শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
খনন হচ্ছে ভৈরব নদ

নৌ-যোগাযোগে পাল্টে যাবে চিত্র

সাইফুল ইসলাম, যশোর

নৌ-যোগাযোগে পাল্টে যাবে চিত্র

যশোর শহরের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত ভৈরব নদ। দড়াটানা এলাকা থেকে তোলা ছবি —বাংলাদেশ প্রতিদিন

২০১০ সালের ২৭ ডিসেম্বর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উদ্বোধন করতে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দীর্ঘতম নদ ভৈরব খনন করে নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা হবে। তার এই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে গত বছর ১৬ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ-একনেকে ‘ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন’ প্রকল্পের জন্য ২৭২ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, ৫ বছরের এ প্রকল্পে ভৈরব নদের তাহেরপুর থেকে আফ্রা ঘাট পর্যন্ত ৯২ কিলোমিটার ও বুড়ি ভৈরব নদের সঙ্গে মাথাভাঙ্গা নদী সংযোগ স্থাপনের জন্য  ৩৩ কিলোমিটার খনন করা হবে। আফ্রা ঘাট থেকে বসুন্দিয়া পর্যন্ত নদের ৪ কিলোমিটার ড্রেজিং করা হবে। এ ছাড়া দাইতলা খালের ২০ কিলোমিটার ও আরও চারটি সংযোগ খালের সাড়ে চার কিলোমিটার পুনঃখনন করা হবে। আর যশোর শহর এলাকার ভৈরব নদের দুই তীরে হেরিং বোন রাস্তা নির্মাণ করা হবে। যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, ‘প্রকল্পের আওতায় চলতি অর্থবছরেই ভৈরব নদের যশোর শহর অংশের ১০ কিলোমিটার খনন কাজ শুরু করা হবে। ইতিমধ্যে ৬ কিলোমিটার খননের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগামী ১০ এপ্রিল দরপত্র গ্রহণ করা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আসছে মে মাসেই খনন কাজ শুরু করতে পারব। জুন পর্যন্ত কাজ চলবে। এরপর বর্ষা মৌসুমে বিরতি দিয়ে ডিসেম্বর থেকে আবার খনন শুরু হবে। আর শহর অংশের বাকি চার কিলোমিটার আলাদা দরপপত্র আহ্বান করে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে খনন করা হবে’। তবে ভৈরবের যশোর শহর অংশ খনন করতে গিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন। কারণ এই অংশের অনেকটাই বেদখল হয়ে আছে। কোনো কোনো জায়গায় তৈরি করা হয়েছে বহুতল ভবন। নদের জায়গা থেকে তাদের উচ্ছেদ করতে গেলে তারা আদালতের কাগজপত্র দেখান। যে কারণে এর আগে প্রশাসন কয়েক দফা নদের জায়গা উদ্ধার করতে গেলেও তা সফল হয়নি। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, ভৈরবের এ প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত একটি প্রকল্প। এ প্রকল্প সফল করতে সবাই খুব আন্তরিক থাকবে। তিনি বলেন, দখলদার উচ্ছেদে আইনি কোনো বিষয় সামনে এলে সেক্ষেত্রে আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে আইনি পথেই তার সমাধান করা হবে। পুরো প্রক্রিয়ায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক, সুধীসমাজ ও ভৈরব নদ সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত সংগঠনগুলোর নেতাদের সম্পৃক্ত করা হবে। তিনি বলেন, পরিবেশ আন্দোলন বেলা’র একটি রিটের (রিট নম্বর ৩৫০৩/২০০৯) হাই কোর্ট ডিভিশন রায় দিয়েছিল যে, নদী বলতে সিএস ম্যাপে যে স্থানে নদী প্রদর্শন করা হয়েছে, সেই স্থান নদী বলে গণ্য করতে হবে। এ রায়ের আলোকেই আমরা ভৈরবের জায়গা উদ্ধারের চেষ্টা করব। ইতিমধ্যে সিএস ম্যাপ চেয়ে পাউবোর পক্ষ থেকে নদী রক্ষা কমিশনের কাছে আবেদন করা হয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত এই প্রকল্প সফল না হওয়ার কোনো কারণ নেই বলে মন্তব্য করেছেন ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবীর জাহিদ। তবে তিনি বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আরও দুটি বড় প্রকল্প কপোতাক্ষ নদ ও ভবদহ দীর্ঘসূত্রতার কবলে পড়েছে।

ভৈরব নদ খননের এই প্রকল্প বাস্তবায়নেও পাউবো দীর্ঘসূত্রতার পথে হাঁটছে বলে তিনি মনে করেন। জাহিদ বলেন, এ প্রকল্প সফল হবে কিনা, তা নির্ভর করবে সরকার এ প্রকল্প সফলের ব্যাপারে আসলেই আন্তরিক কি না। তিনি বলেন, হাতিরঝিল, বিজিএমইএর জায়গা যদি উদ্ধার হয়, ভৈরবের জায়গা কেন উদ্ধার হবে না। তিনি বলেন, নদীর সম্পত্তি উদ্ধারের ব্যাপারে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দরকার। এ ব্যাপারে আইন পাস করতে হবে। তারপরও যদি নদীর জায়গায় ব্যক্তি সম্পত্তি পড়ে যায় তা খাস করার ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, ভৈরব খননের পুরো প্রক্রিয়া তদারকির জন্য প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও ভৈরব সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের নিয়ে ক্ষমতাসম্পন্ন তদারকি কমিটি করতে হবে। আর দখলদার উচ্ছেদে আইনি বিষয় মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনে বেলা’র মতো সংগঠনগুলোর সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে। তিনি জানান, প্রয়োজনে ভৈরব সংস্কার আন্দোলন কমিটিও এ ব্যাপারে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।

সর্বশেষ খবর