তিন বছরের চাঁদনী যখন বাবা ডাকতে শিখল, তখনই ‘নিখোঁজ’ হন তার পিতা আনসার আলী। তিনি এম ইলিয়াস আলীর ব্যক্তিগত গাড়িচালক ছিলেন। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ইলিয়াস ও তাকে মধ্যরাতে ঢাকার বনানী এলাকা থেকে কে বা কারা উঠিয়ে নিয়ে যায়। এরপর পাঁচ বছরেও তাদের আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। আট বছরের চাঁদনী এখন বাবার দেওয়া খেলনাগুলো কোলে নিয়ে নীরবে সময় কাটায়। মা ও দাদুর কাছে কেবলই জানতে চায়, ফিরবে কবে বাবা? আনসারের গ্রাম বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চি ইউনিয়নের গুমরাগুলে যখন যাওয়া হয় তখন ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফিরেন আনসারের মা নূরজাহান বেগম। সংবাদকর্মীদের দেখে শিশুদের মতো কান্না জুড়ে দেন তিনি। আমার ছেলের কোনো খবর তোমাদের কাছে আছে কি? বলেই কাঁদতে থাকেন। তিনি বলেন, পাঁচ বছরেও ছেলের খোঁজ পেলাম না। আমাদের অচল সংসার। অকালেই নিভে গেল আমার আশার প্রদীপ। মনের ব্যথা ভর করেছে শরীরে। ডায়াবেটিস, শ্বাসকষ্ট ও হার্টের অসুখে ভুগছি। মৃত্যুর আগে ছেলের খোঁজ পেয়ে মরতে চাই। এদিকে স্বামী নিখোঁজের দুর্বিষহ যন্ত্রণা বুকে নিয়ে সংসারের হাল ধরেছেন আনসারের স্ত্রী মুক্তা বেগম। স্থানীয় একাডেমিতে এখন শিক্ষকতা করেন তিনি। ওই একাডেমিতে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে চাঁদনী। তিনি বলেন, চাঁদনী সব সময় তার বাবা সম্পর্কে জানতে চায়। উত্তরে চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কিছুই বলার থাকে না। দেশবাসীর কাছে আমাদের প্রশ্ন— এভাবে আর কত দিন অতিবাহিত করব আমরা?