রবিবার, ২ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

আতিয়া মহল থেকে উদ্ধার হওয়াদের দুঃসহ দিনযাপন

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে ঘুম ভেঙেছিল আতিয়া মহলের বাসিন্দাদের। বাইরের যুদ্ধ যুদ্ধ পরিস্থিতি দেখে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠেছিল সবার। পুলিশের আহ্বানে নিজ নিজ     ঘরে দরজা-জানালা বন্ধ করে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন তারা। পরদিন, সেনা কমান্ডোদের দুঃসাহসিক অভিযানে মুক্তির নিঃশ্বাস ছাড়েন আতিয়া মহলের ৭৮ নিরীহ বাসিন্দা। কিন্তু এক কাপড়েই ঘর থেকে জীবন নিয়ে একরকম পালিয়ে বাঁচতে হয়েছিল তাদের। এরপর এখানে-সেখানে কোনোরকমে দিনযাপন করছেন বাসিন্দারা। আতিয়া মহল এখনো পুলিশের জিম্মায় থাকায় সেখানে গিয়ে উঠতে পারছেন না ২৮টি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা।

আতিয়া মহলের চারতলার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম। জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময় স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে বাসার ভিতর আটকা পড়েন তিনি। সেনা কমান্ডোরা উদ্ধার করে নিয়ে আসেন তাদের। এক কাপড় গায়ে দিয়ে বের হন সবাই। বাসা থেকে নিয়ে আসতে পারেননি জরুরি কাগজপত্র, টাকাপয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র। আতিয়া মহল থেকে উদ্ধার হওয়ার পর প্রথমে একটি হোটেলে রাতযাপন করেন তিনি। পরে উঠেছেন এক সহকর্মীর বাসায়। বইপত্র ও কাপড়চোপড় আতিয়া মহলের ভিতরে রয়ে যাওয়ায় স্কুলে যেতে পারছে না তার দুই মেয়ে। রবিউলের স্ত্রী নিপা বেগম বলেন, ‘নতুন করে জীবন পেয়েছি। পুলিশ ও সেনা সদস্যদের ধন্যবাদ। আমার পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে তান্নি ও ৪র্থ শ্রেণি পড়ুয়া মেয়ে তারিন স্কুলে যেতে পারছে না। তাদের বইপত্র সব আতিয়া মহলে রয়ে গেছে। সামনে পরীক্ষা, স্কুলে যেতে না পেরে কান্নাকাটি করে তারা। আর সঙ্গে কিছু আনতে না পারায় একপ্রকার মানবেতর জীবনযাপন করছি আমরা।’ আতিয়া মহলে অভিযানের দিন থেকেই বন্ধ রয়েছে পার্শ্বস্থ জহির তাহির মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়। সামনে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা। কিন্তু বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া সামিউল আলম ও ষষ্ঠ শ্রেণি পড়ুয়া আবুল কালাম বলে, ‘সামনে আমাদের পরীক্ষা। কিন্তু আমরা স্কুলে যেতে পারছি না। পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়ছি।’ এদিকে, শিববাড়ি এলাকায় যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে স্থানীয়দের মাঝে। খুলতে শুরু করেছে এলাকার দোকানপাট। তবে আতিয়া মহলের ভিতরে এখনো দুই জঙ্গির লাশ ও বিস্ফোরক থাকায় আতঙ্কিত তারা। স্থানীয় ব্যবসায়ী বদরুল হোসেন বলেন, ‘আমাদের মাঝে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে। তবে আতিয়ার ভিতরে দুই জঙ্গির লাশ পচে দুর্গন্ধ ছড়ানোয় এবং ভিতরে বিস্ফোরক থাকায় এখনো আমাদের মাঝে আতঙ্ক রয়েছে।’

বেওয়ারিশ হিসেবেই দাফন হলো মর্জিনা কাওসারের লাশ : সিলেটে আতিয়া মহলে নিহত দুই জঙ্গির লাশ গতকাল দাফন করা হয়েছে। বিকাল ৩টার দিকে বেওয়ারিশ হিসেবে নগরীর হযরত মানিকপীর (রহ.) এর কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়। এ লাশ দাফন করেন মাওলানা শেখ মোহাম্মদ আহসান কবির।

 তিনি জানান, ‘পুলিশ দুটি লাশ দাফনের জন্য আমাদের কাছে  হস্তান্তর করে। তারা জানিয়েছে, লাশগুলো দক্ষিণ সুরমার ‘আতিয়া মহলে’ নিহত ২ জঙ্গির। তাদের একজন পুরুষ ও একজন নারী। আমরা লাশগুলো দাফন করেছি।’ নিহত এই জঙ্গিদের একজন মরজিনা বেগম ও অপরজন তার স্বামী কাওসার বলে ধারণা করছে পুলিশ। এই পরিচয়ে তারা সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ী পাঠানপাড়ার আতিয়া মহলে বাসা ভাড়া নিয়েছিল।

সর্বশেষ খবর