সোমবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

ঝুঁকিতে হাতির আবাসস্থল

মোস্তফা কাজল

ঝুঁকিতে হাতির আবাসস্থল

ঝুঁকির মুখে বাংলাদেশে হাতির আবাসস্থল। স্থায়ীভাবে বসবাস করা হাতির সংখ্যা ২৬৮। এর মধ্যে পুরুষ প্রজাতির ৬৭ এবং স্ত্রী ১৭২টি। বাকি ২৯টি বাচ্চা। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের (আইইউসিএন) নামের এ সংস্থাটি এক বছর মেয়াদি ২০১৬ সালে জরিপ কার্যক্রম চালায়। এ জরিপে আরও উঠে এসেছে সীমান্ত  পেরিয়ে বাংলাদেশে কত হাতি ঢোকে। তারও একটি হিসাব তৈরি করেছে আইইউসিএন। এতে দেখা গেছে, ভারত ও মিয়ানমার  থেকে বছরে গড়ে ৯৩টি হাতি এপার-ওপার আসা-যাওয়া করে। পাশাপাশি বাংলাদেশে ব্যক্তি মালিকানায় হাতি আছে ৯৬টি।  সেগুলো সার্কাস, বিয়ের অনুষ্ঠান ও পাহাড়ি এলাকায় ভারী কাঠ আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত হয়। আজ বন বিভাগ জরিপের তথ্যাদি মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে পারে। এসব তথ্য বন্য প্রাণী ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আইইউসিএনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২০০৩ সালে আরও একবার হাতি জরিপ হয়েছিল। তখন এত ব্যাপকভাবে হয়নি। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি হাতির সংখ্যা কমে যেতে। তাদের খাবারের উৎসগুলো দিন দিন কমে যাচ্ছে। এখন জরুরিভাবে দরকার তাদের আবাসস্থল রক্ষা করা। হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব নিরসনে বাংলাদেশ ও ভারতকে যৌথভাবে কাজ করতে হবে। হাতির নিরাপদ চলাচল ও বাসস্থান নিশ্চিত করার তাগিদ দেন ইশতিয়াক উদ্দিন আহমেদ। জরিপের সঙ্গে সম্পৃক্ত আইইউসিএনের গবেষকরা বলছেন, ১০০ বছর আগে এ দেশে ৫০০-এর বেশি হাতি ছিল। সেটি কমতে কমতে এখন ৩০০-এর নিচে নেমেছে। হাতির সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রধান কারণ শিল্পায়ন। বন উজাড় করে নির্মাণ করা হচ্ছে শিল্প-কারখানা, রাস্তাঘাট ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র। গবেষকরা বলছেন, বিশ্বে দুই প্রজাতির হাতি আছে। একটি এশীয়। অন্যটি আফ্রিকান। বাংলাদেশে আছে শুধু এশীয় প্রজাতির হাতি। জরিপ করতে গিয়ে তিন ধরনের হাতি পাওয়া গেছে। একটি হলো স্থায়ীভাবে বসবাস করা হাতি। যাদের  দেখা মেলে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলে। আরেক ধরনের হাতি সীমান্ত দিয়ে আসা-যাওয়া করে। এ ধরনের হাতি মূলত কুড়িগ্রাম, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জ জেলা দিয়ে আসা-যাওয়া করে থাকে। আরেক শ্রেণির হাতি আছে ব্যক্তি মালিকানায়। জরিপে দেখা গেছে, এ রকম ৯৬টি হাতির মধ্যে ৮০টি ব্যবহৃত হয় সার্কাস, বিয়ের অনুষ্ঠানে ও ভারী কাঠ আনা-নেওয়াতে। বাকি ১৬টি আছে সাফারি পার্ক ও চিড়িয়াখানায়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) ইউনূস আলী বলেন, ব্যক্তিগতভাবে হাতি পালনের সুযোগ আছে। তবে বাচ্চা হলে বন বিভাগকে জানাতে হয়। এ ছাড়া বিক্রি করতে চাইলেও বন বিভাগের অনুমতি লাগে। অনেক স্থানে দেখা যায়, হাতির অপব্যবহার হচ্ছে। সঠিকভাবে খাবার দেওয়া হচ্ছে না। জরিপে ৫৭টি আন্তর্দেশীয় হাতি চলাচলের ক্রসিং চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে এখন চালু আছে ৩৯টি। এ ছাড়া এক আবাসস্থল থেকে আরেক আবাসস্থলে যাওয়ার করিডর আছে ১২টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো উখিয়া-ঘুনধুম, নাইক্ষ্যংছড়ি-রাজারকুল, চুনতি-সাতগাঁ। জরিপে তথ্য নেওয়া হয়েছে ৯টি বনাঞ্চল থেকে। আর পালিত হাতির তথ্য  নেওয়া হয়েছে বন বিভাগ থেকে। জরিপে আন্তর্দেশীয় হাতি বিষয়ে বলা হয়েছে, ভারতের মেঘালয় রাজ্যে কাঁটাতারের বেড়া স্থানে স্থানে কেটে রাখা হয়েছে। যাতে এসব স্থান দিয়ে হাতি চলাচল করতে পারে। মেঘালয় থেকে হাতি ঢুকে বাংলাদেশের মানুষের জীবন ও সম্পদহানি ঘটায়। সম্প্রতি শেরপুরের ঝিনাইগাতিতে  মেঘালয় থেকে আসা হাতির আক্রমণে বেশ কয়েকজন মারা যায়। আইইউসিএন বলছে, মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সহযোগিতা জরুরি। জানতে চাইলে সাবেক সিসিএফ ইউনুস আলী আরও বলেন, হাতির কোনো দেশ নেই। এরা সবার। হাতি সভ্যতার প্রতীক। তবে হাতি ঢুকে পড়ার এ সমস্যা বাংলাদেশের একার নয়। প্রতিবেশী দেশ ভারতেরও।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর