বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

নরসিংদীর চরাঞ্চলে দুই দল গ্রামবাসীর টেঁটাযুদ্ধ, নিহত ১

নরসিংদী প্রতিনিধি

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নরসিংদীর রায়পুরার চরাঞ্চল বাঁশগাড়ীতে দুই দল গ্রামবাসীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী টেঁটাযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে শারফিন মিয়া (২০) নামের একজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৫ জন। গতকাল দুপুরে জেলার রায়পুরা উপজেলার মেঘনা নদী-বেষ্টিত চরাঞ্চল বাঁশগাড়ীতে এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রায়পুরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকায় থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

 নিহত শারফিন ব্রা?হ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর থানার সলিমগঞ্জ গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাঁশগাড়ী এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হক ও সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সাহেদের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। গেল ইউপি নির্বাচনে বাঁশগাড়ী আওয়ামী লীগের সভাপতি হাফিজুর রহমান সাহেদ পরাজিত হওয়ার পর উভয় পক্ষের দ্বন্দ্ব চরমে ওঠে। ইউপি নির্বাচনে জয়-পরাজয়কে কেন্দ্র করে দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হকের সমর্থকদের তোপের মুখে এলাকাছাড়া হয়ে যায় সাহেদ সমর্থকরা। এ নিয়ে সাহেদ সমর্থকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা চলে আসছিল। দীর্ঘদিন গ্রামছাড়া থাকার পর সম্প্রতি সাহেদ সমর্থকরা গ্রামে ফেরার উদ্যোগ নেয়। এ খবর সিরাজুল হক চেয়ারম্যানের সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তারা শক্তি সঞ্চয় করে শক্ত অবস্থান নেয়। এরই জের ধরে এক সপ্তাহ ধরে দুই পক্ষে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছিল। গতকাল সকাল থেকে হঠাৎ দুই পক্ষের চারটি গ্রামের পাঁচ থেকে সাত হাজার লোকজন টেঁটা-বল্লম ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে চারজন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ২৫ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে এক ইউপি সদস্যসহ আটজনকে উদ্ধার করে প্রথমে রায়পুরা উপজেলা হাসপাতাল এবং পরে নরসিংদী সদর ও জেলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক শারফিন নামে একজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

গুরুতর অবস্থায় চারজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়। সংঘর্ষের সময় উভয় পক্ষ প্রতিপক্ষের বেশ কয়েকটি বাড়িঘরে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। অগ্নিসংযোগ করা হয় কমপক্ষে ১৫টি বাড়িতে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। রায়পুরা থানা পুলিশের পাশাপাশি জেলা সদর থেকে দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করা হয়। সংঘর্ষের পর উভয় পক্ষে উত্তেজনা বিরাজ করছে। গ্রামজুড়ে থমথমে অবস্থা। পরিস্থিতি বিবেচনায় এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ইউপি সদস্য আমির হোসেন মেম্বার বলেন, ‘হঠাৎ ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হকের লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালায়। ভয়ে পালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। তারা আমাদের ভিটেমাটি সবকিছুই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।’ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সংঘর্ষে টেঁটার পাশাপাশি বৃষ্টির মতো গুলি ছোড়া হয়েছে। পালানোর সময় আমার পায়ে একটি গুলি বিদ্ধ হয়।’ এ ব্যাপারে কথা বলতে মোবাইলে যোগাযোগ করেও সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান সাহেদকে পাওয়া যায়নি। অপর পক্ষের নেতা ও বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল হক বলেন, ‘সাহেদ আমাদের সবাইকে মেরে ফেলতেছে। অনেক লোকজন আহত হয়েছে। আমরা জীবন বাঁচানোর চেষ্টা চালাচ্ছি।’ রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) মো. মাজাহারুল ইসলাম বলেন, আধিপত্য বিস্তার ও নির্বাচনী  সহিংসতার জেরেই এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে। ১০ থেকে ১৫টি বাড়িঘরে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফাঁকা গুলি, টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ব্যবহার করা হয়েছে। রায়পুরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। কিন্তু ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে দুই পক্ষই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।

সর্বশেষ খবর