বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা
১৭৪ ইউপিতে ভোট রবিবার

কাল মধ্যরাতে শেষ প্রচারণা

মাঠে নামবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা

গোলাম রাব্বানী

দলীয়ভাবে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের সদস্য প্রার্থীরা। দিনভর গ্রাম-গঞ্জ-হাট-বাজারে নির্বাচনী প্রচারণা নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন তারা। আগামীকাল শুক্রবার ১৪ এপ্রিল দিবাগত মধ্যরাত থেকে শেষ হবে সব ধরনের প্রচারণা। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে সব ধরনের সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিংয়ের ওপর। রবিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে টানা ভোটগ্রহণ। এমনকি আজ রাত ১২টার পর থেকে বহিরাগতদের ছাড়তে হবে নির্বাচনী এলাকা। এ ছাড়া প্রচারণার শেষ মুহূর্তে আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ তুলছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি চেয়ারম্যান প্রার্থীরা।

১৭৪ ইউপিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যে লড়াই হবে। দুই দলের প্রতীক নৌকা-ধানের শীষ নিয়ে প্রার্থীরা ভোট যুদ্ধে রয়েছেন। ভোটের দুই দিন আগে শুক্রবার থেকে মাঠে নামবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। চার দিনের জন্য নির্বাচনী এলাকায় থাকবেন তারা। এদিকে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ মুহূর্তে কালো টাকা ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে প্রত্যেক ইউপিতে। বিত্তশালী প্রার্থীরা ভোট কিনতে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ধরনা দিচ্ছেন। নগদ অর্থ ছাড়াও ভোটারদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে শাড়ি, লুঙ্গি, টি-শার্ট, থ্রিপিসসহ বিভিন্ন উপহারসামগ্রী। গতকাল ঢাকা থেকে এ নির্বাচনের ব্যালট পেপার জেলার নির্বাচন অফিসারদের কাছে পাঠানো হয়েছে। শনিবার তা ভোটকেন্দ্রে পাঠানো হবে। তৃণমূলে ভোট নিয়ে শঙ্কাও প্রকাশ করছেন অনেকে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ভোটকেন্দ্রে না যেতে হুমকি-ধমকি দেওয়ারও অভিযোগ উঠছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। ইসি সচিবালয় এসব অভিযোগর বিষয়ে খোঁজখবরও নিচ্ছেন। তবে বর্তমান কমিশন জিরোটলারেন্স নীতিকে সামনে রেখে সুষ্ঠু ভোট আয়োজনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে।  তৃণমূলের ভোট সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশনাররা মাঠপর্যায়ে সফর করেছেন। মাঠের নির্বাচনী কর্মকর্তা ও প্রশাসনের লোকজনদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সুষ্ঠু ভোট আয়োজনের। কমিশনাররা বলছেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে সব নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। এ জন্য সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কমিশন প্রস্তুত রয়েছে। সুষ্ঠু ভোটের আয়োজনে নির্বাচনী মাঠে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েনের পরিকল্পনা নিয়েছে ইসি। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসি নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে পুলিশ-এপিবিএন-ব্যাটালিয়ন আনসারের ১৭৬টি মোবাইল টিম, ৯০ প্লাটুন বিজিবি, ৯০ প্লাটুন র‌্যাব এবং উপকূলীয় এলাকার ইউপিতে ৮ প্লাটুন কোস্ট গার্ড রাখা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে। পরিপত্রে বলা হয়েছে—প্রত্যেক ইউপিতে পুলিশ-এপিবিএন-ব্যাটালিয়ন আনসারের দুটি মোবাইল টিম, বিজিবি এক প্লাটুন, র‌্যাব এক প্লাটুন এবং উপকূলীয় এলাকার ইউপিতে কোস্ট গার্ড এক প্লাটুন রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। মোট চার দিনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঠে থাকছে। আগামী রবিবার ১৬ এপ্রিল ভোটের আগে দুই দিন, ভোটের দিন এবং ভোটের পরের দিন তারা নিয়োজিত থাকবেন। তবে বন্ধ ঘোষিত ভোট কেন্দ্রগুলোতেও পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থাকবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ইসির আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত পরিপত্র স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, মহাপুলিশ পরিদর্শক, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, বিজিবি, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, আনসারের মহাপরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিশনার বরাবরও পাঠানো হয়েছে। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আজ ১৩ এপ্রিল রাত ১২টার পর থেকে বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে হবে। কাল ১৪ এপ্রিল দিবাগত মধ্যরাত থেকে (ভোট শুরুর ৩২ ঘণ্টা আগে) এবং ১৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত (ভোটের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা) সব ধরনের জনসভা, মিছিল, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আজ দিবাগত মধ্যরাত থেকে ১৬ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ রয়েছে।

ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, দলীয় প্রতীকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন করার পরে এবারে তৃণমূলে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভোট করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১৬ এপ্রিল একযোগে ১৭৪ ইউপিতে ভোটগ্রহণ হবে।

ইসি সচিবালয় জানিয়েছে, আগামী ১৬ এপ্রিল সাধারণ নির্বাচন হবে ৫৫টি ইউপিতে, উপনির্বাচন হবে ১০২টি ইউপিতে এবং বন্ধ ঘোষিত, মামলাজনিত বা অন্য কারণে স্থগিত ইউপি, ভোটকেন্দ্রে পুনঃ ভোটগ্রহণ হবে ১৭টি ইউপিতে। সব মিলে আগামী ১৬ এপ্রিল ১৭৪ ইউপিতে ভোটগ্রহণ হবে। এর মধ্যে ২১ জেলার ২৬ উপজেলার সাধারণ নির্বাচন, ৪৯ জেলার ৯০ উপজেলায় উপনির্বাচন ও ১২ জেলার সংশ্লিষ্ট ইউপিতে পুনঃ ভোট রয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্ব নেন। এরপরে কুমিল্লায় প্রথম বড় নির্বাচন করল তারা। এ ছাড়া দুটি উপনির্বাচন, একটি সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকারের ১৮টি নির্বাচন হয়েছে নতুন ইসির অধীনে।

সর্বশেষ খবর