সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
এবারও হলো না চুক্তি

হতাশ তিস্তাপারের লাখো মানুষ

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

এবারও ভারতের সঙ্গে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি না হওয়ায় হতাশ তিস্তাপারের লাখো মানুষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে তিস্তাপারের মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিলেন। চলছিল আলোচনা—এবার হয়তো চুক্তি হবে, হারানো যৌবন ফিরে পাবে তিস্তা, মুক্তি মিলবে তিস্তাপারের কয়েক লাখ মানুষের।

তিস্তাপারের মানুষ ভেবেছিল, ২০১১ সালের মতো এবার আর মমতা দিদি তাদের নিরাশ করবেন না। কিন্তু আশা পূরণ না হওয়ায় ক্ষোভ ঝরেছে তাদের কণ্ঠে। তিস্তাপারের বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের ৪৬ বছর পার হলো। এই দীর্ঘ সময়ে ভারত শুধু আমাদের আশ্বাসই দিয়ে গেল। কিন্তু আমরা পেলাম না তিস্তার পানি। খরস্রোতা এই তিস্তা এখন মরুভূমির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। পথে বসেছে তিস্তার সুবিধাভোগী লাখো মানুষ।’ সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, তিস্তার বুকজুড়ে জলের সেই খরস্রোত আর নেই। হিমালয়ের তুষার গলা পানি আর বৃষ্টিধারায় তিস্তার পানি যতই বেড়ে উঠুক, এখন তা ভারতের হাতে ‘বন্দী’। তিস্তার বুকজুড়ে জেগে উঠেছে বিস্তীর্ণ চর। উজানে ভারত ব্যারাজ নির্মাণ করে তিস্তার প্রাকৃতিক প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করছে। চলতি বোরো আবাদের মৌসুমে নদীতে পানির অভাবে দেশের বৃহত্তম তিস্তা সেচ প্রকল্প প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। তিস্তায় পানি না থাকায় এ অঞ্চলের ধরলা, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী, আখিরা, দুধকুমার, বুড়ি তিস্তাসহ প্রায় ৩৩টি ছোট-বড় নদ-নদী ও শাখা খাল ভরাট হয়ে গেছে। তিস্তাচরের বাসিন্দা আজিজার রহমান জানান, আগে তারা তিস্তার চরে গম, ভুট্টা, কাউন, চিনাবাদাম, আলুসহ রকমারি ফসল ফলাতেন। নদীর পানিতে সেচসুবিধা থাকায় উৎপাদন খরচ কম পড়ত। কিন্তু কয়েক বছর ধরে তিস্তা শুকিয়ে যাওয়ায় চাষাবাদ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন তারা। পানির অভাবে নদীর ভাটিতে তিস্তার ছোট-বড় শতাধিক খেয়াঘাট বন্ধসহ নৌ-যোগাযোগের ক্ষেত্রে মারাত্মক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিস্তাচরের মনির, আমিনুল ঘাটিয়াল পেশায় মত্স্যজীবী। নিজেদের ভিটেমাটি নেই। তাদের ভাষায়, তিন মাস ধরে তারা বলতে গেলে বেকার। নদীতে পানি না থাকায় মাছ মিলছে না। তাই তারা এখন পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছেন। কাজের সন্ধানে ছুটছেন দক্ষিণাঞ্চল ও ঢাকা শহরে।

উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিতে আপত্তি জানিয়ে নিজ সফর বাতিল করেছিলেন। এর পরও তিস্তা ও সীমান্ত চুক্তির বিষয়ে একটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছিল সে সময়। দুদেশের মধ্যে ১৯৭৪ সালে সই হওয়া সীমান্ত চুক্তি এবং এর আওতায় ২০১১ সালের প্রটোকল বাস্তবায়নে ভারতীয় পার্লামেন্টে সংবিধান সংশোধন বিল আনার চেষ্টায় সে সময় বাদ সেধেছিলেন মমতা। মমতা ব্যানার্জি ২০১৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সফরে এসে মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। ওই সময়ও তার সফরে তিস্তার পানিবণ্টন, সীমান্তে সন্ত্রাস বন্ধ এবং ছিটমহল বিনিময়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হবে বলে আশা করেছিল সবাই। এ কারণে ওই সময় তার বাংলাদেশ সফর বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছিল তিস্তাপারের মানুষ।

 

সর্বশেষ খবর