শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
ট্রলার ও নৌকাডুবি

নদী থেকে ৯ লাশ উদ্ধার

প্রতিদিন ডেস্ক

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মেঘনা, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে পানগুছি এবং মুন্সীগঞ্জের ধলেশ্বরী নদীতে ট্রলার ও নৌকাডুবির ঘটনায় গতকাল ৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। আগে উদ্ধার করাদের নিয়ে মোট লাশের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মেঘনায় ৯, পানগুছিতে ১৭ এবং ধলেশ্বরীতে ১ জন। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর—

সোনারগাঁ : নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার চর কিশোরগঞ্জে মেঘনায় গত বৃহস্পতিবার বিকালে যাত্রীবাহী ট্রলারডুবির ঘটনায় আরও পাঁচ নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে নয়জন। গতকাল বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস ও অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ডুবুরি দল মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ওইসব লাশ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থলে যাওয়া সোনারগাঁ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘পাঁচ নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ডুবে যাওয়া ট্রলারটির সন্ধান পাওয়া গেছে। ট্রলারে আরও লাশ আছে কিনা, তা দেখতে ডুবুরিরা তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছেন।’ গতকাল যাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে তারা হলেন ঢাকার রামপুরা এলাকার শফিক মিয়ার মেয়ে রুবিনা আক্তার (৩০), তার মা শাফিয়া আক্তার (৪৬), সাইদুর রহমানের স্ত্রী রানু আক্তার (৩২), সান্তা আক্তার (৩২) ও জয়বুন নেছা (৬৫)। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকালে ৩০ থেকে ৪০ জন যাত্রী নিয়ে রাজধানীর রামপুরা থেকে একটি ইঞ্জিন চালিত ট্রলার মতলবের বেলতলি সোলেমান শাহ ওরফে লেংটার মেলায় যাচ্ছিল। বিকাল ৪টার দিকে সোনারগাঁয়ের চর কিশোরগঞ্জ এলাকাতে মেঘনার ঢেউয়ে ট্রলারটি ডুবে যায়। পরে বিকাল থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস ও বিআইডব্লিউটিএর ডুবুরি দল নদীতে তল্লাশি চালিয়ে এক শিশু, দুই নারীসহ ৪ জনের লাশ উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত এই ৪ জন হলেন— ঢাকার রামপুরা এলাকার আবদুস সাত্তার (৪০), তার মেয়ে লামিয়া (৫), জোহরা বেগম (৬০), কাঞ্চন বেগম (৬৫)। নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান প্রদান করা হয়েছে। শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার ধানকাঠি ইউনিয়নের চর মালগাঁও  গ্রামের বাসিন্দা আবদুস সাত্তার হাওলাদার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঢাকার মিরপুরে থাকতেন। বৃহস্পতিবার চাঁদপুরের মতলব উপজেলার বেলতলায় একটি ওরসে  যোগ দিতে স্ত্রী ও কন্যা নিয়ে ঢাকা থেকে একটি ট্রলারযোগে রওনা হন। বিকালে মেঘনা নদীতে ট্রলারটি ডুবে যায়। ট্রলারে থাকা আবদুস সাত্তার তার স্ত্রী শিল্পী আক্তার ও মেয়ে রামপুরা একরামুন্নেছা স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী লামিয়া মৃত্যুবরণ করেন। বৃহস্পতিবার রাতেই সাত্তার ও লামিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। গতকাল সকালে শিল্পী আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। দুপুরে ধানকাঠি ইউপির চর মালগাঁও হাওলাদার কান্দি গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দুজনের লাশ দাফন করা হয়েছে। শিল্পী আক্তারের লাশ এখনো গ্রামে আনা হয়নি। তাকেও স্বামী ও কন্যার কবরের পাশে দাফন করা হবে।

বাগেরহাট ও মোরেলগঞ্জ : বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের পানগুছি নদীতে যাত্রীবাহী ট্রলারডুবির ঘটনায় চতুর্থ দিনে আরও তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে ট্রলারডুবির ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৭টি লাশ উদ্ধার করা হলো। সরকারি হিসাবে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন দুজন। উদ্ধারকৃত লাশের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন মোরেলগঞ্জের চিংড়াখালী গ্রামের বশির উদ্দিন শেখের স্ত্রী লাবণী আক্তার (১৮), শরণখোলা উপজেলার খেজুয়াকান্দা গ্রামের পুলিল কনস্টেবল জাহিদুর রহমানের স্ত্রী নাছিমা বেগম (৩২) ও পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার বালুপাড়া গ্রামের খলিলুর রহমানের স্ত্রী নাসরীন বেগম (২৮)। গতকাল সকালে পানগুছি নদীর বারইখালী এলাকার চর থেকে নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল লাশ তিনটি উদ্ধার করে। উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার বেলা ১১টায় খেয়া পারাপারের সময় ৮০-র অধিক যাত্রী নিয়ে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারটি মোরেলগঞ্জের পানগুছি নদীতে ডুবে যায়। ওই সময় স্থানীয়রা নদী থেকে অন্তত ৩০ জনকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করেন। ট্রলারটি যাত্রী নিয়ে ছোলমবাড়িয়া খেয়াঘাট থেকে পুরাতন থানাঘাটের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। পুলিশ, দমকল বিভাগ, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড সদস্যরা স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে নদীতে উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে ট্রলারডুবিতে নিহতদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বজনদের সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছেন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ। গতকাল তিনি নিশানবাড়িয়ার ভাষান্দল গ্রামের শাহালম হাওলাদারের বাড়িতে যান। ট্রলার দুর্ঘটনায় শাহালমের স্ত্রী সালমা বেগম ও দুই বছর বয়সী শিশুপুত্র সাজ্জাদ নিহত হয়েছেন।

মুন্সীগঞ্জ : ধলেশ্বরী নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় জাবেদ হোসেন বাবু (৩০) নামে একজনের লাশ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। এ ঘটনায় সাকিল হোসেন (৪০) নামের একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।  গতকাল দুপুর ১টায় সদর উপজেলার মিরকাদিম লঞ্চঘাট এলাকার ধলেশ্বরী নদীতে এসে বাতাসের কবলে পড়ে নৌকাটি ডুবে যায়। পরে মুন্সীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল এক ঘণ্টা নদীতে তল্লাশি চালিয়ে গুরুতর অবস্থায় সাকিল হোসেন ও পরে মো. জামাল হোসেন বাবুর মরদেহ উদ্ধার করে। নিহত জাবেদ হোসেন বাবু ঢাকার রায়েরবাগ এলাকার বাসিন্দা বলে জানা গেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর