শিরোনাম
রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
এইচএসসি পরীক্ষা শুরু আজ

চলছেই প্রশ্নফাঁসের প্রচারণা

আকতারুজ্জামান

প্রশ্নফাঁসের প্রচারণার মধ্যেই আজ শুরু হচ্ছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, কারিগরি ও মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে সারা দেশ থেকে ১১ লাখ ৮৩ হাজার ৬৮৬ জন ছাত্রছাত্রী এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। জানা গেছে, কেন্দ্রীয় এ পরীক্ষাকে সামনে রেখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসের আশ্বাস দিয়ে  শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে একটি চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। পরীক্ষার আগে প্রশ্ন পেতে অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকই ছুটছেন এসব চক্রের পেছনে। যদিও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সংবাদ সম্মেলন করে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনারা প্রশ্নফাঁসের পেছনে ছুটবেন না’। তবে অভিভাবক ও শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশ্নফাঁসের উৎস বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য কোনো উপদেশবাণী কাজে আসবে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা গেছে, বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, গ্রুপ, পেজ থেকে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে প্রশ্নফাঁসের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ ফেসবুকে ঘোষণা দিয়েছে, শতভাগ প্রশ্ন কমন আসার পরই টাকা নেওয়া হবে। কেউ কেউ প্রশ্ন নিতে আগ্রহীদের একটি ক্লোজড গ্রুপে অ্যাড হওয়ার কথা বলছেন। ‘আর জে কিবরিয়া’ নামের এক প্রশ্নফাঁস জালিয়াত চক্রের সদস্য সব বোর্ডের প্রশ্ন পরীক্ষার আগেই দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে গত মাসে কয়েকটি পোস্ট দিয়েছেন। প্রশ্ন নিতে আগ্রহীরা মন্তব্য করে অথবা বার্তা পাঠিয়ে গ্রুপের সদস্য হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। ‘জয় রহমান’ নামের আরেক আইডি থেকে প্রশ্নফাঁসের আশ্বাস দিয়ে বলা হয়েছে, আগ্রহীদের হোয়াটসঅ্যাপে পরীক্ষার আগে প্রশ্ন দেওয়া হবে। প্রশ্ন কমনের পরই টাকা নেওয়া হবে বলেও জানান এই জালিয়াত চক্রের সদস্য। জয় ৭১ নামের ফেসবুক ক্লোজড গ্রুপে কেউ কেউ প্রশ্নফাঁসের আশ্বাস দিয়ে পোস্ট দিয়েছেন। এ গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ২ হাজার ২৫৭ জন। মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে একের পর এক ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে প্রশ্নফাঁসের ‘অপপ্রচার’ চালালেও তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট, গ্রুপ, পেজ বন্ধ করা হচ্ছে না। মাঝে-মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব চক্রের কোনো কোনো সদস্যকে গ্রেফতার করলেও তাদের অপতত্পরতা বন্ধ করা যাচ্ছে না। মূল হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরেই। এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হয়। বেশির ভাগ পরীক্ষাতেই অভিযোগ ছিল প্রশ্নপত্র ফাঁসের। ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত বাংলা দ্বিতীয়পত্রের (এসএসসি) পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রশ্নপত্র পাওয়া যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনে ৬ ফেব্রুয়ারি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে ১২ ফেব্রুয়ারি গণিত বিষয়ের প্রশ্নপত্র পরীক্ষার আগেই হোয়াটসঅ্যাপসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে বলে অভিযোগ ওঠে। বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ অন্যসব গণমাধ্যমও এ নিয়ে প্রতিবেদন করে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় বলে অভিযোগ ওঠে।

ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের দুই সদস্য গ্রেফতার : রাজধানীর রমনা এলাকা থেকে ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারা হলেন-শহিদুল ইসলাম ও গোলাম সরোয়ার সাজিদ। শুক্রবার রাতের অভিযানে তাদের কাছ থেকে মোবাইল হ্যান্ডসেট ও সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়। ডিবির ডিসি (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম জানান, ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের দুই সদস্যকে মগবাজারের নয়াটোলা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা বিভিন্ন নামে ফেসবুকের ফেইক আইডি, ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ, হোয়াটস আ্যাাপের মাধ্যমে কলেজ শিক্ষকদের কাছ থেকে ভুয়া প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। গ্রেফতার হওয়া গোলাম সরোয়ার সাজিদ ম্যাসেঞ্জারে হ্যালো ব্রাদার্স গ্রুপের অ্যাডমিন হিসেবে বিভিন্ন মাধ্যমে শতভাগ প্রশ্ন কমন জানিয়ে স্ট্যাটাস দিত।

এছাড়া তারা একেক পরীক্ষার জন্য একেক ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ খুলে ভুয়া প্রশ্ন শেয়ার করত। গ্রেফতারকৃতদের অন্য সহযোগীদের নামও পাওয়া গেছে। তাদের ধরতে অভিযান চলছে।

সর্বশেষ খবর