সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রতিবন্ধীদের মেধা বিকাশে সুযোগ দিন

অটিজম সচেতনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতিবন্ধীদের মেধা বিকাশে সুযোগ দিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিবন্ধিতার কারণে কোনো শিশুকে শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে রাখা যাবে না। অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সব শিশু সাধারণ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবে। এদের সুপ্ত মেধা বিকাশের সুযোগ আমাদের করে দিতে হবে। সেভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ ধরনের সব শিশু নিজ পরিবার থেকে বাড়ির নিকটবর্তী বিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবে। অন্যদিকে সাধারণ শিশুরা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের সঙ্গে মিশে মানুষের ভিন্নতা সম্পর্কে জানবে এবং ভিন্নতাকে মেনে নেওয়ার শিক্ষা পাবে। গতকাল দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘দশম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস ২০১৭’ উপলক্ষে সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ সব কথা বলেন তিনি। সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ডা. মো. মোজাম্মেল হোসেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জিল্লার রহমান প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে অটিজম অতিক্রমে সফল ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থাকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে নীলবাতি প্রজ্বলন করেন। ২০০৮ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী ২ এপ্রিল দিবসটি পালিত হচ্ছে। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে—‘স্বকীয়তা ও আত্মপ্রত্যয়ের পথে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন. প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে তাদের উপযোগী কর্মক্ষেত্র চিহ্নিত করার কাজ করছে সরকার। এ ছাড়াও বিসিএসসহ সব শ্রেণির সরকারি চাকরিতে অটিজমসহ সব প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য কোটা সংরক্ষিত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী অটিজমসহ সব ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগের জন্য সব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সকলের সমন্বিত উদ্যোগ ও উপযোগী পরিবেশ পেলে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিরা স্বাবলম্বী হয়ে গড়ে ওঠে আমাদের জন্য অপার সম্ভাবনা বয়ে আনবে। আসুন আমরা অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়াই। তারা আমাদেরই আপনজন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিরাও বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে কম্পিউটার, ইন্টারনেটেও অন্য সবার মতোই সমান পারদর্শিতার সঙ্গে কাজ করতে সক্ষম। প্রতিবন্ধীবান্ধব সফটওয়্যার, অডিও-ভিডিও শিক্ষা উপকরণ, অবকাঠামো, প্রযুক্তি উদ্ভাবনসহ তথ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। অটিস্টিক শিশুদের বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশের সুবিধার্থে ক্রমান্বয়ে সব বিদ্যালয়ে র‌্যাম্প নির্মাণ করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যারাই যে প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন না কেন; সেখানে আমাদের প্রতিবন্ধীদের ব্যবহারের জন্য বিশেষ র‌্যাম্প ও টয়লেটের ব্যবস্থা যেন অবশ্যই থাকে। এটা গুরুত্বের সঙ্গে করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশে অটিজম সম্পর্কে মানুষের তেমন কোনো ধারণা ছিল না। আমার কন্যা সায়মা ওয়াজেদের নিরলস প্রচেষ্টায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অটিজমের গুরুত্ব ও সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সে এখন বাংলাদেশে অটিজমবিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন। তার উদ্যোগে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ‘অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু ও তাদের পরিবারের জন্য স্বাস্থ্যসেবা এবং আর্থ-সামাজিক সহায়তা বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রস্তাব গৃহীত হয়। তিনি বলেন, আমরা ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর সায়মা ওয়াজেদের পরামর্শে অটিজম বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি ও তাদের কল্যাণে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করে বাস্তবায়ন শুরু করি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের কথা বিবেচনায় নিয়ে এই আইনের আওতায় একটি নিউরো-ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট গঠন করেছি। ট্রাস্টের কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে আমরা ৪১ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছি এবং আমি চাই সমাজের বিত্তবানরা এখানে সহায়তা করবেন। অটিজম প্রকৃতির বিচিত্র খেয়াল হলেও অটিজম বৈশিষ্ট্যের অধিকারী অনেকেই অত্যন্ত মেধাবী হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের রয়েছে অনন্য প্রতিভা। আপনাদের প্রতিভাকে বিকশিত করাই আমাদের লক্ষ্য। বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন, ডারউইন, নিউটন জীবনের একটা সময় অটিজমের মধ্য দিয়ে কাটিয়েছেন। সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী উইলিয়াম বাটলার ইয়টস্, ড্যানিস কবি হ্যানস্ এন্ডারসন, সুরস্রষ্টা বিথোভেন, মোজার্ট প্রতিবন্ধী ছিলেন। বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিংস্ আজীবন প্রতিবন্ধী থেকেও তার আবিষ্কার থেমে থাকেনি। প্রতিবন্ধীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা প্যারা অলিম্পিক ও স্পেশাল অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। তাই আমরা অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ও প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদদের জন্য ঢাকার অদূরে সাভারে ১২ একর জমিতে ৩১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘জাতীয় প্রতিবন্ধী ক্রীড়া কমপ্লেক্স’ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি।’ অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্ব শেষে অটিজম বৈশিষ্ট্যের অধিকারী শিল্পীদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর