসাহ দেওয়া যেতে পারে। এ বিষয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভর্তুকির যে সুপারিশ করেছে সেটি একটি টেকনিক্যাল বিষয়। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া কোনো মতামত দেওয়া সম্ভব নয়। জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ দূষণের কারণে মিঠাপানির দেশি মাছ শিং, মাগুর, কৈ, টেংরা পুঁটির উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। অনেক দেশি মাছ এখন বিলুপ্তির পথে। মিঠাপানির এসব মাছ চাষে মৎস্য চাষিদের আগ্রহী করতে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশের মিঠাপানিতে ২৬০ প্রজাতির মাছ ও ২৪ প্রজাতির চিংড়ি রয়েছে। মানুষের সৃষ্টি ও প্রাকৃতিক কারণে মিঠাপানির ১২ প্রজাতির মাছ ‘চরম বিপন্ন’। ৫৪ প্রজাতির মাছ ‘প্রায় বিলুপ্ত’। ২৮ প্রজাতির মাছ ‘বিপন্ন’ এবং ১৪ প্রজাতির মাছ ‘সংকটাপন্ন’ অবস্থায় আছে। সরকারি সূত্রগুলো বলছে, দেশীয় প্রজাতির কৈ, শিং, পাবদা, ভেদা, সরপুঁটি ও বাইমসহ শতাধিক প্রজাতির মিঠাপানির মাছের উৎপাদন বাড়াতে উন্মুক্ত জলাশয়ে পোনা অবমুক্ত করাসহ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় নানা ধরনের পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগের পাশাপাশি মৎস্য চাষিদের সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে দেশি মাছ চাষে উৎসাহ দেওয়ার বিষয়েও পদক্ষেপ গ্রহণে গত বছর ১৮ আগস্ট কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি পাঠায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। ওই চিঠির জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষি ঋণ বিভাগের জিএম মনোজ কান্তি বৈরাগী দেশি মাছ চাষে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রতিনিধিদের মতামত তুলে ধরেন চিঠিতে। ব্যাংকের প্রতিনিধিরা যা বলেছিল তা হচ্ছে— হাইব্রিড ও উন্নত জাতের মাছের প্রসারের ফলে দেশি জাতের মাছ চাষের নিশ্চয়তা বিধান করা কষ্টকর। বিদেশি জাতের মাছ চাষে অল্প সময়ে অধিক উৎপাদন পাওয়া যায়, লাভের পরিমাণও বেশি এবং দেশি ও বিদেশি জাতের মাছ চাষে দুই রকম সুদ হার বিদ্যমান থাকলে এ খাতে ঋণ প্রদানে বিড়ম্বনা দেখা দিতে পারে। এ অবস্থায় জটিলতা নিরসনে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংক ও সরকারের বিশেষায়িত ব্যাংকের মাধ্যমে ভর্তুকি সুদে মৎস্য চাষিদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার বিষয়ে মতামত দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

সর্বশেষ খবর